TechJano

হুয়াওয়ে কার্যালয় পরিদর্শনে মাহাথির মোহাম্মদ: স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে বিষয়টি

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বেইজিংয়ে হুয়াওয়ের কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। গত ২৫ এপ্রিল সকালে তিনি এ পরিদর্শনে যান। তার এই পরিদর্শনকে চীনের টেলিকমিউনিকেশনস যন্ত্রাংশ সরবরাহে মালয়েশিয়ার সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মালিয়েশিয়ার টেলিকম সম্পর্কিত একটি সূত্র। হুয়াওয়ে মালয়েশিয়ায় টেলিকম নেটওয়ার্কে ফাইভজি প্রযুক্তি সরবরাহের জন্য কাজ করছে। তবে এই পরিদর্শনে দুই দেশের মধ্যে কোনো প্রযুক্তি সরবরাহের বিষয়ে সমঝোতা হয়নি।

সাংহাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের বিশ্লেষক জিয়া মো জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়া হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার এবং সেখানে ফোরজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ে অংশ নিয়েছে। ফলে মাহাথির মোহাম্মদের এই পরিদর্শন মালয়েশিয়ায় হুয়াওয়ের ব্যবসা সম্প্রসারণের একটা ইঙ্গিত।

হুয়াওয়ে ইউরোপের মতো শক্তিশালী টেলিকম বাজারে অংশ নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করেছে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও হুয়াওয়ের অবস্থান অনেক শক্ত। ফলে এই অঞ্চলের মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ক্যাম্বোডিয়া ও লাওসে অধিকাংশ টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সাথে স্ট্র্যাটেজিং পার্টনারশিপ গড়ে ওঠে।

এমন সময় এই পরিদর্শন হলো যখন পশ্চিমা দেশগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির অজুহাতে হুয়াওয়ের নিন্দা করছে। বিভিন্ন দেশ যখন খুবই দ্রুত নেক্সট জেনারেশন ফাইভজি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন যুক্তরাষ্ট্র হুয়াওয়ের ফাইভজি যন্ত্রাংশের বিষয়ে নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া সেকেন্ড হোম অ্যান্ড রোড ফোরামের সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহাথির মোহাম্মদ।

হুয়াওয়ে ফাইভজি প্রযুক্তির অগ্রপথিক এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় টেলিকম যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী। তবে ওয়াশিংটনের দাবি, হুয়াওয়ে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করে এবং এরই ধারাবাহিকতায় কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে হুয়াওয়ের ফাইভজি যন্ত্রাংশ বয়কট করার আহ্বান জানালে তারা সেটা শোনেনি। চলতি মাসের প্রথম দিকে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার অং কিয়ান মিং হুয়াওয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেই সময় তিনি জানান, হুয়াওয়ে তাদের দেশে বিনিয়োগ করছে।

এছাড়া মালয়েশিয়ার প্রধান টেলিকম অপারেটররা, যেমন: ম্যাক্সিস ও সেলকম আজিয়াটা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে হুয়াওয়ের মূল গ্রাহক। গত মাসে ম্যাক্সিস হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি প্রদর্শন করে। এরপর দেশটিতে ফাইভজি চালুর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে দুই কোম্পানি এক সাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমের তথ্য মতে, গত সপ্তাহে হুয়াওয়ের ফাইভজি স্মার্টফোন ব্যবহার করে মালয়েশিয়ার প্রথম ফাইভজি কল করেন মাহাথির মোহাম্মদ।

ফাইভজি প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকায় ফিলিপাইনের গ্লোবাল টেলিকমও সম্প্রতি হুয়াওয়ের খুব প্রশংসা করে। তাছাড়া দেশটির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা হুয়াওয়েকে ‘ক্লিন বিল অব হেলথ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে হুয়াওয়ের বেশি গুরুত্ব দেয়ার পেছনে শক্ত কারণ রয়েছে। ইউরোপের তুলনায় এই অঞ্চলে ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি তারুণ্য নির্ভর জনসংখ্যা রয়েছে। আরো উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, এই উদীয়মান বাজারে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ ইতোমধ্যে অনলাইনের আওতায়, যাদের বিপুল সংখ্যক ইন্টারনেটে প্রবেশ করে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে।

Exit mobile version