TechJano

রিয়েলমির কর ফাঁকির অভিনব কৌশল

বাংলাদেশের বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিক্রিতে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিনব পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পদ্ধতিতে চীনা ব্র্যান্ড রিয়েলমি বিরুদ্ধে বিপুল পরিমানে টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে কর ফাঁকির নতুন পদ্ধতির কারণে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে যাওয়া আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, ফাঁকি দেওয়ার অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প। বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারাও কর ফাঁকির অভিনব পদ্ধতি সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছেন। আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পন্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর ফাঁকি দেওয়ার কৌশল হিসেবে অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটি ডিলারের কাছে আন্ডার ইনভয়েসিং করে পন্য সরবরাহ করছে। রিয়েলমি সি২ ডিভাইসটির বাজার মুল্য ৮৯৯০ টাকা। কিন্তু ডিভাইসের ডিলারের কাছে ইনভয়েসিং করা হচ্ছে ৪০০০ টাকা। ডিভাইসটির প্রতিটির মূল্য বাবদ ডিলারের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৮৫০০ টাকা (ডিলার মুল্য)। একই সঙ্গে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের অভিযোগও উঠেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েলমি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট আমদানির তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিয়েলমি সি২(২/৩২ জিবি) হ্যান্ডসেট মূল্য দেখানো হয়েছে ৮৫০০ টাকা। অথচ এই হ্যান্ডসেটটির বাজারে খুচরো মূল্য ৮ হাজার ৯৯০ টাকা।

এ অভিযোগের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায়, মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই আন্তর্জাতিকভাবে অচেনা কোম্পানির নাম ব্যবহার করা হচ্ছে হ্যান্ডসেট আমদানির জন্য। চীনা ব্র্যান্ড রিয়েলমি হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সামনে প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখানো হচ্ছে। কম মূল্য দেখিয়ে কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গ্রাহকের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক খুচরো মূল্য হিসেবেই দাম নেওয়া হচ্ছে।

এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মূলত সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়া জন্য বাজার মুল্যের থেকে আন্ডার ইনভয়েসিং তৈরি করা থাকে। যে পরিমানে টাকা পন্য বিক্রি করতে পারবে তার উপর কর দিতে হয় । যার করনে কিছু প্রতিষ্ঠান এই ধরনের অভিনব পন্থা অবলম্বন করে থাকে ।

আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হচ্ছে কি না জানতে প্রযুক্তি বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণভাবে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং ঘটে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের মূল কৌশলই আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং। আমদানি করা পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে কাস্টম ডিউটি এবং অন্যান্য রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া, নির্দিষ্ট পণ্য রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানিকারকদের যে আর্থিক বা অন্যান্য প্রণোদনা দেওয়া হয় অন্যায়ভাবে তার সুবিধা গ্রহণ করতে মানি লন্ডারিং করা হয়ে থাকে ।

সংশ্নিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, মূল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এভাবে প্রকৃত আমদানি মূল্যের তথ্য গোপন করে কম মূল্য দেখানো যায় না। এ কারণেই কৌশল হিসেবে তৃতীয় আর একটি কোম্পানি খোলা হয়েছে যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি নেই। কখনও এসব তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির তথ্য প্রকাশ হলে তার দায় মূল প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়বে না। আসলে কর ফাঁকির দায় এড়ানোর জন্যই অস্বাভাবিকভাবে মূল প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের নামে এলসি খোলা হচ্ছে। আবার বর্তমানে মোবাইল দেশে ম্যানুফ্যাকচার হওয়াতে কত সংখ্যক ফোন দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে তার সঠিক পরিমান জানা কঠিন হচ্ছে ।

বাজার ঘুরে আরো দেখা যায় রিয়েলমির অথোরাইজড দোকানে কোন ক্রেতা ফোন ক্রয় করতে গেলে তার কাছ থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দাম বেশী রাখা হচ্ছে এবং ইনভয়েজ দেওয়া হচ্ছে অরিজিনাল দামের। রিয়েলমির ফেসবুক পেইজেও এ নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ।

কিছুদিন আগে একজন রিয়েলমি ইউজার অভিযোগ করেন রিয়েলমির অথোরাইজড দোকান থেকে ফোন কেনার পরেও প্রায় তিন মাস হতে চললো কিন্তু এখনো এই ফোনের আইএমইআই বিটিআরসি ডাটাবেইজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে বিটিআরসি থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই আইএমইআই বিটিআরসি ডাটাবেইজে নেই। সারাদেশের অনেক জায়গা থেকেই রিয়েলমির কিছু মডেলের ব্যাপারে এই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

Exit mobile version