আপনি কি তথ্যপ্রযুক্তির যুগোপযোগী কাজে দক্ষ? তাহলে লাখ লাখ টাকা কামানোর সুযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বর্তমানে ৭ লাখ তরুণ তাদের নিজেদের মতো করে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছে। কারো অধীনে নয়। বরং নিজের অধীনে, নিজেই পছন্দ করে ঘরে বসে কাজ করছে। বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক চাহিদায় আউসোর্সিংয়ে এক নম্বরে আছে। এ সেক্টরে আমাদের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে দু’দিনব্যাপী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) সামিট-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোববার (১৫ এপ্রিল) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এই আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, বিপিও’র জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও ব্রডব্যান্ড। আমরা দু’টোই নিশ্চিত করেছি। ১০ বছর আগেও ইন্টারনেট খরচ ছিল ১ হাজার মার্কিন ডলার। আর এখন সেটা হাতের নাগালে। এজন্যই দেশের তরুণরা ঘরে বসে আয় করে। যেটা ১০ বছর আগে চিন্তাই করা যেত না। গ্রাম পর্যায়ে আউটসোর্সিয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৭ লাখ তরুণের ডিজিটাল কর্মসংস্থান করেছি। তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেশের ১২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আইসিটি ল্যাব করে দিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই আইসিটি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে কম্পিউটার তরুণদের কাছে আর রহস্যময় থাকবে না। এক সময় আমাদের কাছে কম্পিউটার ব্যবহার ভয়ের বিষয় ছিল। অনেকেই ই-মেইল পাঠাতেও জানতেন না। এখন আর সেই অবস্থা নেই। সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের অর্জন অনেক। কিন্তু আমরা কখনো আত্মতুষ্টিতে ভুগিনি। আরো অর্জন করতে চেয়েছি। এখনো অনেক অর্জন করতে চাই। এজন্যই আমরা মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত হচ্ছি। এটাই আমাদের চরিত্র। আইসিটিতে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট রয়েছে। আমরা এটা ধরতে চাই। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আইসিটি হাব হিসেবে দেখতে চাই। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবো। এরই মধ্যে আমরা গ্লোবাল লিডারে পরিণত হয়েছি। আমরাই প্রথম দেশের নামের আগে ডিজিটাল শব্দটি যোগ করেছি। আমাদের নকল করেছে যুক্তরাজ্য আর ভারত। তারা আমাদের পরে ডিজিটাল কথাটি এনেছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা আইসিটির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছেছি। তবে এই বিপ্লবের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা সংকট রয়েছে। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা আইসিটির জব মার্কেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং জানে না। আর প্রোগ্রামিং জানা-শোনাদের চাকরি খুঁজতে হয় না। প্রতিষ্ঠানই তাদের খুঁজে নেয়। তিনি বলেন, আমরা এবার আমাদের এই সামিটের থিম রেখেছি-‘ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’। কৃষিনির্ভর দেশ থেকে ক্রিয়েটিভ ইকোনমি নিয়ে ভাবনার বিষয় রয়েছে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটালে রূপান্তর করতে হবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত থাকতে হবে আইসিটি শিক্ষা। মন্ত্রী বলেন, বিপিওতে আমরা অনেক মিস করেছি। অনেক সুযোগ ইন্ডিয়া নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আমরা দেরিতে অংশগ্রহণ করেছি নেতৃত্ব দেওয়া জন্য, পিছিয়ে থাকার জন্য নয়। তাই বিপিওকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি’র (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) ৩৭ শতাংশ অর্জন হয় মেধাসত্তাকে কাজে লাগিয়ে। বাংলাদেশ কি সেটা পারে না। তিনি বলেন, মেধাসত্তাকে কাজে লাগানোর জন্যই ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেব। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ তরুণের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। এদের কাজে লাগাতে হবে। আইসিটিতে আয় করার জন্য উচ্চশিক্ষিত হতে হয় না। কিছু প্রশিক্ষণ নিয়েই কাজ করা যায়। আমাদের লার্নিং আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি পাস ছেলে-মেয়েরা তাদের গ্রামের বাড়িতে বসেই ডলার আয় করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (‘বাক্য’) আয়োজিত এ সামিটে অন্যদের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এমপি ও ‘বাক্য’ সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।