গ্রাহকরা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন? মোবাইলে ভয়েস কলরেট নতুন করে নির্ধারিত (সর্বনিম্ন সীমা ৪৫ পয়সা এবং সর্বোচ্চ সীমা ২ টাকা) হওয়ার পর থেকে গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন তারা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। তাদের টাকা বেশি কাটছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, পরিবর্তিত কলরেটে কথা বলায় খরচ বেড়েছে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, ভয়েস কলে খরচ তো বাড়েইনি, বরং ভবিষ্যতে আরও কমবে।
অপারেটররা বলছে, ভয়েস কলের খরচ নিয়ে এখনও কথা বলার মতো সময় হয়নি। মাত্র কিছু কিছু প্যাকেজ চালু হচ্ছে। আগামী তিন মাস পরে হয়তো কিছুটা বোঝা যাবে। আর মাস ছয়েকের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ চিত্র গ্রাহকের সামনে থাকবে। তখন গ্রাহক নিশ্চিতভাবে দেখতে পাবেন, কথা বলার খরচ ৮ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। নম্বর না বদলে অপারেটর চালুর পদ্ধতি বা এমএনপি (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) চালু হলে গ্রাহক পার্থক্যটা বেশি করে বুঝতে পারবেন।
বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। ওই প্রতিবেদেন বলা হয়, নতুন হার অনুযায়ী মোবাইল অপারেটরগুলো ৪৫ পয়সার নিচে কোনও কলরেট নির্ধারণ করতে পারবে না। এই কলরেট সর্বোচ্চ ২ টাকা পর্যন্ত হতে পারবে। এর আগে বিটিআরসি’র নির্ধারণ করে দেওয়া সর্বনিম্ন অননেট (একই অপারেটরের মধ্যে কল) চার্জ প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা ও অফনেট (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল) ছিল ৬০ পয়সা। সর্বোচ্চ চার্জ ছিল প্রতিমিনিট ২ টাকা। মোবাইল ফোন অপারেটররা এই সীমার মধ্যে থেকে নিজেদের অপারেটরের চার্জ নির্ধারণ করেছে। ফলে একেক অপারেটরের কলরেট ছিল একেক রকম।
অপারেটররা বলছে, সরকার মোবাইলে ভয়েস কলের ক্ষেত্রে কোনও মূল্য নির্ধারণ করে দেয়নি। মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছে মাত্র। অপারেটররা সেই সীমার মধ্য থেকে কলরেট নির্ধারণ করবে।
অপারেটররা মনে করছে, এতে করে গ্রাহকের উপকার হবে। তাদের বরং সেবার মান ভালো করে টিকে থাকতে হবে। গ্রাহকরা এখন থেকে অপারেটর বদলের সুযোগ পাবেন, তাদের সেকেন্ডারি সিমটি হবে প্রাইমারি সিম।
রবির হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেছেন, ‘পরিবর্তিত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের ফলে (কলরেট) সেবায় স্বচ্ছতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকরা আরও মানসম্মত, উদ্ধাবনী ও সাশ্রয়ী মূল্যের সেবা পাবেন। আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী, নতুন কলরেটের সিদ্ধান্ত বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং এর ফলে গ্রাহকদের ব্যয় ৩ থেকে ৫ শতাংশ কমে আসবে। ফলে গ্রাহকের কথা বলায় খরচ কমবে।’
তিনি বলেন, ‘একক মূল্যব্যবস্থা দেশের টেলিযোগাযোগ বাজারে ভারসাম্য নিয়ে আসবে। এখন থেকে গ্রাহকেরা কোন অপারেটরে কল করছেন— এ নিয়ে আর ভাবতে হবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যেকোনও অপারেটরে একই মূল্যে কথা বলতে পারবেন। এর ফলে দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পে বহু প্যাকেজের যুগ শেষ হলো, যা নিয়ে গ্রাহকদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হতো। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেক অপারেটর একক রেটের অফার চালু করছে। নতুন মূল্য কাঠামোর ফলে বাজারে সুষম প্রতিযোগিতাও নিশ্চিত হবে, যা আগে সম্ভব ছিল না।’
অপারেটরদের ভাষ্য, একেক অপারেটরের অন্তত শ’খানেক প্যাকেজ রয়েছে। নতুন কলরেট পুরোপুরি চালু হলে প্যাকেজের সংখ্যা কমে যাবে। অননেট ও অফনেট বলে কিছু থাকছে না, থাকবে একক কলরেট। অপারেটরগুলো এটার নির্ভর করে একটাই কলরেট নির্ধারণ করবে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘যেকোনও নেটওয়ার্কে অভিন্ন রেটে কলের সরকারি সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে টেলিকম ভয়েস সেবার মূল্য নির্ধারণের জটিলতাকে কমানোর পাশাপাশি গ্রাহকদের অধিক স্বাধীনতা উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে। এখন একজন গ্রাহক বাংলাদেশের ১৫ কোটিরও অধিক নম্বরে অভিন্ন রেটে কল করতে পারছেন, যা আগে সম্ভব ছিল না। এই সিদ্ধান্তের সুবিধা এমএনপি সেবা চালু হওয়ার পর সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা যাবে।’
তথ্যসূত্র : বাংলা ট্রিবিউন