শীতের সকালে পুরো ঢাকা শহর যখন কুয়াশায় আবৃত, ভোরের আলোও তখন ফোটেনি। চারদিকে হাড় হিম করা ঠান্ডা। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে তখনো বাতি জ্বলছে। নগরীর রাজপথে চলছে অল্পকিছু যান। তবে রাইজআপ ল্যাবসের সদর দপ্তরের চিত্র যেনো এসব কিছু থেকেই ভিন্ন। ভবনের নিচে ছোট ছোট কিছু জটলা। আর তাতে ঔৎসুক কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কারণ একটু পরই যাত্রা শুরু হচ্ছে তাদের দুইদিনের সফর – এন্যুয়াল রিট্রিট ২০২৩।
দুয়ারে যখন ২০২৪ সাল কড়া নাড়ছে তখন শুধু নতুন বছরই নয়, কোম্পানীর সব অর্জনই একসাথে উদযাপন করতে ভিন্ন এই উদ্যোগ নেয় আইটি কোম্পানী রাইজআপ ল্যাবস। বছরের সেরা কর্মীদের অবদান ও তার স্বীকৃতি দিতে এন্যুয়াল রিট্রিট ২০২৩ সফরে প্রতিষ্ঠানটি একইসাথে আয়োজন করে “স্পটলাইটস অব রাইজআপ ল্যাবস”।
গত শনিবার ও রবিবার (৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর) গাজীপুরের বেসক্যাম্প রিসোর্টে আয়োজন করা হয় এই সফরের। দুঃসাহসিক অভিযান ও বিভিন্ন রোমাঞ্চকর খেলাধুলা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কর্মীদের জন্য পুরো সফরটি উপভোগ্য করে তোলে রাইজআপ ল্যাবস।
ভোর ৬টার মধ্যে একে একে সদর দপ্তরে এসে অপেক্ষা করেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। সকলে পৌঁছানোর পর অবশেষে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়। আর তখনই তা হয়ে ওঠে আনন্দ ভ্রমণ। ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি গাড়িতে পৃথকভাবে গেলেও প্রতিটিতেই গান ও নাচের মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি করেন দলের সদস্যরা। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই গন্তব্যে পৌঁছে যান তারা।
সফরে অন-ট্রি অবস্টেকল, অন-গ্রাউন্ড চ্যালেঞ্জ, মাড ট্রেইল, রিভার ক্রসিং, ওয়াটার জরবিং, জিপ লাইন, আর্চারীসহ রোমাঞ্চকর সব খেলায় মেতে ওঠেন রাইজআপ ল্যাবসের কর্মীরা। কখনো গাছের ওপর দড়িঁতে হাঁটা, কখনো বা গাছের মগডাল থেকে দড়িঁ বেঁধে তাতে ঝুলে পড়া। আবার যুদ্ধের ময়দানের মত মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে শেষ প্রান্তে পৌঁছানো। শারীরিক এসব কসরতে অংশ নিয়ে সবাই যেনো নিজেদের নতুন করে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন।
ব্যতিক্রমী ও উত্তেজনাকর এসব খেলা আয়োজনের জন্য রাইজআপ ল্যাবসের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন পরিবারের নবীন সদস্য মো. সাকিব। তিনি বলেন, এখানে প্রতিবছরই এই সফরের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এটাই আমার প্রথম অংশগ্রহণ। তাই এন্যুয়াল রিট্রিটের ঘোষণা শোনার পর থেকেই আমি খুব আগ্রহী ছিলাম। তবে আজ যখন এসব এক্টিভিটিতে অংশ নিই, সত্যিই আমি খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম।
কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই সফরটি পরিচালনা করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অপারেশন্স ম্যানেজার মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, সারাবছর ক্লায়েন্টের প্রজেক্টগুলোতে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন আমাদের রাইজআপ ল্যাবসের কর্মীরা। তাদের মানসিক পরিশ্রমই বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু কাজ করতে করতে তারা যাতে হাঁপিয়ে না যান, তাই আমরা প্রতি বছর একটি বার্ষিক সফরের আয়োজন করি। এছাড়া প্রতি মাসেই গেম ডে, কালার ডে, কুইজ ডে’সহ বিভিন্ন ধরনের এক্টিভিটির মাধ্যমে তাদের চাঙা রাখার চেষ্টা করি।
৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় “স্পটলাইটস অব রাইজআপ ল্যাবস” ইভেন্ট। এতে ২০২৩ সালে রাইজআপ ল্যাবসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া নতুন সব প্রতিষ্ঠান, সফল প্রকল্পসমূহ, নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ এবং বিভিন্ন উদ্ভাবনসমূহ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন রাইজআপ ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জনাব এরশাদুল হক, হেড অব প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট জনাব মোঃ রফিকুজ্জামান রফিক, অপারেশন্স ম্যানেজার জনাব এনামুল হক রাতুল, সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার জনাব কে.এইচ. মোঃ হামিম জাকারিয়া, টেকনিক্যাল লিড জনাব মোঃ মিজানুর রহমান, লিড স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং এসইও এডিটর জনাব নাসিফ ইশাত এবং কমিউনিকেশন অ্যান্ড আউটরিচ এক্সিকিউটিভ মিস মেহনাজ ইরতেকা।
উপস্থাপনা শেষে, বিভিন্ন বিভাগে সেরা কর্মীদেরকে তাদের ব্যতিক্রমী সফলতা, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং কোম্পানির প্রতি অবদানের জন্য পুরষ্কৃত করা হয়। ইভেন্টে কোম্পানির শেষ কোয়ার্টার জুড়ে ব্যতিক্রমী কর্মক্ষমতা, উদ্ভাবন এবং টিমওয়ার্ক প্রদর্শনকারী কর্মীদের অসামান্য অবদান এবং কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এসময় কোম্পানিকে এগিয়ে নিতে কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য রাইজআপ ল্যাবস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
রাতে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন সবাই। যেখানে অংশ নেন রাইজআপ ল্যাবসের প্রতিভাধর গায়কেরা। তারা একে একে জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনান। আর তাতে সুর মিলিয়ে জমিয়ে তোলেন অন্যরাও।
দুইদিনের এই সফর সম্পর্কে রাইজআপ ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জনাব এরশাদুল হক বলেন, “আমরা আমাদের কর্মীদের এবং রাইজআপ ল্যাবসে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। স্পটলাইট ইভেন্ট এবং এন্যুয়াল রিট্রিট হলো সারা বছর তাদের কঠোর পরিশ্রম, উৎসর্গ এবং কাজের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমরা বিশ্বাস করি, একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে এধরনের ইভেন্ট আয়োজন করা খুবই জরুরি।
পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সকালে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, কায়াকিং উপভোগ করে রাইজআপ ল্যাবস পরিবার। শীতের কুয়াশা ভেদ করে পরে আবারও নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা শুরু করেন তারা। তাই বলে আনন্দের শেষ সেখানেই নয়। পুরো পথজুড়েই গান ও আড্ডায় মেতে ওঠেন তারা।