গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে ০৯টি (নয়) কোম্পানিকে প্লট বরাদ্দ প্রদান করেছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয় । আগামী ৪০ (চল্লিশ) বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-তে রবি অজিয়াটা, জেনেক্স, বিজেআইটি সফটওয়্যার, ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স, কেডিএস গ্রুপ, ইন্টারক্লাউড, বিজনেস অটোমেশন, নাজডাক টেকনোলজিস এবং জেআর এন্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ বিনিয়োগের সুযোগ পেলো।
বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে সফটওয়্যার কোম্পানি ক্যাটাগরিতে দেড় একর জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। কোম্পানিটি এখানে আইটি/আইটিইএস, ডিজিটাল সার্ভিস মেনুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি এবং হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করতে ২.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ১১০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে।
ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান সামস্যাং-এর বাংলাদেশী ডিস্ট্রিবিউটর। প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ৩.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে তারা ইলেক্ট্রনিক্স, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার (ল্যাপটপ, কমিউনিকেশন ডিভাইস ইত্যাদি) উৎপাদন করতে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং দেশী-বিদেশী মোট ২৫০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে।
বিজেআইটি বাংলাদেশ এবং জাপানী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। বিশ্বের অনেক দেশেই প্রতিষ্ঠানটির অফিস রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ২.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, মোবাইল এপ্লিকেশন, আইওটি সার্ভিস, ওয়েব এপ্লিকেশন সার্ভিস, টেস্টিং সার্ভিস, অটোমেশন টেস্টিং সার্ভিস, বৈশ্বিক বাজারের জন্য আইটি কনসালটেন্সিসহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ২০২৩ সালের মধ্যে ৪,০০০ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে।
কেডিএস গ্রুপ মূলত বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর, স্টিল ইন্ডাস্ট্রি, আইটিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাদেরকে ৩.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিপিও, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডাটা সেন্টার ইত্যাদি কার্যক্রম করতে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং ৫০০০ জনেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইন্টারক্লাউড প্রতিষ্ঠানটি দেশের আইটি খাতে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। প্রতিষ্ঠানটিকে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ৩.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ২১.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ৭৭০ জনের কর্মসংস্থানে সৃষ্টি করবে।
জেনেক্স ইনফোসিস লি. দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিপিও খাতে ব্যবসা পরিচালনাকারী একটি কোম্পানি। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে টেকনোলজি কমপ্লেক্স সংক্রান্ত (ডাটা সেন্টার, টিওটি রিসার্চ, আউটসোর্সিং ইত্যাদি) কাজ করার জন্য ২.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ১০,০০০ জনের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে।
নাজডাক টেকনোলজিস লি. বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে মিনি পিসি এসেম্বলিং ও বিক্রি, আইটি রিলেটেড টেকনিক্যাল ট্রেনিং এবং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটিকে ২.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। তারা ৬১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ৩৬০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
জেআর এন্টারপ্রাইজ বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে ডাটা সেন্টার, ট্রেনিং সেন্টার ও ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করবে। তাদেরকে ২.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ১১০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বিজনেস অটোমেশন লি. ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে স্পেস বরাদ্দ নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের কার্যক্রম বৃহৎ পরিসরে করার লক্ষ্যে আরো ২.০০ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৫.০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সেইসাথে ১০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে যে ৯টি কোম্পানি এখানে ২০.৫০ একর জমি বরাদ্দ পেলো, তারা হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, আইওটি, বিপিও, ট্রেনিং সেন্টার, ডাটা-সেন্টার, R&D প্রভৃতি উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে যা এই হাই-টেক পার্কে প্রায় ২৫,০০০ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। কোম্পানিগুলো এখানে প্রায় ১৪০.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি দেশের প্রথম হাই-টেক পার্ক। এখানে কাজ শুরু করার জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রাপ্ত ২৩২ একর জমিকে ০৫ টি ব্লকে ভাগ করে ডেভেলপার নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে পার্ক সংলগ্ন ৯৭.৩৩ একর জমি বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বরাদ্দ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরাসরি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হলো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতায় নির্মিত/নির্মিতব্য হাই-টেক পার্ক সমূহে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটে গত ০২.০৯.২০১৮ তারিখে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে লন্ডনে সেমিনার, রোডশো-সহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমির উপর স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি” বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ফ্লাগশিপ প্রকল্প। এ পার্কে প্রায় ১,০০০০০ (এক লক্ষ) লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। হাই-টেক পার্ক/সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কগুলো সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি পণ্য রপ্তানী মূল কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠবে। ইতোমধ্যে জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হতে বিভিন্ন কোম্পানী বিদেশে সফটওয়্যার রপ্তানি করছে।