তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ই-গভর্নেন্সের পরিধি বাড়ছে। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ফলেই আমরা দ্রুততার সহিত ই-গভর্নেন্স এর পরিধি বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা নিশ্চয় অবগত যে, নয় বছর আগে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১ মিলিয়নেরও কম ছিল, বর্তমানে তা ৮০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৮ সালে মাত্র ২/৩ ধরণের সেবা অনলাইনে গ্রহণ করা যেত কিন্তু বিগত সময়ে আমরা শতাধিক সরকারি সেবাকে অনলাইনে সহজলভ্য করেছি। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে আমরা ২০২১ সালের মধ্যেই ৯০ শতাংশ সেবা অনলাইনে সহজলভ্য করতে কাজ করে চলেছি।’ মঙ্গলবার দুপুরে এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিনে “হাউ টু ম্যানেজ ডিজিটাল সিটিজেন সেন্ট্রিক ই-গভর্নেন্স?” শীর্ষক প্যানেল আলেচনায় অংশ নিয়ে অনুষ্ঠানের সচ্ছালক লিনার ভিকের প্রশ্নের জবাবে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ কথা বলেন। “কিভাবে সরকার সরকার দ্রুত ডিজিটাল পরিবর্তনগুলোতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ই-গভর্নেন্স নিশ্চিত করছে?” এই প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী পলক এ সময় আরও বলেন, আমরা দেশের ৩ ধরণের জনগণকে টার্গেট করেই ই-গভ সেবা বিস্তৃত করছি। যেমন ডিজিটাল নেটিভস- যারা ইন্টারনেট যুগেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠছে; ডিজিটাল এডাপ্টারস- ক্রমাগতভাবে যারা নিজেদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পৃক্ত করছে; আর ডিজিটাল আউলেয়ার্স – যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না এবং ব্যবহার করতেও ইচ্ছুক নয়। এই ডিজিটাল আউটলেয়ার্সদের ইন্টারনেট সেবায় নিয়ে আসাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা সারাদেশে পাঁচ সহস্রাধিক ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছি। এখন তাদেরকে এ সকল ডিজিটাল সেন্টারে এসে ই-গভ সেবা গ্রহণে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়াও, আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিস্তৃত করছি এবং জনগণের প্রয়োজনীয় সেবাগুলোকে অনলাইনে নিয়ে আসতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। বিশাল জনসংখ্যাকে এত দ্রুততার সাথে ই-গভ সেবায় নিয়ে আসতে মূল উপাদান কি? – সঞ্চালক ভিকের এমন প্রশ্নে পলক বলেন-সেবার সমন্বয় সাধনই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ই-গভ সেবার আওতায় নিয়ে আসতে অনন্য উপাদান। স্বল্প সময়ে, কম খরচে এবং বারবার সরকারি অফিসে জনগণকে যাতে বারবার ধর্ণা না দিতে হয়, সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা ই-গভর্নেন্স পরিকল্পনা করেছি। ফলে, সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ, সংস্থা জনগণের জন্য আলাদা আলাদা অনলাইন সেবা চালু করে। প্রাথমিকভাবে সে সকল সেবা প্রদানে সমন্বয় ছিল না বললেই চলে। সেবা প্রদানে সমন্বয় আনতে পরবর্তীতে আমরা তিনটি বিষয়ের ওপর মনোযোগ দেয়: ভেরিফায়েবল ডিজিটাল আইডেন্টিটি– ৯০ মিলিয়নের অধিক জনগণ বর্তমানে যাচাইযোগ্য ডিজিটাল আইডেন্টিটির আওতায় এসেছে; ডিজিটাল পেমেন্ট প্লাটফর্ম– আয়করসহ নানাবিধ সরকারি সেবা গ্রহণ করতে জনগণ এখন প্রায় সকল ধরণের ফি/বিল অনলাইনে পরিশোধ করছে; ইন্টারঅপারেবল ফ্রেমওয়ার্ক- -সরকারি সংস্থাগুলোর সেবাসমূহ ইন্টারঅপারেবল করা। ইন্টারঅপারেবিলিটির ক্ষেত্রে আমরা বেশ অগ্রগতি পেয়েছি। কিন্তু ইন্টারঅপারেবিলিটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এজন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় খুবই জরুরী। কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্সটি কালজুলেইদ(Kersti Kaljulaid) বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৪ বিলিয়নেরও অধিক মানুষ অনলাইনের সাথে সংযুক্ত এবং মানুষ এখন গড়ে ৬ ঘন্টারও অধিক সময় অনলাইনে ব্যয় করে। সেজন্য জনগণকে আমরা ডিজিটাল সিটিজেন হিসেবে গণ্য করছি এবং অনলাইনেই তাদেরকে সকল ধরণের সরকারি সেবা দেয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে ই-গভর্নন্সে নিশ্চিত করতে বিশ্ববাসীর একযোগে কাজ করতে হবে। দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনের প্যানেল আলোচনায় সেন্ট লুসিয়ার প্রধানমন্ত্রী এলেন চ্যাস্টনেট(Allen Chastane), স্মার্ট কাতালোনিয়া, স্পেনের পরিচালক ডেনিয়েল মার্কো(Daniel Marco) অংশ নেয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অব স্মার্ট গভর্নমেন্ট, ইজিএ(এস্তোনিয়ান গভর্নমেন্ট একাডেমী) এর লিনার ভিক(Linnar Viik).