TechJano

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উপকারী না অপকারী?

কৃত্রিম বুদ্ধিমানরা আসছে। কেউ বলছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উপকারী কেউ বলছেন অপকারী? আসলে কি? চলুন আলোচনা করি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারী ও অপকারী দিকগুলো নিয়ে।
বুদ্ধিমান মানুষ, না কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট—করপোরেট চাকরিতে প্রাধান্য পাবে কারা? হিসাবরক্ষক, নাকি বুদ্ধিমান সফটওয়্যার—ব্যবসাক্ষেত্র কাদের দখলে থাকবে? বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বাড়তে থাকায় এ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের বিষয় ও তার প্রভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। গ্রাহক চাহিদার পূর্বাভাস জানা, কর্মী নিয়োগ এবং গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে গুগল, আমাজনের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
শুরু করা যাক সাম্প্রতিক তথ্য দিয়ে। গত বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কিনতে বা ও অধিগ্রহণ করতে ২ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার বেশি খরচ করেছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো, যা ২০১৫ সালের তুলনায় ২৬ গুণ বেশি। অর্থাৎ এক বছরে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে। কেন? এর পেছনে যুক্তি আছে নিশ্চয়!
তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শদাতা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেন্সি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট বলছে এ খাতের দারুণ সম্ভাবনার কথা। তাদের পূর্বাভাস বলছে, শুধু বাজারজাতকরণ, বিপণন, ও সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে আগামী দুই দশকে মুনাফা, দক্ষতাসহ অর্থনৈতিক মূল্য ২৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।

Will Smith Sophia the Robot
https://www.instagram.com/p/Bg6ro2mnPNU/?taken-by=willsmith
Credit: Will Smith/Instagram

গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশাল প্রভাব দেখতে পান। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মানুষের জন্য আগুন বা বিদ্যুতের চেয়েও বেশি প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ।
এ তো গেল আশার কথা। উদ্বেগ কি একেবারে নেই? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যেমন বিশাল প্রভাবের কথা আশা জোগাচ্ছে, তেমনি তৈরি করছে বিশাল উদ্বেগ। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, মানুষকে বেকার করে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার। মানুষ চাকরি হারাবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হবে। মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট। এতে লাভ হবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর। মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাবে বিশাল তথ্যভান্ডার। তারা তথ্য সংগ্রহ করে যাবে। তারা হয়ে উঠবে অপ্রতিরোধ্য, একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী। তখন কে ঠেকাবে তাদের?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুফলের দিক নিয়ে আগে আলোচনা করা যাক। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাই ডিটেক্টর ব্যবহার ব্যবসাক্ষেত্রে খুব একটা দেখা যায় না। তবে ‘পিং অ্যান’ নামের একটি চীনা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি মনে করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রে অসততা ধরা যায়। ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঋণের আবেদন গ্রহণ করে। সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতাদের তাঁদের আয়সহ ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরিকল্পনা বিষয়ে ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য দিতে হয়। অ্যাপটি ব্যবহারকারীর ৫০ ধরনের মুখভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে তাদের সত্য-মিথ্যার ধরন নির্ণয় করে। যন্ত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকায় গ্রাহক চিনতে সুবিধা হয়। যাঁদের নিয়ে সন্দেহ হয়, তাদের আরও বেশি যাচাই-বাছাই করা হয়। অর্থাৎ বুদ্ধিমান অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহক বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজ করা যাচ্ছে। শুধু ঋণ গ্রহণ বা আর্থিক খাতেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ? না, তা নয়। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। জনসন অ্যান্ড জনসন, অ্যাকসেঞ্চারের মতো প্রতিষ্ঠান কর্মীর আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সংবাদপত্রেও এখন দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ সাংবাদিকের কাজও করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমান সফটওয়্যার। সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ তাদের অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের সফটওয়্যার। এ ছাড়া মোবাইল সেবাদাতা ভোডাফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যার পূর্বাভাস দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ঝুঁকি নির্ণয়েও এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে বেশি সুবিধা নিতে পেরেছে প্রযুক্তি খাত। এখনকার শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পশ্চিমাদের গুগল ও আমাজন আর চীনের আলীবাবা ও বাইদুর কথা বলাই যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সফল হয়েছে তারা। যেমন আমাজনের ক্ষেত্রে রোবটকে নির্দেশ দেওয়া, ভুয়া পণ্য শনাক্ত করা এবং ডিজিটাল সহকারী সফটওয়্যার অ্যালেক্সাতে যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আলীবাবাতেও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দেখা যায়।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর প্রয়োগে ব্যবস্থাপকেরা প্রতিষ্ঠানের কর্মীর ওপরে অকল্পনীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। উদাহরণ চোখের সামনেই। কর্মীদের হাতে পরার উপযোগী একটি ব্যান্ডের পেটেন্ট করিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান আমাজন। ব্যান্ডটি ওয়্যারহাউসের কর্মীদের হাতের নড়াচড়া শনাক্ত করতে সক্ষম। কর্মীরা যখন বসে থাকবে, তখন এটি ভাইব্রেশন দেওয়া শুরু করবে।
‘ওয়ার্কডে’ নামের আরেকটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কথা বলা যাক। প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মীর কী মনোভাব তা জানা দরকার? কে কখন চাকরি ছাড়বে, সেটি ধারণা করা লাগবে? নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে সফটওয়্যারটি সে সুবিধা দেয়। ৬০টি বিষয় বিবেচনা করে কৃত্রিম বুদ্ধির প্রয়োগে পূর্বাভাস দিতে পারে ওয়ার্কডে সফটওয়্যার।
এবার আসা যাক ‘হিউম্যানজি’ নামের একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কথায়। স্মার্ট আইডি ব্যাজ তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ব্যাজ কর্মীদের আচরণ শনাক্ত করতে পারে। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার ধরন বা আচরণের ধরনসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ওই ব্যাজ। পরে তার ফল জানিয়ে দিতে পারে।
অবশ্য কর্মক্ষেত্রে নজরদারির বিষয়টি একেবারে নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই কর্মীদের ওপর নজরদারি করে আসছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কর্মীরা কখন কী করেন, কখন অফিসে আসেন বা কখন বাইরে যান, বিভিন্ন উপায়ে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনেরা তা জানার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া কর্মীরা কম্পিউটারের বসে কী কাজ করেন, সেটাও তাঁদের অজানা নয়। তাঁদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো সোনায় সোহাগা! তাঁদের কাছে কর্মীদের সবকিছু নজরদারি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ উপযুক্ত বলে মনে হবে। কারণ, সব তথ্যই তো মূল্যবান! তা ছাড়া কর্মক্ষেত্রে কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তার বিষয়ে আইনকানুন কম। অনেক কর্মীই কাজের চুক্তির আগে অসতর্কভাবেই নজরদারির বিষয়ে সম্মতি দিয়ে দেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে এ সুবিধা কত দূর পর্যন্ত গড়াতে পারে, তা কখনো ভেবেছেন কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আরও কিছু সুফলের কথা জেনে রাখুন। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ। কারণ, কর্মীদের ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কম। কে কী করে, সব তথ্য জানা যায়। স্মার্ট আইডি ব্যাজ প্রস্তুতকারক ‘হিউম্যানজি’র কথা শুনেছেন। এ সফটওয়্যারটি কর্মীর ক্যালেন্ডার বা ই-মেইলের দেওয়া কাজের সঙ্গে ব্যাজের সংগৃহীত তথ্য মেলায়। এরপর তা থেকে অফিসে দলগত কাজের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।
কর্মক্ষেত্রে ম্যাসেজিংয়ের অ্যাপ ‘স্ল্যাক’-এর কথা তো অনেকেরই জানা। ব্যবস্থাপকদের জন্য দারুণ কাজের সফটওয়্যার এটি। কর্মীদের কাজের গতি মাপার সুযোগ করে দিতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু এ রকম উৎপাদনশীল সফটওয়্যারেই সীমাবদ্ধ নেই। কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত স্ক্রিন ব্যবহার করে ভুয়া খরচের দাবি, ভুয়া রসিদ তৈরি, ভুয়া অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক দাবির বিষয়গুলো ধরা যায়।
এতে কি শুধু প্রতিষ্ঠানের লাভ? না, কর্মীদেরও কিছুটা লাভ আছে। কর্মীরা নিয়ম মানছেন কি না, তাঁরা সুস্থ আছেন কি না, তা জানার সুযোগ আছে। কম্পিউটার ভিশন প্রযুক্তিতে কর্মীরা নিরাপদ পোশাক পরেছেন কি না, সেগুলোও পরীক্ষা করা যায়। এতে কর্মীরা নিরাপদ থাকেন। ফলে কাজের জন্য ন্যায্য মূল্যায়ন পাওয়ার আশা থাকে। আবার কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাওয়া যায়। যেমন ‘কোগিটো’ সফটওয়্যারের উদাহরণ আনা যায়। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি এমন সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে কাজে লাগানো যায়। এটি গ্রাহক সেবাদাতার ফোনকল শুনে সেবাদাতাকে স্কোর দিতে পারে। গ্রাহককে কত দ্রুত ও সফলতার সঙ্গে সেবা দিতে কর্মী সক্ষম হয়েছে, তা ধরতে পারে ওই সফটওয়্যার।
কারও বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে? কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রের সাহায্যে তাঁর পদোন্নতি ও বেতন বাড়ানোর বিষয়টি ঠিক করা যায়। পুরো পদ্ধতিটি তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার সময় থেকেই শুরু হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে পক্ষপাত থাকতে পারে কিন্তু অ্যালগরিদম যদি নিখুঁতভাবে তৈরি করা যায়, তা কখনো পক্ষপাত করে না।
মানুষ যে ভুলগুলো করে সফটওয়্যারে তা সম্ভব নয়। ‘টেক্সটিও’ নামের একটি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কথা বলা যায়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়েছে, যা চাকরির বর্ণনাকে এমনভাবে উন্নত করে, যাতে নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করানো যায়। এ ছাড়া অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বৈষম্য ধরা সহজ হয়।
গোলাপে যেমন কাঁটা থাকে, তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু কুফল আছে। এতক্ষণ যে সুফলের কথা বলা হলে, এর বিপরীতেই সম্ভাব্য কিছু নেতিবাচক দিকের কথাও জেনে রাখা ভালো। মনে রাখতে হবে, এই সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামগুলো মানুষের তৈরি। তাই এগুলো প্রোগ্রামারের ইচ্ছা অনুযায়ী পক্ষপাত দেখাতে পারে। এতে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেখানো হতে পারে। কে কখন চাকরি ছাড়বে, এমন পূর্বাভাস দিতে গিয়ে বা কার কাজের গতি ধীর, এমন তথ্য জানাতে গিয়ে অনেকের চাকরি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
এরপর নজরদারির কথা বলা যায়। একজন কর্মী বিরতি হিসেবে কতটুকু সময় বাইরে কাটাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠানগুলো তা নজরদারি করতে শুরু করেছে। এখন তো ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা জানে, তা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের ফলে মানুষের মনে স্পর্শকাতর অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন ‘ভেরিয়াটো’ নামের একটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমন সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যাতে কর্মী কম্পিউটারে কতবার স্পর্শ করেছে, সে তথ্যও জানা যায়। কাজের প্রতি কর্মী নিবেদন বুঝতে এ সফটওয়্যার দিয়ে নজরদারি করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কর্মীর পেশাদার যোগাযোগের বাইরে সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইলের কর্মকাণ্ডগুলোতেও চোখ রাখতে পারে প্রতিষ্ঠান।
এ রকম কঠিন পরিস্থিতির ভেতর কাদের টিকে থাকা সম্ভব? এ প্রশ্নের উত্তর আপনার নিশ্চয়ই জানা। যাঁরা নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করতে পারবেন, টিকবেন তাঁরাই। সময়োপযোগী দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে চাকরি টিকে যাবে। তা না হলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে হারতে হবে। এ হিসাব করলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন কম পারিশ্রমিকের শিল্প খাতগুলো বা যাঁরা ঘণ্টা চুক্তিতে কাজ করেন, এমন শ্রমিকেরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাঁদের জায়গা দখল নিলে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার জোর দাবি উঠতে শুরু করবে। কিন্তু করপোরেট খাতে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠবে।
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকেরা ও নিয়োগদাতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ভালোমন্দের দিকগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
প্রথমত, তথ্য যত সম্ভব অজ্ঞাতনামা হতে হবে। যেমন মাইক্রোসফটের একটি সেবা আছে, যা অফিসের কর্মীদের কাজের সময় ব্যবস্থাপনার তথ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু ব্যবস্থাপকদের কাছে ব্যক্তিগত তথ্যের পরিবর্তে তা সামষ্টিক কাজ হিসেবে তথ্য দেয়।
দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ হতে হবে স্বচ্ছ। কর্মীদের কাছে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে এবং তাঁদের কোন কোন তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা জানিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া নিয়মমাফিকভাবে কর্মী নিয়োগ, বরখাস্ত বা পদোন্নতির বিষয়গুলোতে সফটওয়্যারের অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফলগুলো বিবেচনা করতে হবে।
সর্বশেষ, দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। এসব তথ্য যেন চাকরিদাতাদের সামনে দেখাতে পারে, সে সুযোগ রাখতে হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করলে তা দক্ষভাবে পরিচালনা করা যাবে, অধিক তথ্য পাওয়া যাবে, উন্নত সেবা আর কম খরচে বেশি গ্রাহক আকৃষ্ট করা যাবে, এমন ধারণা করে আসছে মানুষ। এটা শুনতে তো বেশ! কিন্তু মনে রাখতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি ক্ষমতাধর আর একচেটিয়া করে তুলছে। চোখের সামনেই তো রয়েছে কত উদাহরণ!

Exit mobile version