অনেকেই ফোন দেয়ার আগে দেখে নেন কোন অপারেটরে কল করছেন। অনেকে আবার খরচ কমাতে চার/পাঁচটা সিম ব্যাবহার করেন,তবে এই সমস্যার সমাধান আসছে। এখন থেকে মোবাইল ফোন কল চার্জে অননেট (একই নেটওয়ার্ক) ও অফনেট (এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্ক) বৈষম্য থাকছে না। দেশে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা নম্বর এক রেখে অপারেটর বদলের সেবা চালু হওয়ার আগে এই বিভাজন তুলে দেওয়া হবে। গত বুধবার এ তথ্য জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অফনেট-অননেট রেখে এমএনপি চালু হলে গ্রাহকের অজ্ঞাতে চার্জ বসবে। গ্রাহক বুঝতে পারবেন না তিনি অননেটে না অফনেটে কল করছেন। কারণ ০১৫ দিয়ে শুরু নম্বরটি টেলিটকের না হয়ে রবিরও হতে পারে। তারা আরো বলছেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এখন মোবাইল ফোন সেবায় অফনেট-অননেট নেই। সর্বশেষ ছিল শ্রীলঙ্কায়, সেখানেও এই বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে বিটিআরসি নির্ধারিত সর্বনিম্ন চার্জ অননেট প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা, অফনেট ৬০ পয়সা। সর্বোচ্চ চার্জ হচ্ছে প্রতি মিনিট দুই টাকা। অর্থাৎ অপারেটরদের ২৫ পয়সা থেকে দুই টাকার মধ্যে কল চার্জ নির্ধারণ করতে হচ্ছে। গ্রাহকরা অপারেটভেদে অননেটে প্রতি মিনিট ৩০ পয়সা থেকে ৩৯ পয়সায় এবং অফনেটে ৯১ পয়সা থেকে এক টাকা ৪০ পয়সায় কল করার সুযোগ পাচ্ছে। এই পার্থক্য সামনে থাকবে না।
জানা যায়, বর্তমানে গ্রামীণফোনের যেহেতু গ্রাহক বেশি, তাদের ৯০ শতাংশ কল অননেটেই বা জিপি টু জিপিতেই হয়ে থাকে। রবি ও বাংলালিংকের গ্রাহকদের ৭০ শতাংশ অননেটে এবং ৩০ শতাংশ অফনেটে কল করে থাকে। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের অবস্থা হতাশাজনক। টেলিকট থেকে টেলিটকে কল যায় মাত্র ১০ শতাংশ, বাকিগুলো যায় অন্য অপারেটরে।
রবির জিএম (পলিসি, রেগুলেটরি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রিসার্চ) মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহক ভোগান্তি নিরসনে আমরা এমএনপি সেবা চালুর আগেই অফনেট ও অননেট ভয়েস কলের ক্ষেত্রে একক সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করতে সরকারকে অনুরোধ করছি।’ তিনি জানান, বর্তমানে অননেট ও অফনেট ব্যবস্থার ফলে প্রতিযোগিতায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে, পিছিয়ে পড়ছে অন্য অপারেটররা।
এ বিষয়ে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তার বক্তব্য, বাংলাদেশের গ্রাহকরা ভালো নেটওয়ার্কের চাইতে কম খরচে কথা বলার সুযোগ পেতেই বেশি আগ্রহী। টেলিটকের একজন গ্রাহক যখন জানছেন, তাঁর আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের বেশির ভাগ টেলিটক ব্যবহার করছে না, তখন তিনি খরচ কমাতে সেই মোবাইল অপারেটরের সেবা নেবেন যাদের গ্রাহক বেশি। এর ফলে একচেটিয়া কারবারের কাছে গ্রাহকরা একসময় জিম্মি হয়ে পড়বে।
জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, অফনেট ও অননেট বলে কিছু থাকবে না। এ বৈষম্য এমএনপি চালুর আগেই বিলুপ্ত করে নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা ৩১ জুলাইয়েই এমএনপি চালু করতে চাই। গত নভেম্বরে এমএনপি সেবা দেওয়ার লাইসেন্স পায় বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ান বিডি টেলিটেক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন বলেন, ‘আমরা সেবা দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। একটি মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে পরীক্ষামূলক কাজও শুরু হয়েছে। আশা করছি ৩১ জুলাইয়েই এ সেবা শুরু করতে পারব।’
জানা যায়, এমএনপি সেবা শুরুর আগে বর্তমান পরিস্থিতিও বেশির ভাগ মোবাইল অপারেটরের জন্য স্বস্তির নয়। গত আট বছরে পাঁচ মোবাইল ফোন অপারেটরের লোকশানের পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে রবির ৫৫৬ কোটি টাকা, এয়ারটেলের চার হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, বাংলালিংকের এক হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, টেলিটকের ৯৯ কোটি টাকা এবং সিটিসেলের ৭২৪ কোটি টাকা লোকশান হয়েছে।