অ্যাপে অ্যাম্বুলেন্স ডাকলেই হাজির হবে। ইজিয়ার দিচ্ছে এমন সেবা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৫১২টি উপজেলাতে পাওয়া যাবে অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি এই সেবা।
অ্যাপের সাতসতেরো :
চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল অনেকদিন ধরে। কাজও চলছিল সেটি নিয়ে। এক বছর ধরে অ্যাপটি নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসে সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরি সেবার সহজ মাধ্যমটি অবমুক্ত করা হয়। ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেডের ‘ইজিয়ার’ (ezzyr) অ্যাপ দিচ্ছে রাইড শেয়ার সেবার পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও। মোবাইল বা ট্যাবে অ্যাপটি ইন্সটল করে এই সেবা যে কেউ ২৪ ঘন্টা নিতে পারবেন। ইজিয়ারে বর্তমান ১ হাজার ৫শ’টির বেশি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত আছে। খুব শিগগিরই সেটির পরিমান ৪ হাজারের ঘরে যাবে শুধুমাত্র ঢাকাতে। আরো ১০ হাজার অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত হবে সারাদেশ জুড়ে।
তবে ইজিয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা যে একেবারে কম তা নয়। রাজধানীতে গড়ে ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স থাকে।
অ্যাম্বুলেন্স ও সেবা :
ইজিয়ার অ্যাপে এক ধরনের অ্যাম্বুলেন্সই পাওয়া যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকবে দক্ষ ড্রাইভার, অক্সিজেন, এয়ারকুলার, অ্যাসিসটেন্ট এবং স্ট্রেচার। কল করলে আশেপাশে ১-২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অ্যাম্বুলেন্স থেকে যোগাযোগ করবে। যদি তিনি সাড়া না দেন তবে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে কলটি চলে যাবে। এ ছাড়া কল সেন্টারে ফোন দিয়েও নেয়া যাবে এই সেবা। সেক্ষেত্রে ইজিয়ার কলসেন্টারে (০৯৬০৪৭০০৭০০ নম্বর) ফোন দিতে হবে। তাহলে সেখান থেকেই অ্যাম্বুলেন্স কনফার্ম করা হবে। ঠিকানা অনুযায়ী চলে আসবে। ড্রাইভার ফোনে যোগাযোগ করবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে অন্য জেলাতে যেতে হলে ইজিয়ার অ্যাপের রাইড লেটার হিসেবে খরচ গুনতে হবে। সেখানেও বাজারে যে রেট আছে তার চেয়ে কম পরবে।
অ্যাপ ইন্সটল :
প্রথম আপনাকে যেতে হবে গুগল প্লে-স্টোরে। ইজিয়ার (ezzyr) লিখে সার্চ দিলে চলে আসবে অ্যাপ। এরপর ইন্সটল বাটনে ক্লিক করলে ডাউনলোড হতে থাকবে। অ্যাপের সাইজ ১৪ মেগাবাইট। ইন্সটল হবার পর অ্যাপে ক্লিক করলে সবুজ রঙের একটি ডিসপ্লে দেখা যাবে। সেখানে নেক্সট বাটনে ক্লিক করতে হবে। একে একে আসবে গেট অফারস, কার-অন-ডিমান্ড, বাইক-অন-ডিমান্ড এই অপশনগুলো আপনি চাইলে স্কিপ বা নেক্সট করতে পারেন। এরপর আসবে লাইভ সাপোর্ট, সেখানে গট ইট অপশনে ক্লিক করতে হবে। চালু হবে ইজিয়ার অ্যাপ। সবুজ পর্দায় ট্র্যাফিক জিপিএস আইকন মিলিয়ে লোগো। এরপর আসবে গেট স্টার্টেড। দিতে হবে মোবাইল নম্বর। নম্বর দিলে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। এক মিনিটের মধ্যে ৫ ডিজিটের কোড দিতে হবে। এরপর আপনার নাম, লিঙ্গ, ইমেইল, পাসওয়ার্ড দিতে হবে। অ্যাপ চালু হবার পর ডান দিকে ইজিয়ার যেখানে লেখা সেখানে অ্যাপ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। হিস্ট্রি, ট্রিপ, প্রমোকোড, ইনভাইটস ফ্রেন্ডসহ সাপোর্ট অপশন। এটি শুধুমাত্র একবার ইনস্টল করতে হবে।
অ্যাম্বুলেন্সের রাইড নেবার ক্ষেত্রে অ্যাপে দেখা যাবে একটি লাল রঙের বৃত্তের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স আইকন। সেখানে ক্লিক করলে অ্যাম্বুলেন্সে কি ধরনের সেবা পাবেন তা দেখা যাবে। অক্সিজেন, এয়ারকুলার, অ্যাসিসটেন্ট, স্ট্রেচার। আপনাকে দিতে হবে রিকয়েস্ট। লোকেশনের সেক্ষেত্রে সবুজ বৃত্তের ঘর জিপিএসের সুবিধার জন্য বর্তমান লোকেশন দেখাবে বা যেটি সিলেক্ট করে দিবেন সেটি থাকবে। এ ছাড়া কোথায় যাবেন সেটি লাল বৃত্তের ঘরে লিখতে হবে। এরপর ক্লিক করতে হবে কনফার্ম অপশন। এবার এস্টিমেটেড ফেয়ার উঠবে সেটি কনফার্ম করতে চাইলে ‘ওকে’ ক্লিক করতে হবে। বর্তমানে অ্যাপটি শুধু অ্যানড্রয়েড ফোনের জন্য প্রস্তুত। তবে আইওএসের জন্য কাজ চলছে; সেটিও খুব তাড়াতাড়ি মুক্ত করা হবে। ইজিয়ার অ্যাপের ডাউনলোড লিংক: http://bit.ly/EzzyrApp
খরচ :
খরচ যে খুব বেশি সেটাও নয়। ইজিয়ারের অ্যাম্বুলেন্সের বেস ফেয়ার ১ হাজার টাকা। আর প্রতি কিলোমিটার ৯০ টাকা। ধরুন, আপনি ধানমন্ডি থেকে বারডেম যাবেন। রাস্তার দূরত্বে ৫ কিলোমিটারের মতো হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে গুনতে হবে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। জ্যামে পড়ে থাকলেও বাড়তি টাকা দেবার ঝামেলা নেই। পেমেন্টে নিয়েও নেই সমস্যা। ইজিয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধ পদ্ধতি এখন পর্যন্ত ক্যাশে। তবে কিছুদিনের মধ্যে বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমেও ভাড়া পরিশোধ করা যাবে।
ইজিয়ার টেকনোলজিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেদী হাসান ইমন বলেন, দেশি উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা দেশের মানুষের উপকারে সব সময় কাজ করব। প্রয়োজনীয় জরুরি এই সেবা আরো উন্নত করতে চাই। শুধু ভালো ফিটনেসের অ্যাম্বুলেন্স বা ড্রাইভার, অ্যাসিসটেন্ট নয়; ইচ্ছা আছে অ্যাম্বুলেন্সে ডাক্তারও থাকবে। সেটি অবশ্য অন-ডিমান্ড সার্ভিস হবে। তা নিয়েও কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, শুধু রোগীদের চিন্তা করে নয়। অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারদের জন্য থাকবে লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকবে এই ইন্স্যুরেন্সের আওতায়। এ ছাড়া ইজিয়ারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত রোগীর সঙ্গে ব্যবহার? রোগীর সঙ্গে থাকা মানুষদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে? তাদের চলাফেরা কেমন হবে? টাকা চাওয়ার ব্যবহার কেমন হবে? সব কিছুর ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে। মেহেদী হাসান জানান, পথে যদি (জেলার বাহিরে যেতে) অ্যাম্বুলেন্সের কোনো ধরনের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেয়। কলসেন্টারে অভিযোগ করলে এক ঘন্টার মধ্যে সেটির সমাধান করা হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অ্যাম্বুলেন্স পরিবর্তন করে দেয়া হবে। ইজিয়ারের কলসেন্টার ২৪ ঘন্টা খোলা সেবা নিশ্চিত করতে।