TechJano

সমস্যা যখন প্রযুক্তি আসক্তি

এখনকার যুগে ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু তা যদি স্বাভাবিক কাজকর্মে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাহলে অবশ্যই ব্যবহারকারীকে সতর্ক হতে হবে। সময় যত গড়াচ্ছে ইন্টারনেটের প্রতি আমাদের নির্ভরশীলতাও তত বাড়ছে।কিন্তু আজ থেকে চার বছর আগে পরিস্থিতি এতটা জটিল ছিল না। সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত তরুণদের জন্য ভারতে ব্যাঙ্গালুরুর নিমহানস মানসিক হাসপাতালে ডা. মনোজ কুমার শর্মা চালু করেন ইন্টারনেট ডি-অ্যাডিকশন সেন্টার। সপ্তাহে তখন একজন রোগীরও দেখা মিলত না।

তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় জন রোগী সেখানে যাচ্ছেন আসক্তি ছাড়াতে। অতিরিক্ত আসক্ত রোগীকে ২১ দিনের জন্য রিহ্যাবেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানালেন ডা. শর্মা। তার কাছে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ২০ বছর। তাদের প্রত্যেকের বাবা-মাই দামি স্মার্টফোন বা গেইমিং কনসোল কেনার সামর্থ্য রাখেন। ইন্টারনেটের প্রতি তাদের আসক্ত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে খেলার মাঠের স্বল্পতাও যেমন একটি কারণ তেমনি কর্মজীবী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়াও একটি প্রধান কারণ।

ডা. শর্মার মতে, যদি কেউ দিনে পাঁচশটি সেলফি তোলে তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে উদ্বিগ্নতা কাজ করছে। ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তা পাওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা থেকেই উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়। এর কারণেই বারবার সেলফি তোলার প্রবণতা দেখা দেয়। অনলাইনে থাকার জন্য কাজে ফাঁকি দেয়া বা ক্লাস না করা, কথা বলার সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির দিকে না তাকিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে কথা বলা এসবই আসক্তির লক্ষণ।

এগুলোর পেছনে ডা. শর্মা চারটি বিষয় শনাক্ত করেছেন এগুলো হল তীব্র আকাংখা, নিয়ন্ত্রণ, বাধ্য করা ও ফলাফল। তিনি বলেন, কম বয়সী রোগীদের কাউন্সিলিং করার সময় তাদের অভিভাবকদের পাশে রাখা হয়। তারা কি বলতে চায় আমরা তা শুনে নেই। বৃহৎ পরিসরে আসক্তিজনিত আচরণ হচ্ছে অন্য কোনো কিছুর লক্ষণ। ইন্টারনেটের ওপরে শিশু বা তরুণদের নির্ভরশীলতা তৈরি হয় শূন্যতা থেকে। জীবনের শূন্য স্থানগুলো ভরাট করতেই তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দেয়।

ডা. শর্মা আরও জানান, ইন্টারনেটের সঙ্গে মাদকাসক্তির পার্থক্য রয়েছে। আমরা প্রতিদিনই ইন্টারনেট ব্যবহার করি। হোয়াটসঅ্যাপে বা ফেসবুকে আমরা সবাই আছি। কাজের জন্য আপনাকে ইমেইল চেক করতেই হবে। ফোন আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। তাই রোগীকে এগুলোর ব্যবহার ছাড়তে বলাটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। গত চার বছরে তার ক্লিনিকে ২৫০ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলিংয়ে রোগীকে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন শখের জিনিস নিয়ে সময় কাটাতে উৎসাহিত করা হয়। আশপাশে থাকা বাস্তব দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে মিশতে বলা হয়।

তথ্যসূত্র: টেকশহর।

Exit mobile version