TechJano

বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসে আতাউর রহমান কাবুল পেলেন বিশেষ সম্মান

ডাউন সিনড্রোম শিশু ও ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা, গ্রহনযোগ্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে অবদান রাখার জন্য বিশেষ সম্মাননা পেলেন কালের কণ্ঠর সহ সম্পাদক আতাউর রহমান কাবুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার (সামাজিক বৈকল্য) বিভাগ ও ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশ তাকে এ সম্মাননা জানায়। বুধবার ১৩ তম বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান তার হাতে সম্মাননা ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক প্রফেসর ড. এম. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ভূ-তত্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সরদার এ. রাজ্জাক, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সরদার এ. নাঈম প্রমূখ। সম্মাননা প্রাপ্ত অন্যরা হলেন চট্রগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মাহফুজুল হক চৌধুরী, জাপান বাংলাদেশ হসপিটালের প্রয়াত পরিচালক মাহবুবুল আলম বাবু (মরনোত্তর), আরটিভির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সৈয়দা মুনিরা ইসলাম, ও ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ফয়সাল মাববুব। প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সম্মাননা দেয়া হয় চ্যানেল আই, কাফকো, বিএসআরএমকে।
বুধবার ১৩ তম বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে কেন্দ্রিয় ছাত্র শিক্ষক (টিএসসি) মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হাকিম আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ, ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশ, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল ও আমদা বাংলাদেশে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ডাউন সিনড্রোম কোন রোগ বা অক্ষমতা নয় বরং এটি শরীরের একটি জেনেটিক ত্রু“টির কারণে এসব শিশু জন্ম নেয়। মানুষের দেহে প্রত্যেকটি কোষে ক্রোমোজোমের সংখ্যা ৪৬ টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১ তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম থাকে যাকে ‘Trisomy 21’ বলা হয়। তবে ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তিদের বিশেষ কোনো চাহিদা নেই। তারা সমাজের বোঝা নয়। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ, ল্যাংগুয়েজ ও ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে তারা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মত পড়ালেখা করে স্বনির্ভর হতে পারে। তাদেরকে মূলধারার জনগোষ্ঠির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে দরকার শিক্ষা, চাকরি, সুযোগ, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা তথা বাড়তি একটু যত্ন। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে ডাউন সিনড্রোমে মা বাবার কোন ভূমিকা নেই। এটা পারিবারিক ঐতিহ্যের কোন দোষ নয়। এটা কারো কার্পণ্য বা অভিশাপেরও ফল নয়। তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মানবিক মূল্যবোধ ও চেতনার বিকাশ ঘটাতে তথা একটি মানবতাবাদী সমাজ বিনির্মাণে বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস উদযাপন নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এই আয়োজনের অংশিদার হতে পেরে গর্বিত। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এ ধরণের একটি অংশীদারমূলক, সার্বজনীন সমাজ বিনির্মাণের প্রয়াসে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হাকিম আরিফ বলেন, সকল শ্রেনীর মানুষকে নিয়ে আমাদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাই ডাউন সিনড্রোম নিয়ে আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সচেতনতা ও ভালবাসা দিয়েই সমাজে তাঁদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. সরদার এ নাঈম বলেন, যেহেতু ডাউন সিনড্রোম কোন রোগ নয় তাই এটি নিরাময় হবার কোন সুযোগ নেই। আলট্রাসাউন্ড করে কিংবা রক্ত ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, গর্ভস্থ শিশুর ডাউন সিনড্রোম রয়েছে কিনা। নানা পরিচর্যার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
ডাউন সিনড্রোম সোসাইটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সরদার এ. রাজ্জাক বলেন, তাদেরকে মূলধারার জনগোষ্ঠির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শিক্ষা, চাকরি, সুযোগ, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা তথা বাড়তি একটু যত্ন দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে ‘দি ডাউন সিনড্রোম ভয়েস’ নামে একটি নিয়মিত ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দেয়া হয় পুষ্টিবিদ কর্তৃক শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ। শেষে ছিলো ডাউন সিনড্রোম শিশুদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Exit mobile version