TechJano

লাইভ ব্লাড ব্যাংক মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন

‘লাইভ ব্লাড ব্যাংক’ মোবাইল অ্যাপলিকেশন হল জরুরী ভিত্তিতে রক্তের সন্ধানে রক্তদাতা ও গ্রহীতার জন্য একটি দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীসহ বিভিন্ন জরুরী প্রয়োজনে সহজে ও দ্রুততম সময়ে নিরাপদ রক্তের সন্ধান এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কে উৎসাহিত করতে মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এঁর উদ্যোগে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে ‘লাইভ ব্লাড ব্যাংক’ মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই পাওয়া যাবে নিরাপদ রক্তের সন্ধান।

রক্তদানের ক্ষেত্রে সর্বদা সোচ্চার বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই অ্যাপটি স্বপ্রনোদিতভাবে পরিচালনা করবে এবং এর সকল সদস্য এই অ্যাপে নিবন্ধন করে রক্তদানের মহান কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে এখন বছরে প্রায় ১০ লাখ ব্যাগেরও বেশি রক্তের প্রয়োজন। যার প্রায় ৮০ ভাগই পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। কিন্তু জরুরী অবস্থায় সঠিক রক্তদাতার সন্ধান পাওয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে রক্তের অভাবে বছরে প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ প্রান হারায়। যখন জরুরি রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন অনেক ছোটাছুটি করে রক্ত না পেয়ে, অনেকেই ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রক্তের জন্য অনুরোধ করে থাকেন এবং রক্তদাতার যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দিয়ে থাকেন। ফলে অনেক অপ্রয়োজনীয় জায়গায় ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর চলে যায়। আবার স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সন্ধান না পেয়ে অনেকেই পেশাদার রক্তদাতাদের কাছে যান। এই পেশাদার রক্তদাতাদের রক্তে নানা রকম রোগ জীবানু-ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা তো থাকেই, অনেক সময় আবার তাদের দ্বারা প্রতারণার স্বীকারও হতে হয়। আর তাই জরুরী সময়ে এসব অনভিপ্রেত ঝামেলা এড়াতে একটি নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে “লাইভ ব্লাড ব্যাংক” অ্যাপ।

এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ রক্তদাতা হিসেব যোগ দিতে পারবে এবং রক্তগ্রহীতা হিসেবে রক্তের জন্য অনুরোধ করতে পারবে। যখন কোনো রক্তগ্রহীতা রক্তের জন্য লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপ এ অনুরোধ করবে তখন রক্তগ্রহীতার রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী তার নিকটবর্তী অ্যাপ ব্যবহারকারী সেই রক্তের গ্রুপের সকল সদস্যের কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে। নোটিফিকেশন পাওয়ার পর রক্তদাতা সেই অনুরোধটি গ্রহণ করতে পারবে আবার অগ্রাহ্য ও করতে পারবে।

যিনি বা যারা এই অনুরোধটি গ্রহণ করবেন তাদের ছবি, নাম, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা এবং রক্তগ্রহীতা থেকে রক্তদাতার দুরত্ব রক্তগ্রহীতার অ্যাপে চলে আসবে এবং তারা মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারবে। একের অধিক রক্তদাতা যদি অনুরোধটি গ্রহণ করেন তবে রক্তগ্রহীতা ব্যক্তি দূরত্ব ও সময় বিবেচনা করে সবচেয়ে কাছে থাকা রক্তদাতাকে সিলেক্ট করতে পারবে। যেহেতু, এই অ্যাপ এর মাধ্যমে রক্ত দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাই এগিয়ে আসবে, তাই প্রতারিত হবার সম্ভাবনাও কমে আসবে। এভাবেই খুব সহজে প্রকৃত রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া যাবে এবং জরুরী রক্তের চাহিদা পূরণ হবে।

লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপে রক্তদান সম্পর্কিত আরও বিভিন্ন ফিচার যোগ করা হয়েছে যেমন: ডোনার ম্যাপ, ব্লাড ডোনার গ্রুপ, নিকটবর্তী ব্লাড ব্যাংক, সেভড ডোনারস, ইনভাইট ফ্রেন্ডস ইত্যাদি। হোম পেইজ এ একটি নিউজ ফীড এর মাধ্যমে সকল অ্যাক্টিভিটি প্রদর্শিত করা হয়েছে। এতে রক্তদান সম্পর্কিত তথ্য, রক্তের অনুরোধ, রক্তদান এবং জরুরী সচেতনতা মূলক তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মিলনায়তনে এই অ্যাপটির উদ্বোধন করেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে আইসিটি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে অ্যাপটি। যা পরিচালনা করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ডাকসু।

তথ্যপ্রযুক্তি সচিব এন এম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অ্যাপটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পলক বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে একজন মানুষও যেন রক্তের অভাবে মৃত্যু বরণ না করে সেই প্রত্যয় বাস্তবায়নে ছাত্রলীগ এগিয়ে আসবে, রক্ত দিয়ে মানুষদের বাঁচাবে।ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি এই লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপটিকে সফল করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুদ্ধে দেশ বিরোধী চক্র ও চক্রান্তকে পরাজিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ে তোলা হবে। হ্যালো ছাত্রলীগসহ গণমানুষের সেবায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন উদ্যোগে সব রকম সহযোগিতা করবেন তিনি।এ সময় রক্তদানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন পলক। এরপর মোবাইলে লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপটি ডাউনলোড করে দেখান ও অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।পলক জানান, অ্যাপটি এখন অ্যাড্রয়েন্ডে ডাউনলোড করা যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে আইওএসে চলে আসবে। এছাড়া ফেইসবুক-টুইটারে ইন্টারফেস করে দেয়া হবে, সেখান হতেও সরাসরি নিবন্ধন করা যাবে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র জিএস গোলাম রাব্বানী তার বক্তব্যে বলেন, লাইভ ব্লাড ব্যাংকটির পরিচালনায় রয়েছে ছাত্রলীগ এবং ডাকসু। এটি সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সব ইউনিয়নে এক যোগে যেন ম্যাসিভ ডাউনলোড হয় এবং সবচেয়ে বড় ইন্টারেক্টিভ ব্লাড ব্যাংক হয় সেটি বাস্তবায়নে কাজ করবে ছাত্রলীগ।

লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপটির বেটা ভার্সন ইতিমধ্যে গুগল প্লে স্টোরে প্রকাশ করা হয়েছিল যা ৫০০০ এর ও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০০ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান এ ইচ্ছুক। ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে থেকে এই অ্যাপ ব্যবহার হচ্ছে। ১২৫০টি রক্তের অনুরোধ করা হয়েছে এবং ৫০০ এর ও বেশি সফল রক্তদান সম্পন্ন হয়েছে।

গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে লাইভ ব্লাড ব্যাংক অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাচ্ছে। গুগল প্লে স্টোরের ঠিকানাঃ http://bit.ly/livebloodbank এছাড়া অন্য সকল ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে অ্যাপটির বাংলা ও iOS ভার্সন খুব শিঘ্রই প্রকাশ করা হবে।

Exit mobile version