TechJano

সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার হুয়াওয়ের

চীনের শেনজেনে হুয়াওয়ের ১৬তম গ্লোবাল অ্যানালিস্ট সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামিটে এ বছরের উপজীব্য হলো ‘সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব গড়া’। হুয়াওয়ের সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও ৬৮০টি শিল্প ও আর্থিক অ্যানালিস্ট, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা এই সামিটে অংশ নেন, যাদের মধ্যে টেলিকম, ইন্টারনেট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যানালিস্টরা ছিলেন। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে কিভাবে একটি সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব গড়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

সামিটে ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড ও স্ট্র্যাটেজিক বিষয় তুলে ধরে হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, ‘ইতোমধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব তৈরি হয়েছে। আমরা এটা অনুভব করতে পারি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বর্তমানে অবিশ্বাস্য উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণার অনেক আগেই বিভিন্ন জায়গায় ফাইভজি চালু হচ্ছে। এছাড়া ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইভজি নেটওয়ার্ক উন্নয়নের সাথে সাথে ফাইভজি ডিভাইসেরও উন্নয়ন হচ্ছে। হুয়াওয়ের ধারণা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে ২.৮ বিলিয়ন মানুষ ফাইভজি ব্যবহার করবে। ফলে ব্যবহারকারীদের এই বড় অংশকে সহায়তা করতে একটি খুবই সাধারণ, শক্তিশালী ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও গ্রাহক সেবায় নতুন নতুন মাত্রা যোগ করাই হুয়াওয়ের লক্ষ্য।’

বড় পরিসরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এন্টারপ্রাইজ ব্যবসায় ক্লাউডের অনর্ভূক্তিকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করছে। হু ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বাজারের বড় অংশ হুয়াওয়ের দখলে থাকায় আমরা ক্লাউড প্রতিযোগিতাকে মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রতিযোগিতা হিসেবেই দেখছি। ফলে এই খাতে হুয়াওয়ের স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগ থাকায় আমরা ক্লাউড প্রতিযোগিতার দৌড়ে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।’

যেহেতু বিভিন্ন ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন সহজলভ্য, তাই গ্রাহকদের ডিজিটাল অভিজ্ঞতাও ভিন্ন ভিন্ন।  কিন্তু গ্রাহকদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল অভিজ্ঞতা দিতে হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমনটি গ্রাহকরা চান- হু ব্যাখ্যা করেন।

হু আরও বলেন, ‘হুয়াওয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন অব্যাহত রাখতে চায় এবং এটা এমন একটি কোম্পানি যারা শুধু বর্তমানের জন্য বিনিয়োগ করে না বরং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভবিষ্যতের জন্যও বিনিয়োগ করে। হুয়াওয়ে শুধু বাণিজ্যিক সফলতার জন্য কাজ করে না বরং তারা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দেবে। সম্পূর্ণ সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বের উপকারিতা বেশি সংখ্যক মানুষ, বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেওয়াই হুয়াওয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য।’

সামিটে হুয়াওয়ের পরিচালনা পর্ষদের ডিরেক্টর এবং ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ-এর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম জু বলেন, ‘হুয়াওয়ে ইনোভেশন ২.০ যুগের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।’

ইনোভেশন ২.০ হলো লক্ষ্যভিত্তিক তাত্ত্বিক জ্ঞান ও নতুন নতুন উদ্ভাবন। ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ মূলত আগামী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা করবে। জু বলেন, ‘সাধারণ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী শিক্ষা গবেষণায় আমরা প্রতিবছর ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করি, যা আমাদের গবেষণা প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নতুন নতুন তত্ত্ব ও মৌলিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনে হুয়াওয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে কাজ করবে।’

শিল্পখাতে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং হালনাগাদের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে পাঁচটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে বদ্ধপরিকর। ক্ষেত্রগুলো হলো:- টেকনিক্যাল আর্কিটেকচারকে নতুন মাত্রা দেওয়া, প্রোডাক্ট আর্কিটেকচারকে নতুন মাত্রা দেওয়া, ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া, নতুন ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং নতুন ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে দেওয়া।

ইনভেস্টমেন্ট রিভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান, হুয়াওয়ে বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ও আইসিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ডেভিড ওয়াং বলেছেন, “বুদ্ধিমান জগতের মূল অবকাঠামো হবে কানেক্টিভিটি, কম্পিউটিং এবং ক্লাউড। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এই নতুন জগতকে শক্তিশালী করবে।” “ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা মুরের নীতিকে পুনঃসংজ্ঞায়িত করবো এবং বিশ্বের সেরা সংযোগ স্থাপনের জন্য শ্যানন’স লিমিট মতবাদকেও চ্যালেঞ্জ করবো। কম্পিউটিং ক্ষমতাকে আরো সহজে আরও বেশি সাশ্রয়ী করার জন্য পুরো কম্পিউটিং আর্কিটেকচারকে নতুনভাবে সাজাবো। শুধু তাই নয়, আমরা শিল্প ডিজিটাইজেশনের জন্য সেরা হাইব্রিড ক্লাউড নির্মাণ করবো এবং ফুল স্ট্যাক-অল সিনারিও এ.আই. প্রযুক্তি দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেবো।”

ওয়াং তার বক্তব্যের শেষে আরও বলেন, “হুয়াওয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে (আরএন্ডডি) আরও বিনিয়োগ করবে যাতে শীর্ষস্থান অর্জন করতে পারে। আমরা ক্রমাগত প্রচেষ্টায় নিজেদেরকেই সব সময় ছাড়িয়ে যেতে থাকবো এবং আমাদের অংশীদারদের সাথে নিয়ে সম্পূর্ণরূপে সংযুক্ত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব গড়ে তুলব।”

অধিবেশন থেকে জানা গেছে, উদ্ভাবনই হুয়াওয়ের মূল চালিকাশক্তি যার ফলে তারা ক্রমবর্ধমান উন্নতি ধরে রাখতে পেরেছে। এই উদ্ভাবন সবসময় গ্রাহকদের চাহিদা ভিত্তিক। গত তিন দশক ধরে হুয়াওয়ে তার গ্রাহকদের এবং অংশীদারদের সাথে সব ইন্ডাস্ট্রি ও সমাজের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। এভাবেই হুয়াওয়ে আইসিটি অবকাঠামো সরবরাহকারী এবং স্মার্ট ডিভাইস নির্মাতাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে এসে গেছে। সময় এখন বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্ব নির্মাণের এবং এক্ষেত্রে আইসিটি শিল্প খাতের অভাবনীয় উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। হুয়াওয়ে বর্তমানে নতুন নতুন সংযোগ স্থাপন, কম্পিউটিং এবং ক্লাউড প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ করতে থাকবে। এ জন্য হুয়াওয়ে ‘ইনোভেশন ২.০’ ধারণাটি প্রস্তাব করেছে এবং স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। পরবর্তী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে গবেষণার দিকে মনোযোগ দেবে বলে জানিয়েছে।

প্রথম হুয়াওয়ে গ্লোবাল এনালিস্ট সামিট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালে এবং বিগত ১৬ বছর ধরে এটি বার্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই বছর ১৬ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই সম্মেলন চলছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন সারা বিশ্ব থেকে আসা শিল্প বিশেষজ্ঞরা, যারা বিভিন্ন বিষয় এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে অনন্য সব ধারণা প্রদান করছেন।

Exit mobile version