সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় কোনো বস্তুর ধারণা করেছিলেন প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স– এআই) ছিল মানুষের ইতিহাসে যুগে যুগে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ধারণাগুলোর মধ্যে একটি। বিগত বছরগুলোয় এআই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে; আর বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকেও কল্পনাতীতভাবে প্রভাবিত করছে। তার ওপর, টেলিভিশন প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের বিনোদনের অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করছে এ প্রযুক্তি।
ইন্টারন্যাশনাল কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস শো (সিইএস) ২০২৪-এ বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের টেলিভিশনে থাকা এআই সক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে। নয়েজ কমানো, ইমেজে থাকা আগ্রহের বিষয়গুলোকে চিহ্নিত ও আলাদা করা এবং দেখার ক্ষেত্রে অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কালার ও কনট্রাস্টের সমন্বয়ের মতো টিভি ফিচারগুলোতে এআই কীভাবে ভূমিকা রাখে তা তুলে ধরেন তারা।
এআই হাই ডায়নামিক রেঞ্জের টিভি শো ও মুভির ক্ষেত্রে এইচডিআর টোন ম্যাপিং অপ্টিমাইজ করতে সক্ষম। এমনকি এইচডিআর ফরম্যাটে না থাকা পুরোনো মুভি ও শোগুলোকে রি-মাস্টার করার ক্ষেত্রেও এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে ভিডিও সিগনাল বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে ফোর-কে’র কাছাকাছি মান এবং আসল রেজ্যুলুশনের চেয়েও নিখুঁত ছবি নিশ্চিত করতে সক্ষম এআই।
তার ওপর, এআই-নির্ভর অ্যাডাপ্টিভ সাউন্ড টেকনোলজি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাউন্ড সেটিংস বাড়ানোর ক্ষেত্রে অডিও’র পরিবেশ ও কনটেন্ট মূল্যায়ন করার সক্ষমতা রাখে। এ ধরনের ফিচার সংলাপ নিখুঁতভাবে তুলে ধরা এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের সাউন্ড ভারসাম্যপূর্ণ রাখার মধ্য দিয়ে দর্শকের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। এরকম অনন্য অডিও ও ভিজ্যুয়াল ফিচার মানুষের মন জয় করে নিতে যথেষ্ট।
টেলিভিশনে এআইয়ের প্রভাব কেবল সাউন্ড বা ভিজ্যুয়ালের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়; বরং একইসাথে এটি ব্যবহারকারীর জীবনযাপন ও বিনোদনের অভিজ্ঞতাকেও সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যেমন, নিউরাল কোয়ান্টাম এআই প্রসেসর-সমৃদ্ধ স্যামসাংয়ের ডি-সিরিজের টেলিভিশন, যা কী ধরনের কনটেন্ট দেখা হচ্ছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে সে অনুযায়ী পিকচার সেটিংস সাজিয়ে নিতে পারে। ফলে, এখন পছন্দের কনটেন্ট হাতে ধরে ধরে ঠিক করার ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে আয়েশ করে টিভিতে যেকোনোকিছু উপভোগ করা যাবে। এমনকি, এধরনের টিভিতে কী ধরনের গেমস খেলা হচ্ছে তা-ও শনাক্ত করতে পারে এআই; পাশাপাশি, এটি জনরার সাথে মিলিয়ে সেটিংস অপ্টিমাইজ করে নিতেও সক্ষম।
টিভিতে এআই থাকার মানেই হচ্ছে কনটেন্ট রিকোমেন্ডেশনের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা। এআই অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর দেখার অভ্যাস ও আগ্রহের জায়গাগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম। ফলে, এটি ব্যক্তি-নির্ভর কনটেন্ট সুপারিশ করে থাকে। ঠিক যেন কোনো ব্যক্তিগত টিভি গাইড, যা আপনার পছন্দ মতো নতুন মুভি বা শো খুব সহজেই খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। বলা চলে, ভালো মুভি ও শো খুঁজে পেতে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে অনবরত স্ক্রলিংয়ের ঝামেলাকে এখন বিদায় বলার সময় এসেছে!
টিভিতে এআই স্মার্ট হোম ইন্টিগ্রেশনে ব্যবহারকারীদের সাহায্য করতে পারে। এআই প্রযুক্তি নির্বিঘ্নে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত সকল ডিভাইস পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তার ওপরে, এআই এনার্জি মোড স্বয়ংক্রিয়ভাবে আশেপাশের আলোর মাত্রা সনাক্ত করতে সক্ষম। এটি পিকচার ব্রাইটনেস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ করতে পারে। সবমিলিয়ে এটি বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে, এখন চোখের সুরক্ষার পাশাপাশি, বিদ্যুৎও সাশ্রয় করা সম্ভব।
গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করতে এবং নিজেদের পারফরমেন্স সমৃদ্ধ করতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও বেশি ব্যক্তিগত ও পছন্দসই করে তোলার সক্ষমতা রয়েছে এআই প্রযুক্তির। ডিজিটাল ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী-বান্ধব নতুন যুগের সূচনায় কনটেন্ট নির্মাতাদের সহায়তা করতে পারে এআই-সমৃদ্ধ টিভি।
এআই ইতোমধ্যে আমাদের জীবনযাত্রাকে অনন্য করে তুলেছে। আর এখন এটি আমাদের টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকেও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।