TechJano

গুগল অ্যাডসেন্স থেকে কিভাবে আয় করবেন? পর্ব-৩

গুগল অ্যাডসেন্সের উপার্জন ততই বাড়বে আপনার নির্দিষ্ট ওয়েব পেজে ভিজিটরের সংখ্যা যত বাড়বে। এ জন্য নিজের ওয়েব পেজের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং করার চেষ্টা করাটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে অনলাইন এসইও বেশ ভালো কাজ করে। তবে যদি অফলাইন এসইওর কথা আসে, তাহলে ওয়েব পেজটির ভালো মানের ব্যাকলিং তৈরির বিষয় আসে। আসে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং মিডিয়াতে শেয়ারের বিষয়। এ সবগুলো বিষয়ই কোনো না কোনোভাবে মার্কেটিং। কিন্তু দেখেন আপনার ওয়েব পেজের লিঙ্ক ফেসবুকে শেয়ার করা মানেই নির্দিষ্টসংখ্যক কিছু লোক ওয়েব পেজের লিঙ্কটিই দেখবেই। কখনো আবার আপনার তৈরি করা ফেসবুক পেজ থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক কিছু লোকের কাছে তো বটেই, এর বাইরেও অনেকের কাছে লিঙ্কটি প্রদর্শন করা সম্ভব হবে। এতে করে বেশ দ্রুত সাড়া পাওয়া যাবে। প্রয়োজনে বারবার একই পেজের লিঙ্ক শেয়ার করা যাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য ফেসবুকের গুরুত্ব আছেই। বিষয়টি আমরা পর্যায়ক্রমে আরও স্পষ্ট করছি।

ফেসবুক পেজে কাজ করা
ফেসবুক পেজে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনি অ্যাডমিন কিংবা পেজের মূল নিয়ন্ত্রক হয়ে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে পারবেন। এখানে উদ্দেশ্যই হবে ফেসবুক মার্কেটিং। সে জন্য বুঝে-শুনে ফেসবুক পেজের একটি নামও রাখতে হবে। নামটি বিষয় সংশ্লিষ্ট হতে হবে। তারপর, ফেসবুক পেজের জন্য একটি প্রোফাইল পিকচার ও একটি কভার ফটো তৈরি করবেন। এগুলোও বিষয় সংশ্লিষ্ট হতে হবে। এবার এগিয়ে যাওয়ার পালা। আপনার ওয়েবসাইটে নতুন যে আর্টিকেলই লিখবেন, তা তো প্রকাশ করবেনই, সঙ্গে সঙ্গে এ ফেসবুক পেজেও শেয়ার করে দেবেন। ফেসবুক পেজের মেম্বার বাড়ানোর জন্য অনেককে ইনভাইট করতে পারেন। এখানে ফেসবুক পেজ খুললেই ইনভাইট করার সুযোগ রয়েছে। পেজটিতে ভিজিটরদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ও উত্তর উপস্থাপন করে ভোট নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। এ ধরনের আয়োজন করে পেজের মেম্বারদের অ্যাকটিভ রাখতে পারবেন। ফেসবুক পেজের মেম্বার যত বাড়বে আপনার পেজের পোস্ট তত বেশি লোকের কাছেই যাবে। প্রয়োজনে পেইড সিস্টেমে অর্থাত্ অর্থের বিনিময়ে পেজটিকে অনেকের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন এবং লাইক বাড়াতে পারেন পেজের। ফেসবুক পেজে লাইক দেওয়া মানেই সে পেজের মেম্বার হয়ে যাওয়া। এসব কাজও ফেসবুক পেজ চালু করার অপশন রয়েছে। আরও জানতে লেখাটির সঙ্গে থাকুন এবং মনোযোগী হন।

বাংলা টাকায় ফেসবুক পেজ প্রমোট করা
ফেসবুক পেজ প্রমোট করা মানেই অনেক লোকের কাছে আপনার পেজটি পৌঁছে দেওয়া। আপনি এ কাজটি অনলাইনেই করতে পারবেন। তার জন্য আপনার বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে কাজ হয়ে যাবে। যদি বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে, তাহলে ভিসা কার্ড/মাস্টার কার্ড/আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের মতো ডুয়াল কারেন্সি কার্ড সংগ্রহ করে ফেলুন। অর্থাত্ আপনার ডুয়াল কারেন্সি ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড হতে হবে। পেপাল কিংবা নিটেইলার কার্ড থাকলেও হবে। কার্ড ও অ্যাকাউন্টের ঝামেলা শেষ হলে ফেসবুক পেজে প্রবেশ করে বামে নিচের দিকে থাকা প্রমোট বাটনে ক্লিক করেই পেজ প্রমোট করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। শুধু আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বরটি উল্লেখ করে দিন। কাজ সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে আপনার বাংলাদেশি অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা কেটে নেওয়া হবে। টাকার অঙ্কও এখন এত বেশি নয়। এ ছাড়া প্রমোট অর্ডার করার পর অবশ্যই আপনি প্রতিদিন কতটা লাইক পড়ল এবং কতজন পেজটি দেখল, তা নিশ্চিত করতে পারবেন। আপনি নিজেই জানবেন আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থ কোন পথে খরচ হলো।

ফেসবুক পেজে ভিজিটরদের জন্য প্রশ্ন রাখা
ফেসবুক পেজের যেখানে পোস্ট করবেন সেখানেই ফটো/ভিডিও নামে একটি অপশন আছে, যেখানে ক্লিক করেই প্রদর্শিত মেন্যুতে আপনি পোল তৈরি করার অপশন পাবেন। সেখানে প্রশ্ন এবং উত্তর জুড়ে দেবেন। তারপর পেজের মেম্বাররা তার পছন্দমতো ভোট দিতে শুরু করবে। এভাবে আপনি মেম্বারদের প্রতিনিয়ত অ্যাকটিভ রাখতে পারবেন।

ফেসবুক পেজে স্লাইড শো তৈরি করা
এখানেও ফেসবুক পেজের পোস্টের সময় একই অপশন অর্থাত্ ফটো/ভিডিও নামে একটি অপশন আছে, যেখানে ক্লিক করেই প্রদর্শিত মেন্যুতে আপনি স্লইড শো তৈরি করার অপশন পাবেন। সাধারণ ছবির তুলনায় অনেকগুলো ছবি নিয়ে তৈরি স্লইড শো মেম্বারদের আরও আকর্ষণ করবে। এ অপশনে ছবি সিলেক্ট করে দেওয়া এবং কতক্ষণ একটি ছবি প্রদর্শিত হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগও আছে।

ওয়েব পেজেই ফেসবুক পেজের লাইক পাওয়া
আপনার ওয়েবসাইটের মধ্যে থেকেই ওয়েবসাইটটিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা ফেসবুক পেজের জন্য আপনি লাইক সংগ্রহ করতে পারবেন। কাজটি বেশ সহজ। শুধু ফেসবক লাইকবক্স প্লাগইনটি ইনস্টল করুন। এ ক্ষেত্রে হোমপেজে একটি ফেসবুক লাইক আইকন থাকবে। ভিজিটররা তার ইচ্ছে হলেই পেজটিকে সেখান থেকেই লাইক করতে পারবে। কাজগুলো করবে ফেসবুক লাইকবক্স প্লাগইনই। প্লাগইনটি বিনা মূল্যেই ডাউনলোড করা যাবে।
ডাউনলোড লিঙ্ক: https://wordpress.org/plugins/facebook-like-box-widget/

ফেসবুক গ্রুপ কাজ করা
ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মার্কেটিং করার ধরন পুরো উল্টো। এখানে আপনি কোনো ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করবেন না। বরং সার্চ করে আপনার ওয়েবসাইটের কিংবা ওয়েব পেজের বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপ খুঁজে বের করুন। গ্রুপটির মেম্বার হন। মনে রাখবেন এমন এমন গ্রুপ পাবেন যে গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ১ লাখের মতো। অর্থাত্ এ মেম্বাররা এ গ্রুপে কোনো পোস্ট হলে তা দেখতে পারবে। এ ধরনের গ্রুপের মেম্বার হওয়ার পর সেখানে কোনো বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করুন কিংবা কমেন্ট করুন। সুযোগমতো প্রশ্ন ও কমেন্টের মধ্যে আপনার ওয়েবসাইট কিংবা নির্দিষ্ট ওয়েব পেজের লিঙ্ক জুড়ে দিন। বুঝতেই পারছেন আপনার ওয়েব পেজের কী পরিমাণ মার্কেটিং হবে।

ওয়েব পেজকে দ্রুত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শেয়ার করা
আমরা এখন এতটুকু বলতে পারি, অনেকেই জানে যে কোনো ওয়েব পেজের লিঙ্ক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে শেয়ার করা কতটা জরুরি। ফেসবুক, থাম্বলার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো আসলেই কার্যকর ওয়েবসাইটকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। কথা হচ্ছে কাজটি দ্রুততার সঙ্গে যদি করা যেত। অর্থাত্ কেউ একজন ওয়েবসাইটে এসে আর্টিকেল পড়বে। তারপর ভালো লাগলে তা এক ক্লিকেই তার ফেসবুক টাইমলাইনে বন্ধুদের দেখার জন্য শেয়ার করে দেবে। এখানে ফেসবুককে একটি উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। না, কোনো দুশ্চিন্তা এখানেও নয়। শুধু শেয়ার দিস প্লাগইনটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করুন। এটি বিনা মূল্যে করা যাবে।
ডাউনলোড লিঙ্ক: https://wordpress.org/plugins/sharethis-share-buttons/

গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করার কিছু কৌশল
শুরুর দিকেই আপনারা জেনেছেন, গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ করছে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি ওয়েবসাইট। আরও অনেক ওয়েবসাইট আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু সবাই সফল হচ্ছে না। এ সফল না হওয়ার পেছনে কিছু কারণও আছে। কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করার আগে বলব, এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি অবশ্যই পুরোটা ভালোভাবে পড়বেন ও জানবেন। তবে এখানে কিছু প্রাথমিক কৌশল জানিয়ে দিলাম, যা জেনে রাখতেই হবে।
জি-মেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একবার আবেদন করার পর ব্যর্থ হলে সঙ্গে সঙ্গেই আবার আবেদন করতে যাবেন না।
ওয়েবসাইট ডিজাইনের মানের দিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন।
ওয়েবসাইটটি যেন মোবাইল থেকেও ভিজিট করা যায় ভালোভাবে।
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড যেন কম থাকে। অর্থাত্ ওয়েবসাইট স্লো না হয়ে যায়।

গুগল অ্যাডসেন্সের নীতিমালা অনুযায়ী ওয়েবসাইটে বাধ্যতামূলকভাবে যেসব পেজ রাখা চাই, তা রাখতেই হবে। যেমন কনটাক্ট আস কিংবা যোগাযোগ, অ্যাবাউট আস কিংবা আমাদের সম্পর্কে, প্রাইভেসি অ্যান্ড পলিসি কিংবা সাইটের নিরাপত্তা ও নীতিমালা।
সবশেষে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য একটি ওয়েবসাইট কেমন হওয়া চাই, ছবির মান কেমন হওয়া চাই। ছবি আপনার রুচিমতোই আপনি সুন্দর করবেন। তবে ভুলেও গুগল থেকে ছবি চুরি করবেন না।

লেখার মান কেমন হওয়া চাই
লেখার মান ঠিক রাখার দায়িত্ব আপনারই। এখানে আপনার লেখা শুধু ইউনিকই নয়, অবশ্যই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখা হওয়া চাই। লেখা যাতে সহজেই পড়া যায় তেমন লেখাই হওয়া চাই। কঠিন ইংরেজি ভাষার ব্যবহার করা না চাই। লেখা পরিচ্ছন্ন হতে হবে। সমসাময়িক না পারলেও লেখার বিষয় শিক্ষণীয় হওয়া চাই।

কী কী ক্যাটাগরির পেজ অবশ্যই থাকা চাই
আপনার ওয়েব পেজে অ্যাবাউট আস, কনটাক্ট আস, প্রাইভেসি পলিসি এ তিনটি ক্যাটাগরির পেজ অবশ্যই থাকা চাই। এ পেজগুলো না থাকা গুগল অ্যাডসেন্স কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে নেবে না।

গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা চাই

কোনো ওয়েব পেজের লেখা কপি করে আপনার ওয়েব পেজে বসিয়ে দেবেন না। আপনার মনে হতে পারে কিছুই হবে না। মনে রাখবেন, গুগল অ্যাডসেন্স একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকশন। এটি আগের তুলনায় আরও উন্নততর। সে সহজেই আপনার এমন কাজকে চুরি বলে ধরে ফেলবে।
নিজেই নিজের ওয়েব পেজে থাকা গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপনের ওপর ক্লিক করে উপার্জন বাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না। গুগল তা-ও সহজেই বুঝে ফেলবে। বিনিময়ে আপনার গুগল অ্যাডসেন্স নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা কেড়ে নেবে।
একই বিজ্ঞাপন একই ওয়েবসাইটের একাধিক পেজে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
কখনোই কাউকে আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার জন্য বিজ্ঞাপনের সঙ্গে কোনো ম্যাসেজ জুড়ে দেবেন না।
বিজ্ঞাপনে ক্লিক পাওয়ার জন্য গুগল অ্যাডসেন্স থেকে যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তা এডিট করে প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। যেমন লুকানো লিঙ্কের মাধ্যমে ক্লিক পাওয়ার চেষ্টা করা।
গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন পাওয়ার পর হাল ছেড়ে দেবেন না। অর্থাত্ আর্টিকেলের মান নষ্ট করবেন না। কোনো কিছু কপি করবেন না। ডিজাইনের মান অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত লিঙ্ক ব্যবহার করবেন না। আবারও বলছি, গুগল অ্যাডসেন্স সব সময়ই আপনার ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকবে। তাই ফল ভালো হবে না খারাপ হবে, তা বুঝে কাজ করবেন।
লেখক: ফারুক আহমেদ (শিবলু)
সৌজন্য: কমপিউটার বিচিত্রা

গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে শুরু করবেন? কিভাবে আয় করবেন?

গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে শুরু করবেন? কিভাবে আয় করবেন? পর্ব-২

 

Exit mobile version