অনেকেই শত্রুতা করে ফেসবুক হ্যাক করে। কিন্তু হ্যাক হলে কি করা যায়? অনেকেই এ বিষয়টি জানতে চান। প্রথম বিষয়টিই হচ্ছে ফেসবুকে নতুন করে আইডি পাসওয়ার্ড দিতে গিয়ে খেয়াল করতে হবে সেটি আসল ফেসবুক লগইন পেজ কিনা। এরপর ফেসবুকে অন্য প্রতিষ্ঠানের (থার্ড পার্টি) নতুন যেকোনো অ্যাপ ব্যবহারের সময় কী কী তথ্য ব্যবহারের অনুমতি চাইছে, তা যাচাই করে নিতে হবে, আর ফেসবুকে পোস্ট করার অনুমতি চাইলে সেটি বাতিল করে দিতে হবে।
মনে রাখবেন, হ্যাক হলেও আপনার ফেসবুক কিন্তু ফিরে পাবেন। এ জন সতর্ক থাকতে হবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে মনে হলে ফেসবুকের সাহায্য পাতা (www.facebook.com/help/hacked) থেকে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে পারেন এবং কী কী ধাপ অনুসরণ করে আবার অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া যাবে, তা-ও সেখানে পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি হ্যাকিং-সংক্রান্ত সব সাহায্যের জন্য দেখতে হবে www.facebook.com/hacked ঠিকানার পাতাটি। অ্যাকাউন্টে যে ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো ধাপে ধাপে নির্বাচন করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে।
সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। পরিবার , বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযেগের জন্য, বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন, তাদের জন্য ফেসবুকে যোগাযোগের বিকল্প নেই।কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক নিয়েও আতংকের শেষ নেই। আপনার সামান্য অসাবধানতার কারণে যে কোনো মুহূর্তে হ্যাক হতে পারে আপনার ফেসবুক। তাই ফেসবুক নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের সচেতন হতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন জটিল সমস্যা, মামলা করা, মামলার তদন্ত, পরামর্শ, হ্যাকার চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা ও হ্যাক হওয়া ফেসবুক উদ্ধারসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
ফেসবুকে যেসব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার ও সক্রিয় রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ব্যক্তিগত সব ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য ফেসবুক থেকেই পাওয়া সম্ভব। তাই তা যেন অন্য কারও হাতে যায়, সে বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা হলে হ্যাকিং-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব—
সকল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সক্রিয় রাখা (www.facebook.com/ settings?tab=security)।
ই-মেইল ও ফোন নম্বর নিশ্চিত করা। বেশি নিরাপত্তার জন্য দুই ধাপে লগ-ইন নিশ্চিত করা এবং লগ-ইন কোড জেনারেট অপশনটি ব্যবহার করা।
নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদলে ফেলা। পাসওয়ার্ডগুলো এমন হতে হবে যেন পরিচিত কেউ হলেও অনুমান করতে না পারে।
ই-মেইল, টুইটার বা অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে এমন অর্থাৎ এক পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার না করা।
সেটিংস-অ্যাপলিকেশন (www.facebook.com/settings?tab=applications) থেকে কী কী অ্যাপলিকেশন সক্রিয় আছে, তা যাচাই করে অপরিচিতগুলো মুছে ফেলা।
নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও সব সময় মনে রাখতে হবে, ফেসবুকে এমন কিছু কখনো শেয়ার বা আপলোড করা উচিত নয়, যা প্রকাশ পেলে নিজের ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
আইডি হ্যাক হয়েছে কিভাবে বোঝা যায়?
আইডি হ্যাক হয়েছে কিনা এ বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে। এক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলেই আমরা বুঝবো আইডি হ্যাক হয়েছে-
আপনার ইমেইল অথবা পাসওয়ার্ড চেঞ্জ হয়ে যাওয়া।
আপনার নাম অথবা তথ্য চেঞ্জ হয়ে যাওয়া।
আপনার অজান্তে কাউকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো।
কাউকে ম্যাসেজ পাঠানো, যা আপনি লেখেন নি।
কোন কিছু পোস্ট বা শেয়ার করা, যা আপনি করেন নি।
কি উপায়ে আইডি হ্যাক হতে পারেঃ
সাধারণত ২ টি উপায়ে আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হতে পারে। যেমন-
১) পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ও
২) ই-মেইল এড্রেস পরিবর্তন করে।
আইডি হ্যাক হলে কিভাবে একাউন্ট পুনরুদ্ধার করা যাবে?
ধরুন কেউ একজন আপনার অগোচরে আপনার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড জেনে গিয়েছে এবং আপনার একাউন্টে লগইন করে আপনার পুরাতন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করে দিয়েছে। এখন আপনি আর পুরাতন পাসওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে লগইন করতে পারবেন না।
নিচের ধাপ গুলো ফলো করলে সাথে সাথে একাউন্ট ফেরত পাওয়া যাবে। শুধু পুরাতন পাসওয়ার্ডটা মনে রাখতে হবে।
সর্ব প্রথম এই লিঙ্কে ঢুকতে হবে- http://www.facebook.com/hacked । এই লিঙ্কে ঢুকলে Report Compromised Account নামে একটি পেইজ দেখা যাবে। এবার My account is compromised এই বাটনে ক্লিক করতে হবে।
Identify Your Account থেকে একাউন্ট শনাক্ত করতে Email or phone number কিংবা Facebook username অথবা your name and a friend’s name এই তিনটি অপশানের যেকোন একটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে SEARCH বাটনে ক্লিক করুন
প্রদত্ত তথ্য সঠিক হলে লেখা আসবে- This is My Account। এখন This is My Account এ ক্লিক করতে হবে।
ওপরে ক্লিক করার পর পুরাতন পাসওয়ার্ডটি চাইবে এভাবে- Enter a Correct or Old Password।
এখানে পুরাতন পাসওয়ার্ড দিয়ে কন্টিনিউ করতে হবে। এরপর একটা কনফার্মেশন মেসেজ আসবে। তার পরে কন্টিনিউ করে পরের স্টেপগুলি পার করতে হবে। পরের স্টেপে কাছ থেকে একটি নতুন পাসওয়ার্ড চাওয়া হবে। পরের ফর্মগুলো ঠিকঠাক ফিলাপ করলে ফেসবুক থেকে একাউন্ট আবার ফেরত পাওয়া যাবে।
ফেসবুক আইডিতে ব্যবহার করা ই-মেইল ও ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড ভিন্ন রাখা উচিৎ। কারণ হ্যাকাররা সাধারণত ফেসবুক হ্যাক করার পর ই-মেইল এড্রেস বদলে ফেলে। আর ই-মেইল এড্রেস বদলে ফেলতে পারলে হ্যাকিং হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া কঠিন। হ্যাকিং হওয়া অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের একমাত্র উপায় হলো ই-মেইল এড্রেস।
এভাবেই আশা করা যায় হ্যাক হওয়া আইডি ফেরত পাওয়া যাবে। যদি এই দুই পদ্ধতিতেও কাজ না হয় সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টটি চিরতরে ডিলিট করে দেবার অপশন আছে।
আইডি হ্যাক হলে কিভাবে একাউন্ট ডিলিট করা যাবে?
১। একাউন্ট এর উপরে ডানকোনায় এখানে ক্লিক করতে হবে।
২। Report/block ক্লিক করতে হবে।
৩। ‘This is my old profile’ এ ক্লিক করে নিচের অপশনগুলো থেকে ‘close this account’ সিলেক্ট করতে হবে। সঠিকভাবে রিপোর্ট করা হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ প্রোফাইল রিভিউ করবে এবং সত্যিই তা রিপোর্টকারীর আগের প্রোফাইল বলে প্রমানিত হলে একাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে।
বি. দ্র. বর্তমান একাউন্ট এর ফ্রেন্ডলিস্ট এ আগের একাউন্টটি থেকে থাকলে ‘This is my old profile’ অপশনটি পাওয়া যাবেনা। রিপোর্ট করার আগে তাই অবশ্যই আগের একাউন্টটি ‘আনফ্রেন্ড’ করে নিতে হবে।
আইনি সহায়তা
সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। পরিবার , বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযেগের জন্য, বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করেন, তাদের জন্য ফেসবুকে যোগাযোগের বিকল্প নেই।
কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক নিয়েও আতংকের শেষ নেই। আপনার সামান্য অসাবধানতার কারণে যে কোনো মুহূর্তে হ্যাক হতে পারে আপনার ফেসবুক। তাই ফেসবুক নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের সচেতন হতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন জটিল সমস্যা, মামলা করা, মামলার তদন্ত, পরামর্শ, হ্যাকার চিহ্নিত করা, গ্রেফতার করা ও হ্যাক হওয়া ফেসবুক উদ্ধারসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে সমস্যায় যেভাবে সহায়তা দেবে পুলিশ :
হেল্প ডেস্ক :
ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো সমস্যায় আপনি সিসিটিসি’র ক্রাইম বিভাগের হেলফ ডেস্কের সহায়তা নিতে পারেন। হেল্প ডেস্কের রয়েছে দুটি মোবাইল নম্বর। পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য আপনি ফোন করতে পারেন-০১৭৬৯৬৯১৫০৯ অথবা ০১৭৬৯৬৯১৫০৯ নম্বরে। সিসিটিসি’র এই হেল্প ডেস্ক আপনাকে সহায়তা দেবে সপ্তাহে সাত দিন।
পরামর্শ :
আপনার অভিযোগটি শোনার পর পুলিশ আপনাকে পরামর্শ দেবে আপনি কী করবেন। যদি মামলা করতে হয়, তবে আপনাকে সহযোগিতা করবে পুলিশ।
ফেসবুক উদ্ধার ও হ্যাকার চিহ্নিত :
সিসিটিসি’র এই বিভাগটি আপনাকে ফেসবুকসহ যেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে তা যদি হ্যাক হয়, তবে তা উদ্ধারে সহযোগিতা করবে। এছাড়া হ্যাকার চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
মামলা ও মামলা তদন্ত :
হ্যাকার ধারই শেষ নয়, আপনাকে আইনি সহায়তা দেবে পুলিশ। যেমন আপনার ফেসবুক উদ্ধারে হ্যাকারের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্ত করবে পুলিশ।
গোপনীয়তা রক্ষা :
পুলিশ আপনাকে সহায়তা দেবে এবং মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আপনার সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
স্বশরীরে যোগাযোগ :
সমস্যা জটিল হলে আপনি স্বশরীরে সিসিটিসি’র সাইবার ক্রাইম বিভাগে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। যোগাযোগ করার জন্য প্রথমে উপরে উল্লিখিত নম্বরে ফোন দেয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরে স্বশরীরে যোগাযোগ করতে হবে।
নারী পুলিশের সহায়তা :
সিসিটিসি’র সাইবার ক্রাইম বিভাগে নারীদের পরামর্শ দেয়া, মামলা তদন্ত ও সব প্রকার আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য নারী পুলিশ রয়েছেন।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক ও যুগান্তর।