বৃষ্টিস্নাত রাত কিংবা দুপুর। হালকা গরম কফি আর ল্যাপটপের সাই-ফাই মুভি না হলে অনেকের রাত কাটে না। কিন্তু কোন মুভি দেখবেন অনেকেই ভেবে পান না। মুডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাতভর দেখে নিতে পারেন কিছু মুভি যা আপনার মস্তিষ্কে নতুন ভাবনার উদ্রেক করবে। মনে আনন্দ আর রোমাঞ্চ দেবে। তা কোন মুভিগুলো আপনার রাতের সঙ্গী হতে পারে?
কতগুলো সাই-ফাই মুভির সাজেশন দিতে পারি। এর অনেকগুলো আপনি হয়তো দেখেছেন। কিন্তু আবার দেখুন। খারাপ লাগবে না।
দ্য মার্শিয়ান
দ্য মার্শিয়ান : এক মানবিক সহায়তা, অসীম সাহস ও অফুরান প্রাণশক্তির গল্প
মার্ক ওয়াটনি নাসার একজন উদ্ভিদবিঙ্গানী ও নভোচারী। ওয়াটনি ও তার সঙ্গীরা মঙ্গল গ্রহ এ এরিস ৩ নামক এক অভিযান এ যায়। কিন্ত প্রবল বালুঝড় এর কবলে পড়ে তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কিন্ত ফিরে আসার সময় তারা মার্ককে হারিয়ে ফেলে, মৃত ভেবে তাকে ফেলেই চলে আসে পৃথিবীতে। কিন্তু মার্ক বেঁচে যায় এবং চেতনা ফিরে নিজেকে লাল গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশে একাকী অবস্থায় আবিষ্কার করে। নেই কোন পানি নেই কোন খাবার। তাই টিকে থাকার জন্য তাঁকে কাজে লাগাতে হয় নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর প্রবল সাহসী বুদ্ধিমত্তা। তিনি সেখানে নিজের জানা প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে খাবার চাষ করতে থাকেন এবং একটি বাসস্থানও তৈরি করে ফেলেন। একপর্যায়ে তিনি পৃথিবীতে সংকেত পাঠানোর একটা উপায় বের করে ফেলেন এবং জানিয়ে দেন, আমি বেঁচে আছি। মঙ্গল থেকে বহু দুরে পৃথিবীতে নাসার একদল কর্মী চেস্টা করতে থাকে তাকে পৃথিবীতে ফেরত আনতে। তারা কি সফল হবে? মার্ক ওয়াটনি কি ফিরে আসতে পারবে তার নিজ বাসস্থান এ। এটুকু জানতে হলে আপনাকে মুভি দেখতেই হবে।
গল্পটি এমন এক জায়গার, যা শুধু ছবিতেই দেখা সম্ভব। আর ছবিগুলো আছে কেবল নাসার কাছে। তাই নাসার সাহায্য ছাড়া ছবির পাত্রপাত্রীর হাঁটাচলা করা দুঃসাধ্য। নাসা কর্তৃপক্ষ গল্প শুনে আগ্রহ দেখিয়েছে এ কারণে যে তারাও প্রায় একই রকম গবেষণা চালাচ্ছে এখন। বিষয়টি হলো-মানুষ কিভাবে মঙ্গল গ্রহে জীবনধারণ করবে। তাই তারা সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করা শুরু করে।
ছবিটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৪-র ২৪ নভেম্বর। হাঙ্গেরি ও জর্দানের ছয়টি জায়গা বেছে নেওয়া হয় লোকেশন হিসেবে। আর সেগুলো হলো-ওয়াদি রাম (জর্দান), বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি), কোর্ডা স্টুডিও ( হাঙ্গেরি), বুদারস এয়ারপোর্ট ( হাঙ্গেরি) এবং জর্দান ও হাঙ্গেরির আরো কিছু অংশ। সবচেয়ে বেশি চিত্রায়িত হয় কোরদা স্টুডিওতে।
এক নজরে মার্শিয়ান
* মূল গল্পটিকে বলা হয় ‘বিজ্ঞানের প্রেমপত্র’।
* ছবিটি রিলিজ হওয়ার আগের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল নাসার অনুমতি।
* মোট ৭৫ দিন শুটিং হয়েছে।
* নায়ক ম্যাট ডেমনের পোশাক তৈরিতে সময় লেগেছে ১৫ দিন। খেটেছে ছয়জন কর্মী।
* ছবিতে আলু চাষের দৃশ্যটি স্টুডিওর ভেতরে নিয়মমাফিক করা।
* মুভিং পিকচার কম্পানি স্পেশাল এফেক্টের দায়িত্বে ছিল। তারা প্রায় ৪০০টি এফেক্ট তৈরি করে।
* রেড এপিক ড্রাগন, প্যানাভিশন প্রিমো, এঞ্জিনাক্স আর গো প্রো ক্যামেরা দিয়ে চিত্র ধারণ করা হয়েছে।
* ছবিটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
* ১৪১ মিনিটের ছবিটি অক্টোবরের ২ তারিখে মুক্তি পায়।
ওয়াল-ই
ওয়াল-ই (ইংরেজি: WALL-E) ২০০৮-এ মুক্তি পাওয়া আমেরিকান সিজিআই সায়ন্স ফিক্সন হাস্যকৌতুকমুলক অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র যা প্রযোজনা করেছে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও এবং পরিচালনা করেছেন এন্ড্রু স্টান্টন। এই চলচ্চিত্রটি মূলত ওয়াল-ই নামের একটি রোবটকে নিয়ে যাকে প্রোগ্রাম করা হয়েছে আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য। সে ভালোবাসায় পরে ইভ্ নামের এক রোবটের সাথে যাকে মহাকাশ থেকে মানুষেরা পাঠিয়েছে পৃথিবীতে প্রাণের অনুসন্ধানের জন্য। এই কার্যক্রম চলার মধ্যেই ওয়াল-ই ও ইভ্ রোমাঞ্চকর অভিযানে জড়িয়ে পরে। ফাইন্ডিং নিমু চলচ্চিত্র তৈরির মাধ্যমেই এন্ড্রু স্টানটন পিক্সারে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন।
ওয়াল-ইকে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স ২০০৮-এর ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যৌথভাবে মক্তি দেয়। এটি প্রথম দিনেই ২.৩২ কোটি ডলার এবং প্রথম সপ্তাহে ৬.৩১ কোটি ডলার আয় করে, যা একে বক্স অফিসের র্যাঙ্কে ১ নাম্বারে নিয়ে যায়। এটি বক্স অফিসের ৫ম চলচ্চিত্র যা মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই এত আয় করে। ওয়াল-ইকেও পিক্সারের অন্যান্য চলচ্চিত্রের মতো একটি স্বল্প দীর্ঘের চলচ্চিত্রের সাথে যুগ্ম ভাবে মুক্তি দেয়া হয়।
অ্যান্ট ম্যান (Ant-Man)
এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে স্কট ল্যাং (পল রাড) এর। নিজেকে আকারে ছোট করে শক্তি বাড়িয়ে নিতে পারে সে। তার নিজের ভিতরের নায়ক সত্তাটিকে জাগিয়ে তুলে তার মেন্টর ড. হ্যাংক পিমকে (মাইকেল ডগলাস) সাহায্য করতে হবে তার। তার অবিশ্বাস্য অ্যান্ট-ম্যান স্যুটের পিছনের গোপন কাহিনী হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে। পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য শক্তিশালী বাধার মুখে ল্যাং এবং পিমকে কিছু একটা পরিকল্পনা করতে হবে।
ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড (Mad Max: Fury Road)
ম্যাড ম্যাক্সকে তার ভয়ঙ্কর অতীত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ম্যাড ম্যাক্স বিশ্বাস করে টিকে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একা একা ঘুরে বেড়ানো। তারপরও সে যুদ্ধনেতা ফিউরিওসা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এমন একটি দলের সাথে মিশে যায়। ইমমরটান জো আক্রান্ত একটি দুর্গ থেকে তারা পালাচ্ছিল। জো এর কাছ থেকে মূল্যবান কিছু একটা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধনেতা মারাত্মক ক্ষেপে গিয়ে তার সব গ্যাংগুলিকে একত্রিত করে বিদ্রোহীদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু করে।
২০১৪ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য মেজ রানার’ ছবিটি। ‘মেজ রানার: দ্য স্কর্চ ট্রায়ালস’ সেই ছবিটির সিক্যুয়াল। প্রথম ছবিটির মতো সিকুয়েল পর্বটিও পরিচালনা করেছেন ওয়েজ বল। ডিলান ও’ব্রায়ান, কি হং লি, প্যাট্রিসিয়া ক্লার্কসনদের সঙ্গে এই পর্বে যুক্ত হয়েছেন রোজা স্যালাজার, জ্যাকব লফল্যান্ড, এইডেন গিলেন, বেরি পিপার, লিলি টেলর প্রমুখ। মেজ রানারের এই পর্বে থমাস (ডিলান ও’ব্রিয়েন) ও গ্লেডার্স এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন চ্যালেন্জের মুখোমুখি হয়। শক্তিশালী ও রহস্যময় সংগঠন WCKD এর সূত্র খুঁজতে থাকে তারা। তাদের এই অনুসন্ধান তাদেরকে স্কর্চে নিয়ে যায়, সেখানে তারা অকল্পনীয় বাধার মুখোমুখি হয়। প্রতিরোধ বাহিনী মিলে গ্লেডার্স WKC’র ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার কথা জানতে পারে। খারাপ লাগবে না।
দ্য রেভানেন্ট (The Revenant)
ছবিটির কাহিনী সত্য ঘটনা অবলম্বনে। কিংবদন্তী শিকারী হিউ গ্লাসের (ডি ক্যাপ্রিও) কাহিনী দ্য রেভানেন্ট। হিউ গ্লাসকে ভাল্লুক আক্রমণ করে এবং তার দলের লোকেরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। টিকে থাকার চেষ্টায় মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয় গ্লাসকে। তাছাড়া তার বিশ্বস্ত সহচর জন ফিটজেরাল্ড (টম হার্ডি) বিশ্বাসঘাতকতা করে তার সঙ্গে। নিজের প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসাই মারাত্মক শীতে গভীর বনের মধ্যে গ্লাসকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার শক্তি জোগায়।
ইন দ্য হার্ট অব দ্য সী (In the Heart of the Sea)
১৮২০ সালের শীতের সময় নিউ ইংল্যান্ডের তিমিশিকারী জাহাজ এসেক্সকে ম্যামথ আকৃতির একটি তিমি আঘাত করে। তিমিটি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য জাহাজটিকে আঘাত করে। জাহাজের ক্রুরা অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। ঝড়, অনাহার, আতঙ্ক, হতাশা সব মিলিয়ে জাহাজের ক্রুদের নৈতিকতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। খোলা সমুদ্রে জাহাজের ক্যাপ্টেন দিক খুঁজতে থাকে আর তার ফার্স্ট মেট বিশাল আকৃতির তিমিটিকে বশে আনার চেষ্টা করে।
তথ্যসূত্র: অনলাইনের বিভিন্ন সূত্র।