দুজন মানুষের ওপর দেশের ১২ কোটি মানুষের তথ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব থাকা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির (এনসিএসএ) মহাপরিচালক (ডিজি) আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান। রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ প্রশ্ন তুলেন।
সাইবার নিরাপত্তা খাতের সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবর ২০২৪-এর সমাপন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিসিএ) ও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) আয়োজনে রাজধানীর শুক্রাবাদে ড্যাফোডিল টাওয়ারের ৭১ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়। এনসিসিএর আহ্বায়ক ড. ইজাজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন এনসিএসএ মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিক্যাফের উপদেষ্টা লেখক ও অর্থনীতিবিদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ডিনেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাত হোসেন, মাসব্যাপী কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এফ ফাইভের ডিজিটাল টেরিটরি অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ আহসান হাবীব, শোফসের কান্ট্রি ম্যানেজার ও এনসিসিএর সদস্য আবুল হাসনাত মো. মহসীন, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান) শুভঞ্জন কৃষ্ণ ভট্টাচার্য।
আরও ছিলেন সিক্যাফের উপদেষ্টা আল ফারুক ইবনে নাজিম, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, সিক্যাফের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ ও অর্থ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম।
এনসিএসএ মহাপরিচালক বলেন, ২০১৮ সালে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন হওয়ার পরে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রথম এখানে আমি মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেই। এর আগের পাঁচ বছর ছিলাম অতিরিক্ত দায়িত্বে। এই দুই বছরে এখানে আছেন দুজন পরিচালক। আজ পর্যন্ত তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আমি পাইনি। আমার একজন সিস্টেম অ্যানালিস্ট আছে একজন প্রোগ্রামার ও অ্যাসিটেন্ট প্রোগ্রামার আছে। তাদের ওপরই সাইবার, ডাটা সব সুরক্ষার দায়িত্ব।
সরকারের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, একই অবস্থা জন্ম নিবন্ধনে। ওখানেও সাকুল্যে তিনজন আইটি প্রফেশনাল। একজন প্রোগ্রামার। একজন কনসালটেন্ট প্রোগ্রামার। এবং আরেকজ অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার। কনসালটেন্ট সবসময় থাকেন না। তাহলে দুজন মানুষের ওপর ১২ কোটি মানুষের তথ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব থাকা কতটা যৌক্তিক বলে প্রশ্ন তুলেন তিনি।
ফরমাল ১৫টি খাতেই সাইবার সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে কামরুজ্জামান আরো বলেন, এই মুহূর্তে যেমন সচেতনতা গড়তে হবে। গতকালও এর প্রয়োজনীয়তা ছিল। প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনশীল। তাই সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কার্যক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা এবার আমরা ৫৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অনলাইন হ্যাকাথন করেছি। এরমধ্যে নির্বাচিত হয়েছে ৩০টি। এদের নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এমআইএসটিতে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা হবে।
অর্থনীতিবিদ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার এবং সরকারী কর্মীদেরও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অধস্তনদের দিয়ে কাজ না করিয়ে নিজেকেই স্পর্শকাতর দায়িত্ব পালন করতে হবে। কখনোই তাদের কাছে নিজের পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না।
ডি-নেট নির্বাহী পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে ডিজিটাল অবকাঠামোর সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর। এরওপর এখনো আমরা অনেকেই ডেটা লিক ও ব্রিচ ঠিকভাবে বুঝি না। তাই প্রবলেম সলভিংয়ের (সমস্যা সমাধান) আগে এসব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
সুরঞ্জন কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ৩৯, ২৬ ও ৮২- এগুলো নিছক কোনো সংখ্যা নয়। প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বে একটি সাইবার হামলা হয়। ২৬ শতাংশ ওয়েবসাইট প্রতি মাসে কমপ্রোইজড হয়। ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে ৮২ শতাংশ ম্যালওয়্যার আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। তাই পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
অক্টোবর মাসজুড়ে ক্যাম ক্যাম্পেইনে অনলাইন কুইজ ও হ্যাকিং প্রতিযোগিতায় (হ্যাকাথন) বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। বিজয়ীরা হলেন- অনলাইন কুইজে প্রথম তাসমীন মুস্তারী তাজরী, দ্বিতীয় তামিম, যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন মেজবাউল বাহার ও মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। এছাড়া হ্যাকাথনে বিজয়ী হয়েছেন আবরার ফাহইয়াজ, মমিনুল ইসলাম হিমেল, তাসনিম কবির সাদিক; প্রথম রানার আপ- ইউসুফ আবদুল্লাহ ফাহিম, মারজিয়া সুলতানা জ্যোতি, ফারহানা মাহবুবা, দ্বিতীয় রানার আপ- সামিউল কোরেশী সৌরভ, মো. মমরুল হাসান, এম. উসামানুর রহমান বিপ্লব।
কুইজে বিজয়ীরা প্রথম পুরস্কার হিসেবে প্রথম স্মার্ট ওয়াচ, দ্বিতীয় পুরস্কার পাওয়ার ব্যাংক, তৃতীয় পুরস্কার নেক ব্যান্ড এবং হ্যাকাথনে বিজয়ীরা প্রথম পুরস্কার ১৫ হাজার, দ্বিতীয় পুরস্কার ১০ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা, সনদ এবং সম্মাননা স্মারক পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে আরও ছিল রবি আজিয়াটা পিএলসি, ভেন্যু পার্টনার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; আয়োজন সহযোগী ছিল মিডিয়া মিক্স কমিউনিকেশন্স ও সাইবার প্যারাডাইজ লিমিটেড।
সাইবার সচেতনতা গড়ে তুলতে শিশু থেকে পেশাদার পর্যায়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অক্টোবর মাসজুড়ে ক্যাম ক্যাম্পেইন করা হয়। এই মাসের চার সপ্তাহে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা প্রতিরোধ, সাইবার বুলিং এবং অনলাইনে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর কুইজ দিয়ে শুরু করে ১৯ অক্টোবরের হ্যাকাথন দিয়ে শেষ হয় মাসজুড়ে চলা সচেতনতা গড়ে তোলার বিশেষ উদ্যোগ।