অভূতপূর্ব শক্তির একটি টুল হচ্ছে ইন্টারনেট। কিন্তু ইন্টারনেটের এই সুফল যদি সমানভাবে বন্টন করা না যায় তবে তা মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। ফেসবুকের অর্থায়নে পরিচালিত দ্য ইনক্লুসিভ ইন্টারনেট ইনডেক্স বা সমন্বিত ইন্টারনেট সূচক তৈরির কাজ করে দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট। এ সূচকে ইন্টারনেট কেবল সবার ব্যবহার সুবিধা বা দামের বিষয়টি তুলে ধরা হয়না, একই সঙ্গে সবকিছুর সঙ্গে ব্যক্তি ও সামাজিক স্তরে সঙ্গতিপূর্ণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিবাচক ফলাফল পরিমাপ করা হয়।
২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সমন্বিত ইন্টারনেট সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। চারটি বিভাগ বা ক্যাটেগিরিতে ভাগ করে ৮৬ টি দেশের পারফরম্যান্স ওই সূচকে তুলে ধরা হয়েছে। ওই সূচকে অ্যাক্সেসিবিলিটি (সংযোগ সুবিধা), অ্যাফোরডিবিলিটি, (খরচের সামর্থ্য), রেলিভেন্স( প্রাসঙ্গিকতা) ও রেডিনেস (প্রস্তুতি) এ চারটি ক্যাটেগরির পারফরম্যান্স বিবেচনায় দেশগুলোর তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্যাটেগরির ইন্টারনেট অন্তর্ভুক্তির প্রধান সূচক, পরিমাপযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও দাম ও গুণগত মান হিসেবে অনলাইনে স্থানীয় ভাষার কনটেন্টের উপস্থিতি, অনলাইন নীতিমালার মতো বিষয়গুলো সূচক ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালে সূচক তৈরিতে একটি ইন্টারনেট জরিপ করা হয়েছে।৮৫ টি দেশের চার হাজার মানুষকে নিয়ে করা ওই জরিপে মানুষের জীবনে ইন্টারনেটের অবদান বিষয়টি পরিমাপ করা হয়। মানুষের কাজ, সামাজিক জীবন, বিনোদন, কেনাকাটার অভ্যাস, স্বাধীন ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁদের জ্ঞান বিষয়গুলো সম্পর্কে তথ্য জানা যায়।
ওই সূচকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, গবেষক ও নীতিনির্ধারকেরা এ তথ্য থেকে বয়স, লিঙ্গ অবস্থানভেদে ইন্টারনেটের সুফল নিতে সক্ষম হবে।
২০১৭ সালে করা সূচকটিতে ৭৫ টি দেশ ঠাঁই পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ৮৬টি দেশে এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ বছরের সূচকে বিশ্বের প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষকে আওতায় ধরা হয়েছে।
এবারের গবেষণার মূল ফল দাঁড়িয়েছে-
- ইন্টারনেট সংযোগ গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে কম আয়ের দেশগুলোতে এ বৃদ্ধির হার ৬৫ দশমিক এক শতাংশ।
- ধনী ও গরীবের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের দূরুত্ব কমে আসছে।
- ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ব্যাপক।
- ইন্টারনেট ব্যবহারে ক্ষমতায়ন বাড়ছে বিশেষ করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা।
- ইউরোপে প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
সূচকে বাংলাদেশ
২০১৮ সালের সমন্বিত ইন্টারনেট সূচকে এশিয়ার মধ্যে বেশ ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। সূচকে থাকা ৮৬ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬২ তম। বাংলাদেশের পরে আছে ভেনেজুয়েলা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, আলজেরিয়া,তানজানিয়া, পাকিস্তান, সেনেগাল, নেপাল, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো। তালিকার সবচেয়ে নিচে আছে কঙ্গো। তালিকার শীর্ষে আছে সুইডেন। এরপর আছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য। তালিকায় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ৪৭ তম। শ্রীলঙ্কা আছে ৫২ নম্বরে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে সূচকে বলা হয়েছে, নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের ২৩৩ টি দেশের মধ্যে ইন্টারনেট সমন্বয় সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬ তম আর মোট ৮৬ দেশের মধ্যে সূচকে ৬২ তম। বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলা হয়েছে শক্তিশালী নীতিমালার পরিবেশ, বিশ্বস্ততা ও নিরাপত্তার পরিবেশের কারণে রেডিনেস র্যাংকিংয়ে এশিয়ার ২৩টি দেশের মধ্যে ১৫তম বাংলাদেশ। তবে প্রাসঙ্গিকতা একটি দুর্বল দিক। কারণ, এখান ইন্টারনেটর ব্যবহার প্রাসঙ্গিক নয় বরং বেশিমাত্রায় ই-বিনোদনে ব্যবহৃত হয়।
ইন্টারনেট অ্যাভেলিবিলিটি ক্যাটেগরি ধরলে ৮৬ টি দেশের মধ্য বাংলাদেশ আছে ৬৩ নম্বরে। এক্ষেত্রে নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। নেপাল আছে ৬৭, মিয়ানমার ৭০ ও পাকিস্তান ৭৭ নম্বরে আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপরে অর্থাৎ ৬২ তম ভারত। শ্রীলঙ্কা ৫৭তম।
যদি ইন্টারনেট সক্ষমতার হিসাব ধরা হয় তবে ওই সূচকে অনেকটাই এগিয়ে ৫৭তে বাংলাদেশ। প্রতিবেশি দেশগুলেোর মধ্যে এক্ষেত্রে কেবল মিয়ানমার বাংলাদেশের পেছনে। তাদের অবস্থান ৬৯ তম। প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান (৪৩), শ্রীলঙ্কা (৪২) ও ভারত (৩৯)।
সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে ইন্টারনেট রেলিভেন্স বা প্রাসঙ্গিকতার ক্যাটেগরিতে। এ বিভাগে ৮৬ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৭। পাকিস্তান ৭০ আর নেপাল ৭৪। বাংলাদেশি মানুষ ইন্টারনেটে বিনোদন বেশি খোঁজে। প্রাসঙ্গিক কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার কম। এ ছাড়া স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট কম। এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে ভারত ৩৭ তম। মিয়ানমার ৪৫ তম। শ্রীলঙ্কা ৫০তম।
যদি ইন্টারনেট রেডিনেস বা প্রস্তুতির হিসাব ধরা যায় তবে বাংলাদেশ প্রতিবেশি অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। রেডিনেস র্যাংকে বাংলাদেশ ৪৭তম। বাংলাদেশের পরেই আছে নেপাল ৪৮তম। এক্ষেত্রে, কানাডা (৫০), শ্রীলঙ্কা (৬২), কুয়েত (৬৪), পাকিস্তান(৬৮), মিয়ানমার (৬৯) এর চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ।
এর আগে ফেসবুকের ইন্টারনেট ডটওআরজির করা দ্য ইনক্লুসিভ ইন্টারনেট ইনডেক্স:ব্রিজিং ডিজিটল ডিভাইডস শীর্ষক প্রতিবেদনে ৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৬ তম স্থানে স্থান পেয়েছিল। এবারের সূচকটি তৈরিতে বিভিন্ন সূচক পরিমাপ ছাড়াও জরিপ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
সূচক সম্পর্কে জানার লিংক হচ্ছে https://theinclusiveinternet.eiu.com/explore/countries/performance