ফেসবুক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে মার্ক জাকারবার্গ ক্ষমা চেয়েই যাচ্ছেন। তরুণতম বিলিয়নিয়ারের যে খেতাব তাঁর ঝুলিতে, তার সঙ্গে হয়তো যোগ হতে পারে ‘প্রযুক্তিজগতের সবচেয়ে বেশিবার ক্ষমা চাওয়া ব্যক্তি’র খেতাব।
গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারকদের সামনে ক্ষমা চেয়ে এসেছেন। কারণ ছিল, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা। একই ঘটনায় তিনি মার্কিন কংগ্রেসেও ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা অবশ্য তিনি ফেসবুক প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই চেয়ে যাচ্ছেন।
নভেম্বর ২০০৩
ফেসবুক বা দ্য ফেসবুক ডটকম চালুর মাস তিনেক আগে ফেসম্যাশ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন মার্ক জাকারবার্গ। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সার্ভার থেকে শিক্ষার্থীদের ছবি সংগ্রহ করেন তিনি। সেসব ছবি ফেসম্যাশ ওয়েবসাইটে আপলোড করেন। সে ছবিগুলোতে চেহারা দেখে রেটিং জানানোর সুযোগ রাখা হয়। ওয়েবসাইটটি চালুর আধ ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে সবার নজরে আসে। জাকারবার্গ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেন সেই ওয়েবসাইট। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কানেও পৌঁছে যায় সে কথা। ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হয় জাকারবার্গকে। নিজের কৃতকর্মের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান তিনি। সেবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যা করতে চেয়েছিলাম, বিষয়টা আসলে তেমন নয়।’
ডিসেম্বর ২০০৭
ফেসবুক প্রতিষ্ঠার বছর তিনেকের মধ্যে আবারও ক্ষমা চান জাকারবার্গ। ২০০৬ সালে ফেসবুকের নিউজফিড নতুনভাবে সাজানো হয়। তবে এর মধ্যে একটি সুবিধা ছিল, ব্যবহারকারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে থার্ড-পার্টি ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ঢোকা যেত। তবে তার আগে যে ব্যবহারকারীর অনুমতি নিতে হয়, সে কথা কি ভুলে গিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ? এত বড় ভুলের ক্ষমা চেয়ে জাকারবার্গ বলেছিলেন, ‘আমরা খুব বাজে একটা কাজ করেছি, এর জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’
মে ২০১০
ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন না হওয়ায় আবারও সমালোচনায় আসে ফেসবুক। ফেসবুকের বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিশেষ ইউজার আইডি দিত প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিজ্ঞাপনদাতারা সহজেই তাদের সম্ভাব্য গ্রাহক খুঁজে পেত। তবে তা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার নীতিমালাবিরোধী বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে প্রযুক্তি অঙ্গনে। ফলাফল, আবারও জাকারবার্গের সর্বসাধারণের উদ্দেশে ক্ষমা প্রার্থনা।
সেপ্টেম্বর ২০১০
মার্ক জাকারবার্গের পুরোনো কিছু খুদে বার্তার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাতে তাঁকে আগের ফেসবুক সদস্যদের ছোট করে কথা বলতে দেখা যায়। তবে নিজের মতামতের পক্ষে থাকলেও ক্ষমা ঠিকই চান জাকারবার্গ।
নভেম্বর ২০১৬
২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোতে ভুয়া খবর ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সহযোগিতা করতে ফেসবুক এমনটা করেছে বলে অভিযোগ আসে। জাকারবার্গ এমন ধারণার বিরুদ্ধে কথা বলেন। তবে ভুয়া খবর রোধে ফেসবুকের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান তিনি।
সেপ্টেম্বর ২০১৭
আবারও ফেসবুকে ঘৃণা ও নেতিবাচক মন্তব্যের আধিক্য দেখা দেয়। এবং আবারও ফেসবুক তা দ্রুত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। জাকারবার্গ আবারও ক্ষমা চেয়ে লিখেছিলেন, ‘এ বছর ফেসবুকের কারণে যাঁরা কষ্ট পেয়েছেন, আমি তাঁদের সবার কাছেই ক্ষমা চাচ্ছি।’
অক্টোবর ২০১৭
ফেসবুকের স্পেসেস ভিআর সুবিধা প্রকাশের সময় ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে ফেসবুকে লাইভ করেন জাকারবার্গ। সেই লাইভে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করে। এর কয়েকটিতে জাকারবার্গ বেশ রাগান্বিত হয়ে উত্তরও দেন। তবে শিগগিরই নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কেউ রাগ করলে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।