অ্যামাজন এফবিএ (FBA) বা “ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন” অর্থ আয়ের মডার্ন একটা সিস্টেম। দক্ষ হলে আপনি প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবেন। অ্যামাজন এফবিএ থেকে যেভাবে আয় করবেন তার পুরোপুরি জানাতে এ লেখা:
অ্যামাজন এফবিএ (FBA) কি
অ্যামাজন এফবিএ (FBA) হচ্ছে “ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন”। অ্যামাজন ডট কম বিশ্বের প্রথম সারির ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা এবং ক্রেতার ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে দেয়া । অ্যামাজন এফবিএ তাদের ব্যবসার একটি অংশ ।
অ্যামাজন এফবিএ বিষয়টা একটু ভিন্ন , এখানে থার্ড পার্টি একজন অ্যামাজনের কাছে প্রোডাক্ট পাঠায় এবং অ্যামাজন কোম্পানি সেই প্রোডাক্ট তার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করে এবং বিক্রি করে । তাহলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান “অ্যামাজন” এর লাভ কি ? এবং “এফবিএ” টাই বা কি ?
অ্যামাজন মূলত মধ্যস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে এখানে, তাদের কাছে বিক্রেতারা প্রোডাক্ট দেয় এবং প্রতি প্রোডাক্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমান কমিশনের বিনিময়ে অ্যামাজন নিজেদের ওয়েবসাইটে সেই প্রোডাক্ট দেখায় এবং কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে এবং এই পুরো প্রক্রিয়ায় বিক্রেতাকে কোন প্রকার আর কষ্ট করতে হয় না । ক্রেতার ফোনকল থেকে শুরু করে যাবতীয় সব বিষয় অ্যামাজন দেখে । প্রোডাক্ট সাইটে শো করা থেকে শুরু করে অর্ডার নেয়া এবং ফোনকল ধরা ও প্রোডাক্ট ক্রেতার ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া সব কাজ তাদের , আর বিনিময়ে তাদের মিলবে একটা পরিমান কমিশন । বছর কয়েক ধরে এই অ্যামাজন এফবিএ ব্যবসা বিলিয়ন ডলার এর এক নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে ।
কিভাবে অ্যামাজন এফবিএ (FBA) বা “ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন” কাজ করে
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যারা নিজস্ব উৎপাদিত বা সংগৃহীত প্রোডাক্ট ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করতে পারেন না প্রচার –প্রচারণা এবং সাপ্লাইজনিত সমস্যার কারণে , তাদের জন্যে “এফবিএ” হচ্ছে ব্যবসা সম্প্রসারণ এর এক নতুন পথ । তাদের শুধু অ্যামাজন এর ওয়্যারহাউজে তাদের প্রোডাক্টগুলো পাঠিয়ে দিতে হবে । বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে তারপর জানাবে কতগুলো প্রোডাক্ট অ্যামাজন পেয়েছে বিক্রির জন্যে বিক্রেতার কাছ থেকে । আর বিক্রেতা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রোডাক্ট প্রাইস বসিয়ে দিবে । এরপর বাকি পুরো কাজটিই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন এর । তারা প্রোডাক্ট শো করবে অনলাইনে , বিক্রি করবে ও কাস্টমার এর সাথে যোগাযোগ করবে , কাস্টমারের অভিযোগ – সমস্যা সবই দেখভাল করবে তারা এবং প্রোডাক্ট ক্রেতার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে এবং বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে প্রোডাক্ট বিক্রির পুরো টাকা চলে যাবে । এই সমস্ত প্রক্রিয়াটাই অর্থাৎ বিক্রেতা থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট নিয়ে অ্যামাজন কোম্পানির যাবতীয় প্রসেস এবং ক্রেতার কাছে প্রোডাক্ট প্রেরণ ও বিক্রেতাকে তার প্রোডাক্ট বিক্রির অর্থ দেয়া , ও নিজেদের কমিশন রাখা পুরো সিস্টেমটাই “অ্যামাজন এফবিএ” ।
ব্যাপারটা ঠিক এরকম , মেহেদী সাহেব বাংলাদেশে জামদানী শাড়ি বিক্রির ব্যবসা করেন, কিন্তু ওনার ইচ্ছে হলো বহির্বিশ্বে ওনি এই প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন । তাই মেহেদী সাহেব ঠিক করলেন কিছু জামদানী শাড়ি কিনে অ্যামাজনের মাধ্যমে বিক্রি করবেন । যেহেতু ওনার বিদেশে নিজে নিজে জামদানী বিক্রি করা একার পক্ষে সম্ভব না , তাই তিনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান “অ্যামাজন” এর সহায়তা নিলেন । “অ্যামাজন ” বললো আচ্ছা আমরা তোমার দেয়া প্রোডাক্ট মানুষের কাছে বিক্রি করে দেবো , তোমাকে কোন প্রকার ঝামেলা পোহাতে হবেনা এবং প্রোডাক্ট এর প্রচারণাসহ বিক্রি ও ডেলেভারি সব আমরা করবো তবে আমাদেরও লাভের কিছু অংশ দিতে হবে । তাই মেহেদী সাহেব বললেন ঠিক আছে আমার প্রোডাক্ট এর দাম ৮০ ডলার , তাহলে আমি ৯০ ডলারে বিক্রি করবো । বিক্রি থেকে অ্যামাজন তাদের অংশ রেখে দিলো এবং বাকি অংশ তার এফবিএ অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলেন ।
(এ লেখাটি কনটেন্টএভার ফেসবুক পেজেতে আলোচনা করা হয়েছে । )
অ্যামাজন পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম পাবলিক লিমিটেড প্রতিষ্ঠান , তাদের মার্কেট ক্যাপিটাল ৩৬৫.২ বিলিয়ন ডলার । অ্যামাজনের প্রতিটা ওয়্যারহাউজেই রয়েছে তাদের কয়েকশ কর্মী , বিশ্বের প্রায় প্রতিটা উন্নত দেশ যেমন- আমেরিকা , কানাডা , মেক্সিকো, ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , জার্মানি , জাপান , চীনসহ ইউরোপের অনেক উন্নত দেশের অনেক বড় বড় শহরেই তাদের নিজস্ব ওয়্যারহাউস রয়েছে , এর মধ্যে আমেরিকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ওয়্যারহাউস । এছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বড় বড় বেশকিছু শহরেও রয়েছে তাদের অনেকগুলো ওয়্যারহাউস ।
অ্যামাজনের প্রধান অর্থ বিষয়ক কর্মকর্তা ব্রায়ান ওলসাভস্কি বলেছেন ,গত বছরে চতুর্থ প্রান্তিকে অ্যামাজন এর বিক্রী হওয়া পণ্যের ৫০% ছিল এফবিএ বা “ফুলফিলমেন্ট বাই অ্যামাজন” এর মাধ্যমে । অ্যামাজন প্রাইম লয়াল্টি প্রোগ্রাম এর সদস্যেদের কাছে মার্চেন্টরা এফবিএ এর মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন । গতবছর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ১১২৮০ কোটি ডলার এর প্রোডাক্ট বিক্রি করে অ্যামাজন, দেশটিতে অনালাইন রিটেইল এ অ্যামাজনের শেয়ার ছিল ৩৩% , এবং ২০১৪ সালে ছিল ২৯.২ % শেয়ার ।
অ্যামাজন এফবিএ
ভারতে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে অ্যামাজন এবং আরো তিন বিলিয়ন ডলার তারা বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে । ভারতের হরিয়ানায় অ্যামাজন প্রতিষ্ঠান দুই লক্ষ বর্গফুটের একটি ফুলফিলমেন্ট সেন্টার করেছে যা ভারতে অ্যামাজনের সবচেয়ে বৃহৎ ফুলফিলমেন্ট সেন্টার এবং অ্যামাজন ইন্ডিয়ার ৮০% মার্চেন্ট তাদের এ ফুলফিলমেন্ট সেন্টার ব্যবহার করে কাস্টমারকে প্রোডাক্ট ডেলিভারি করায় । ভারতে অ্যামাজনে ২২ টি ফুলফিলমেন্ট সেন্টার রয়েছে এবং আরও পাঁচটি নতুন ফুলফিলমেন্ট সেন্টার নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে । ভারতে অ্যামাজনের ফুলফিলমেন্ট সেন্টারগুলোর সর্বমোট জায়গা ২৫ লক্ষ বর্গফুট এবং টোটাল ৭৫ লক্ষ কিউবিক ফুট স্টোরেজ রয়েছে । ভারতের মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু , দিল্লী,পাঞ্জাব, রাজস্থান , তেলেগু , গুজরাট, কর্ণাটক, হরিয়ানা এবং পশ্চিমবঙ্গে এরকম ফুলফিলমেন্ট ওয়্যারহাউজ রয়েছে । বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ এফবিএ মার্চেন্ট রয়েছে ভারতে , অথচ শুরুর দিকে ২০১৩ সালে মাত্র ১০০ জন মার্চেন্ট ছিল । গতবছর ভারতে অ্যামাজনের ২৫০% প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
সূত্রঃ
অ্যামাজন
ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
লেখক: নাজমুল হাসান মজুমদার, তথ্যপ্রযুক্তি লেখক।