মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে স্মার্টফোনের পুরো কার্যক্রম অ্যাপের ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন অ্যাপ ছাড়া একটি স্মার্টফোন ডিভাইসের প্রকৃতপক্ষে কোনো কার্যকারিতা থাকে না। বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে স্মার্টফোনের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার ভারত বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান অ্যাপ বাজারে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলের আইওএস এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড প্লে স্টোর থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে। এছাড়া উভয় প্লাটফর্ম থেকে অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে ভারত। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাপ অ্যানির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর ইটি ব্যুরো।
ভারতীয় স্মার্টফোন গ্রাহকদের বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্টের চাহিদা এ প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। দেশটিতে অ্যাপ স্টোর এবং প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড তালিকায় এগিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ। ভারতে ডাউনলোড বিবেচনায় শীর্ষ ১০টি মোবাইল অ্যাপের মধ্যে তিনটি হলো ভিডিও স্ট্রিমিং-সংশ্লিষ্ট। অথচ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডাউনলোড বিবেচনায় শীর্ষ ১০টি অ্যাপের মধ্যে মাত্র একটি ছিল ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ।
অ্যাপ অ্যানির তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতে অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক বছর আগের একই প্রান্তিকের তুলনায় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এসেছে ৪১ শতাংশ। এ কারণে দেশটি বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে ক্রমবর্ধমান অ্যাপ বাজারের তকমাটি দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় ক্রমবর্ধমান অ্যাপ বাজার এখন ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া তৃতীয় ক্রমবর্ধমান অ্যাপ বাজার হিসেবে আলবেনিয়ার নাম উঠে এসেছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাপ অ্যানির এক মুখপাত্র জানান, আইওএস এবং গুগল প্লে স্টোর থেকে সামগ্রিক ডাউনলোড বিবেচনায় শীর্ষ বাজারের তকমাটিও এখন ভারতের দখলে। এছাড়া সামগ্রিক ডাউনলোড বিবেচনায় বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অ্যাপ বাজার হিসেবে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নাম উঠে এসেছে।
রাজস্ব বিবেচনায় ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় কনটেন্ট স্ট্রিমিং সার্ভিস অ্যাপ হলো নেটফ্লিক্স এবং ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার। এছাড়া দেশটিতে চীনা অ্যাপ ইউসি ব্রাউজার, শেয়ারইট এবং ভিগো নামে পরিচিত হাইপস্টার এখন শীর্ষ ১০-এ রয়েছে। ভারতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক মেসেঞ্জারের ডাউনলোড অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে রিলায়েন্স জিওর প্রবেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার ব্যবহার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। বিনামূল্যের ভয়েস কল ও টেক্সট মেসেজের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে যুক্ত হয় বিপুলসংখ্যক টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারী।
ভারতের টেলিকম ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, জিওর কারণে ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডাটা ব্যবহারের চিত্রই বদলে গেছে। ২০১৪ সালে দেশটির গ্রাহকপ্রতি মাসে ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৬২ মেগাবাইট, যা ২০১৭ সালে ২৫ গুণ বেড়ে ১ দশমিক ৬ গিগাবাইটে পৌঁছেছে।
অ্যাপ বাজার হিসেবে রাজস্ব প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকলেও মোট রাজস্ব সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ২৯ নম্বরে রয়েছে ভারত। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশটিতে মোবাইল অ্যাপ বিক্রি থেকে রাজস্ব এসেছে ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বর্তমানে স্মার্টফোনের তৃতীয় বৃহৎ বাজার যুক্তরাষ্ট্র মোট রাজস্ব সরবরাহকারী হিসেবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি থেকে আইওএস এবং গুগল প্লে স্টোরের মিলিত রাজস্ব এসেছে ৩২০ কোটি ডলার। অ্যাপ বাজার হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব সরবরাহকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে জাপান ও স্মার্টফোনের সবচেয়ে বৃহৎ বাজার চীন। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে এ দুই দেশ থেকে রাজস্ব এসেছে যথাক্রমে ২৭০ ও ২৪০ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে অ্যাপ বিক্রি থেকে রাজস্ব আয়ে শীর্ষ দেশগুলোর একটিতে পরিণত হবে ভারত।