TechJano

আইনস্টাইনের জন্মদিনে চলে গেলেন স্টিফেন হকিং, জেনে নিন ১০ তথ্য

আজ ১৪ মার্চ ২০১৮, বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ১৮৭৯ সালের এই দিনেই জন্মগ্রহন করেছিলেন, আর এই দিনেই চলে গেলেন আরেক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, আরেকটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। বুধবার সকালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তাঁর পরিবারের সদস্যদের বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন।

তার সন্তান লুসি, রবার্ট ও টিম বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত। আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বাবা আজকে মারা গেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি অনেক বড় মাপের বিজ্ঞানী ও অসাধারণ মানুষ ছিলেন। তার কাজ এবং অবদান অনেক বছর ধরে মানুষ মনে রাখবে, ধারণ করে রাখবে।’

২১ বছর বয়স থেকেই দূরারোগ্য মটর নিউরন রোগে ভুগছেন হকিং। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা তাঁকে বিখ্যাত হওয়া থেকে রুখতে পারেনি। হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। আর মা ইসাবেল হকিং ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন হকিং বড় হয়ে চিকিৎসক হোক। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞানে আর গণিতে।

স্টিফেন হকিং এর জন্ম জানুয়ারি ৮, ১৯৪২। হকিংকে বিশ্বের অন্যতম সেরা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী বিবেচনা করা হয়। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক ছিলেন। কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনও একসময় এই পদে ছিলেন। ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর হকিং অবসরে যান। এর পর তিনি ক্যামব্রিজের গনভিলি এবং কেয়াস কলেজের ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিওরি’র প্রবক্তা স্টিফেন হকিং। ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানী কৃষ্ণগহ্বর এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে তাঁর কাজের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির এক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন।’
আইনস্টাইনের পর হকিংকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন অবদানের জন্য পাওয়া তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ানস পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদক, উলফ পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার।
স্টিফেন হকিংয়ের ‘সাহস ও অধ্যাবসায়ের’ প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানেরা। তাঁরা বলেন, ‘তাঁর (হকিংয়ের) প্রতিভা এবং রসবোধ বিশ্বব্যাপী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
১০ তথ্য
১. ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন হকিং এবং বেড়ে ওঠেন সেন্ট আলবানসে। চার ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন। হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। মা ইসাবেল হকিং ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন হকিং বড় হয়ে চিকিৎসক হোক। ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞানে আর গণিতে। তাঁর জন্মদিনের তারিখ আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির ৩০০ তম মৃত্যুবার্ষিকী।

২. ১৯৫৯ সালে ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন হকিং। চেয়েছিলেন গণিতে পড়তে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত পড়ার সুযোগ না থাকায় পদার্থবিজ্ঞান পড়েন। তিনি প্রথম বিভাগ স্নাতক ডিগ্রি পান।

৩. হকিংয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি সংখ্যা এক ডজন। ১৯৮২ সালে সিবিই অর্জন করেন। এ ছাড়াও রয়্যাল সোসাইটির ফেলো ও ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য তিনি।

৪. হকিং ২১ বছর বয়স থেকে অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরসিস (এএলএস) রোগে ভুগছিলেন। এ রোগটি খুব কম দেখা যায়। এটি খুব ধীরে ধীরে মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলে।

৫. ১৯৮৫ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে তাঁকে। এতে তাঁর ভোকাল কর্ড ও ল্যারিংস নষ্ট হয়। এতে কিবোর্ড চালিত ইলেকট্রনিক স্পিচ সিনথেইজার তার হুইলচেয়ারে বসানো হয়।

৬. ১৯৯৮ সালে তাঁর লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের একটা। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন ব্রিটিশ এই পদার্থবিদ। চার বছরের বেশি সময় ধরে সানডে টাইমসের সেরা বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকার শীর্ষে ছিল এটি।

৭. ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন সন্তানের জনক হকিং। জেন হকিংয়ের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর। পরে নার্স এলাইন মেসনকে বিয়ে করেন।

৯. হকিং ও তার মেয়ে লুসি হকিং মিলে ২০০৭ সালে শিশুদের জন্য জনপ্রিয় বই জর্জ’স সিক্রেট কি টু দি ইউনিভার্স লেখেন। এর তিনটি সিক্যুয়াল রয়েছে।

১০. ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অব ফ্রিডম পুরস্কারে ভূষিত করেন।

Exit mobile version