ক্যারিয়ার

অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ রিসার্চ ফেলোশিপ এর দ্বিতীয় পর্বের উদ্বোধন

By Baadshah

February 01, 2018

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে স্টার্ট-আপ শুরু করা কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ্যজনক হারে। তবে এদের ঠিক কত শতাংশ সত্যিকার অর্থে সফলতা পাচ্ছে এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ নিজেদের উদ্যোগ শুরু করলেও তা পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের বাঁধার সম্মুখীন হয়ে সেই উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে না, কিংবা হাল ছেড়ে দেয়। এতে যে শুধু একটা সম্ভাবনাময় উদ্যোগের মৃত্যু হয় তাই-ই নয়, সৃষ্টি হয় হতাশার।

দেশের উদ্যোক্তাদের বর্তমান অবস্থা, তারা যেসকল বাঁধার সম্মুখীন হয়, যে যে কারণে থেমে যায় যাত্রা, কিংবা যেইসব বাস্তব কারণে অনেক উদ্যোগ শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়, সেই বিষয়গুলো বিস্তারিত গবেষণার উদ্দেশ্যে জাংশন ভেঞ্চার্স এর উদ্যোগে ২০১৭ এর জানুয়ারী মাসে শুরু হয় অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ রিসার্চ ফেলোশিপ। দুই পর্বের এই রিসার্চ ফেলোশিপের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছে এডওয়ার্ড এম কেনেডি (ইএমকে) সেন্টার, সার্বিক আয়োজন করেছে জাংশন বাংলাদেশ, সহযোগিতা করেছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইসিটি ডিভিশন ও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

দুই পর্বের এই গবেষণায় প্রত্যেক পর্বে মোট চারটি করে আটটি দলকে ফেলোশিপ দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক দলে ছিল তিনজন করে সদস্য যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক দলে একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী অথবা সেক্টর ভিত্তিক অভিজ্ঞ পেশাদার দলের সমন্বয়। এটি উল্লেখ্য যে, নারী ক্ষমতায়ন ও সুষম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিটি দলে একজন নারী অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। প্রথম পর্বে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ডজনখানেক দলের মধ্য থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের বিচারক প্যানেল চারটি দলকে চূড়ান্তভাবে ফেলোশিপের জন্যে মনোনীত করেন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত চারটি দল যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট প্র্যাক্টিসেস, স্টার্ট-আপ ইনভেস্টমেন্ট সিনারিও, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম, সেক্টোরিয়াল স্টাডি ইন ইনোভেশনস এন্ড অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ, এবং সাকসেস অ্যান্ড ফেইলর অব অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ ইকোসিস্টেম। একইভাবে দ্বিতীয় পর্বে আরও চারটি দলকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস প্র্যাক্টিসেস, টেকনোলজি অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ,ল’ এন্ড পলিসি অন স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেম, রুরাল অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ, উইমেন অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ, অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ এডুকেশন অ্যান্ড প্র্যাক্টিসের প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্যে মনোনীত করা হয়। প্রত্যেক দলকে চার মাসব্যাপী এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পুরষ্কার দেয়া হয়েছে, যার অর্ধেক অর্থ ফেলোশিপের জন্যে মনোনীত হওয়ার পর, এবং বাকি অর্ধেক দেয়া হচ্ছে গবেষণাপত্র জমা দেয়ার পর। অবশ্য শুধু গবেষণার জন্যেই অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ রিসার্চ ফেলোশিপের প্রবর্তন করা হয়েছে, এমনটা বললে কম বলা হবে। এই ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের তরুণদের, এমনকি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও কোন ব্যবসায়ীক উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে সেই ব্যবসা সম্পর্কে মার্কেট রিসার্চের ব্যাপারে যে অনীহা কাজ করে সেটি থেকে বের হয়ে আসা এবং ব্যবসার সাথে গবেষণাকে যুক্ত করে সেই ব্যবসাকে কিভাবে আরও লাভজনক করে তোলা যায় সেই ব্যবস্থা করা।

এই ফেলোশিপ কার্যক্রম এর রিভিউ বোর্ডের সম্মানিত সদস্যগনের মধ্যে ডঃ সেলিম রায়হান, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ইমরান রহমান, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), অধ্যাপক সারওয়ার উদ্দিন আহমেদ, ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, মুনির হাসান, বিডিওএসএন, মিনহাজ আনোয়ার, বেটার স্টোরিজ, ব্যারিস্টার আনিতা গাজী লিগ্যাল সার্কেল, টিনা জাবিন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, এস এম কামরুদ্দিন রুপম, ম্যানেজার (এডুকেশন), ব্রিটিশ কাউন্সিল, তাহসিন ইফনুর সাইদ,হেড অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স, ডিনেট, জারিফ আহমেদ, লিগ্যাল সার্কেল, আশরাফ আবির, সিইও, এমসিসি লিমিটেড, সাইফ কামাল, ফাউন্ডার, তরু ও ডঃ অনন্য রায়হান, চেয়ারপারসন, ডিনেট প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। রিভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন স্বনামধন্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার (আই.বি.এ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ৪ মাস দীর্ঘ এই ফেলোশিপ এর নেতৃত্বে যে লিড রিসার্চ ফেলোগন ছিলেন যাদের অক্লান্ত অধ্যবসায় আমাদের অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ ইকোসিস্টেম কে আরও সমৃদ্ধ করেছে তারা হলেন, মারুফ ইবনে ওয়ালী, লেকচারার, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ),ইফতেখার উল কারিম, লেকচারার, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), সৈয়দ আফরোজ কেরামত, লেকচারার, আমেরিকান ইন্তারনেরশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), আসিফ উদ্দিন আহমেদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), সাইয়েদুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট কাউন্সেলর, বাংলাদেশ ইন্সিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, দেবজিত সাহা, কোফাঊন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, কাইজেন সিএসআর, নুহিন খান, লেকচারার, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)।

৩১ জানুয়ারী, বিকাল ৩ টায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পর্বের সাতটি গবেষণাপত্রের ফলাফল উন্মোচন এবং দ্বিতীয় পর্বের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব জুনায়েদ আহমেদ পলক, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডঃ জি. ইউ. আহসান, প্রো-ভিসি, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ডঃ অনন্য রায়হান, চেয়ারপারসন, জাংশন বাংলাদেশ, টিনা জাবিন, ইনভেস্টমেন্ট এডভাইজর, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, জনাব এম. কে. আরেফ, ডিরেক্টর ইএমকে সেন্টার, সকল সম্মানিত ফেলোগণ, রিভিউ বোর্ডের সদস্যগন ও অন্যান্য সরকারী, আন্তর্জাতিক সংস্থার ও বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন। জাংশন ভেঞ্চার্স এবং ইএমকে সেন্টার কর্তাব্যক্তিরা আশা করছেন, অন্ট্রোপ্রিনিয়রশিপ রিসার্চ ফেলোশিপ হবে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদেরকে গবেষণা ও গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগ্রহী করে তোলার পক্ষে একটি প্রথম পদক্ষেপ।