TechJano

হার্ডওয়্যার নির্মাতা দেশের তালিকায় নাম লেখাল বাংলাদেশ

walton factory

পোশাক নির্মাতা দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। এবারে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নির্মাতা দেশ হিসেবেও পরিচয় গড়ে তুলতে চাইছে। ইতিমধ্যে হার্ডওয়্যার খাতকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। এখাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেত নানা সুযোগ দিচ্ছে। গড়ে তোলা হয়েছে হাইটেক পার্ক।ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন সংযোজন কারখানা গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি তৈরি শুরু হয়েছে বিভিন্ন হার্ডওয়্যার। ১৮ জানুয়ারি দেশে প্রথম কম্পিউটার নির্মাতা কারখানা হিসেবে ওয়ালটনের একটি কারখানা উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশে কি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যার উৎপাদনে বিশ্বে পরিচয় দাঁড় করাতে পারবে? বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটা সম্ভব। দেশের তরুণ কর্মীরা প্রযুক্তি শিল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে।কম খরচে শ্রমিক পাওয়ায় এ শিল্পে সম্ভাবনা ব্যাপক।

দিনাজপুরের মিল্লাদ হোসেন কাজ করছেন দেশের প্রথম মাদারবোর্ড তৈরির কারখানায়। তিনি মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কম্পিউটার যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানায়। তার মতো ৩০ জন তরুণ কর্মীকে দেখা গেল ওই কারখানার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। সেখান থেকেই এখন দৈনিক ২০০ টির মতো মাদারবোর্ড তৈরি হচ্ছে।

মাদারবোর্ড হল-ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মত জটিল ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মূল সার্কিট বোর্ড (পিসিবি)। মাদারবোর্ডকে মেইনবোর্ড বা সিস্টেম বোর্ডও বলা হয়। মাদারবোর্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করা হয়। সাধারণ ডেস্কটপ কম্পিউটারে মাদারবোর্ডের সাথে মাইক্রোপ্রসেসর, প্রধান মেমরি ও কম্পিউটারের অন্যান্য অপরিহার্য অংশ যুক্ত থাকে।

বাংলাদেশে এখন তৈরি করা হচ্ছে দুই স্তরবিশিষ্ট মাদারবোর্ড। ওই মাদারবোর্ড কম্পিউটার ও ল্যাপটপে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের মাদারবোর্ড তৈরিতে কাজ শুরু করেছে ওয়ালটন।

ওয়ালটনের এই মাদারবোর্ড ও কম্পিউটার কারখানার উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ওয়ালটনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানালেন, দেশে এই প্রথম কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মাদারবোর্ড তৈরি করছে ওয়ালটন। মাদারবোর্ডের পাশাপাশি ডিসপ্লে, কেসিংসহ এর আনুসঙ্গিক যন্ত্রাংশও তৈরি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা চিপ ও র‍্যামের মত সুক্ষ্ম যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার।

মাদারবোর্ড বিভাগের মেশিনচালক মিল্লাদ হোসেন জানান, এইচএসসি পাশ করে কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ পেয়েছেন ওয়ালটনের কারখানায়। তাঁরা ৩০ জনের মতো কাজ করছেন। এখনো এখানে নারী কর্মী নেই। তবে যুক্ত হবে। এটা নতুন তাই এখনো উৎপাদন বেশি নয়। তবে বেশি উৎপাদন করা যাবে।

মাদারবোর্ড তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে মিল্লাদ জানালেন, মাদারেবার্ড তৈরিতে কারখানায় বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করা হয়। শুরুতে সিপিএম বোর্ড এনে নির্দিষ্ট মাপে কাটা হয়। তারপর সেই বোর্ডে ড্রিলিং ও ব্রাশিং করা হয়। এরপর তা যায় এক্সপোর্টিং যন্ত্রে। সেখানে বিভিন্ন লেমিনেশন ও সার্কিটের ছিদ্র দেওয়া হয়। সে ছিদ্রটির কপার অংশ কেটে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া করা হয়। এরপর যায় স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ে। এরপর পরীক্ষা করাসহ ল্যাবে যায়। মান নিয়ন্ত্রণের পর চূড়ান্ত করা হয় ওই মাদারবোর্ড। তিনি মূলত বোর্ড পরিস্কার করার কাজটি করেন।

মিল্লাদ জানান, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা সকাল আটটা থেকে কাজ করেন এখানে। আপাতত শুধু দিনের বেলাতেই কাজ চলছে। এখানে কর্মীদের বেতন সাড়ে সাত হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। এখানে বিভিন্ন জেলার মানুষ কাজ করছেন। আবার অনেকেই আশপাশের এলাকার।

দেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশে কম্পিউটার তৈরি হবে সেটা একটা সময় ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়েছে। আমরা চাইব, সরকারি কাজে যেসব কম্পিউটার ল্যাপটপ ব্যবহার করা হয় সেটা যেন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি হয়।

মোস্তাফা জব্বার জানান, আমারা চাই দেশের ডিজিটাল ডিভাইসের ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটাক বাংলাদেশে তৈরি ডিভাইস। আমরা পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দিতে চাই। এই বিপুল সংখ্যক ল্যাপটপ আমদানি করলে অনেক টাকা বিদেশে চলে যাবে। সেজন্য আমরা চাই দেশের উৎপাদিত ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে হার্ডওয়্যার শিল্প বিকাশে সরকার কাজ করছে। কোনো প্রতিষ্ঠান হাইটেক পার্ক ও হাইটেক পার্কের বাইরে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করলে ১০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটেটিভ পাবেন।

Exit mobile version