গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছে অনলাইন সুপারশপ চালডাল ডটকম। নিম্মমানের পণ্য সরবরাহ, ওজনে কম দেয়া, সময়মতো ডেলিভারি না দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এছাড়া ডেলিভারি ম্যানের খারাপ ব্যবহার ও প্রোমো কোড দিলেও তা কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে চালডাল ডটকমের বিরুদ্ধে। এর আগে এক বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে পণ্যের অর্ডারের জন্য নেয়া টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় চালডাল ডটকমকে জরিমানা করেছিল জাতীয় ভোক্তা-সংরক্ষণ অধিদফতর।
চালডাল থেকে পণ্য কিনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়া তানিয়া রহমান নামে এক গৃহিনী বলেন, আমি মাঝে মাঝে সময় বাঁচাতে চালডাল ডটকম থেকে পণ্য অর্ডার করতাম। কিন্তু আমার সময় বাচার পরিবর্তে সময় আরো বেশি লেগে যেতো। ওরা অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয় পণ্য অর্ডার এর ১ ঘন্টার মধ্যে তা পৌঁছে দেবে কিন্তু আমি কখনও তা পাইনি। অনেক সময় যেদিন অর্ডার করি তার পরের দিন পণ্য সরবরাহ করে। এতে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়। ধরেন আপনার বাসায় কোন অতিথি এসেছে, এখন আপনি মাছ বা মাংস অর্ডার করলেন কিন্তু সেদিন না দিয়ে পরের দিন দিল তখন আপনি কতোটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পরবেন। এই যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে চালডাল থেকে পণ্য কেনা বাদ দিয়েছি।
বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে গত ৮ আগষ্ট চালডাল ডটকম থেকে এক কেজি গরুর মাংস ও এক কেজি লবন অর্ডার করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অর্ডার করা হলে চালডাল থেকে জানানো হয় ওইদিন রাত ৮-১০ টার মধ্যে পণ্য পৌঁছে দেয়া হবে। অর্ডার করার সময় বলে দেয়া হয় পণ্যটি ওইদিনই প্রয়োজন কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে শুধু এক কেজি লবন নিয়ে হাজির হয় চালডালের ডেলিভারি ম্যান। এসময় ডেলিভারি ম্যান জানান এখন গরুর মাংস নাই তাই আগামীকাল দেয়া হবে। পরদিন ৯ আগষ্ট বেলা ২.৩০ মিনিটে গরুর মাংস পৌঁছে দেয়া হয়।
যদিও গত ৬ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় চালডালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক চাহিদা জানানোর এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি। তবে তার কথার সঙ্গে কাজের কোন মিল পাওয়া যায়নি।
চালডাল থেকে সরবরাহ করা মাংস ওজন করে দেখা যায় এক কেজির অর্ডার করা হলেও রয়েছে ৯০০ গ্রাম। অর্থাৎ এক কেজিতে ১০০ গ্রাম কম। দামও সরকার নির্ধারিত ৪৫০ টাকা থেকে ৪০ টাকা বেশি। ১০০ গ্রাম কম দেয়াতে ৪৯ টাকা আর বাজার দর থেকে ৪০ টাকা বেশি নেয়ায় এক কেজিতে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে ৮৯ টাকা। এরপর মাংসের প্যাকেট খোলা হলে দেখা যায় বাজারের সবচেয়ে নিম্মমানের মাংস সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার আরেক নাম প্রোমো কোড। যারা একবার চালডাল থেকে পণ্য কিনেছেন তাদের মোবাইলে নিয়মিত ৪% থেকে ৭% এর প্রোমো কোডসহ বিভিন্ন ছাড়ের কোড পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। এসব কোড কাজ করেনা বলে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন। এরও সত্যতা পাওয়া গেছে।
মনির আহমেদ জারিফ নামে একজন সাংবাদিক জানান, তিনি মাঝে মাঝে চালডাল ডটকম থেকে পণ্য অর্ডার করতেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বাজার মূল্য থেকে অনেক বেশি দাম রাখে। আর এদের প্রোমো কোডগুলো কাজ করে না। আমি মনে করি এটা গ্রাহকদের সঙ্গে এক প্রকার প্রতারণা। সর্বশেষ আমি তিনটি পণ্য অর্ডার করার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি যার মোট মূল্য দেখায় ৭৮৫ টাকা। আমার কাছে ৪% ছাড়ের প্রোমো কোড ছিল কিন্তু সেটা কাজ না করায় আমি তাদের কাষ্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করি। তারা জানায় বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পড়ে আমি অর্ডার বাতিল করে বাজার থেকে পণ্য তিনটি ৬৭০ টাকায় ক্রয় করি। তার মানে বাজার দামের চেয়ে তারা প্রায় ১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে ওই তিনটি পণ্যে।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি যেখানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। এছাড়া ৭৫ টাকার বড় রসুন ৮৮ টাকায়, ৪০ টাকার পটল ৫০ টাকা, ৪০ টাকার শসা ৫২ টাকা, ৫০ টাকার বেগুন ৬০ টাকা, ৫০ টাকার করোলা ৬০ টাকা, ৪০ টাকার কাকরোল ৫২ টাকা, ২৫ টাকার কাঁচকলা ৩২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে এক বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে পণ্যের অর্ডারের জন্য নেয়া টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করায় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা-সংরক্ষণ অধিদফতর।
জানা যায়, দেশে অবস্থানরত ভিয়েতনামের ওই নাগরিক অনলাইনে চালডাল ডটকমে ১১টি পণ্যের অর্ডার করেন। কিন্তু চালডাল ডটকম তার বাসায় ১০টি পণ্য পৌঁছে দেয়। আর একটি পণ্য দেয়নি, যার মূল্য ৬৪৮ টাকা। পরে ওই পণ্য না দেয়ার কারণ জানতে চালডালের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে তিনদিনের সময় নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তিনদিন পরও পণ্য না দেয়ায় বিদেশি ওই ক্রেতা তার টাকা ফেরত চান। তাকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচদিনের মধ্যে টাকা ফেতর দেয়া হবে। কিন্তু ২১ দিন পার হওয়ার পরও টাকা ফেরত না দেয়ায় ওই ক্রেতা ভোক্তা-সংরক্ষণ অধিদফতরে লিখিত অভিযোগ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি করেন। এ সময় শুনানিতে ক্রেতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গ্রাহক প্রতারণার দায়ে ‘চালডাল ডটকম’কে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ওই ভিয়েতনামি নাগরিককে প্রদান করা হয়। তখন চালডাল ডটকম জানায়, তাদের কাছে পণ্যটি না থাকায় সময়মতো দিতে পারেনি। আগামীতে এ ধরনের ভুল হবে না। এক বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানটি একই ভুল বার বার করে যাচ্ছে। আর এ কারনে অনলাইন কেনাকাটায় আস্থা হারাচ্ছেন ক্রেতারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চালডাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। *এটি বিজটেক ২৪ ডটকমে প্রকাশিত। কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।