প্রযুক্তি খবর

আমাজন শেকড় থেকে যেভাবে শিখরে এল

By Baadshah

February 25, 2018

পৃথিবীতে বড় বড় কোম্পানি গুলোর নাম মনে করলে যেই নামগুলো আমাদের সামনে এসে হাজির হয় তাদের মধ্যে আমাযেজন অন্যতম । বর্তমানে আ্য্মাজন হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অনলাইন শপিং রিটেইলার কোম্পানি যা ব্যবসা করে ই-কমার্স ও ক্লাউডিং পদ্দ্বতির মাধ্যমে । ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস এর হাত ধরে এই কোম্পানির সূচনা হয় । নিজের প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখতে কে না চান । তেমনি জেফ বেজোস এর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এখন পৃথিবীতে অনলাইন শপিং এর সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হল আমাজন ।কিন্তু আ্যরমাজনের আজকের এই অবস্থানে আসার জার্নিটা এত সহজ ছিল না।ছোট্ট একটি অনলাইন বইয়ের শপ থেকেই আজ বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস । আমাজন ডট কম শুরুতে অনলাইন বই দিয়ে ব্যবসা আরম্ব করলেও বর্তমানে সকল ধরনের পণ্য বা সেবা পাওয়া যায় এই কোম্পানী ঝুলিতে। ১৯৯৫ সালে জেফ বেজোসের পার্সোনাল মেইলিং এর মাধ্যমে আমাজন অনলাইনে প্রথম বই বিক্রি শুরু করেছিল ।১৯৯৯ সালে আমাজন বইয়ের বাইরে গেজেট, খেলনা ,ইলেকট্রনিক্স সফটওয়্যর, বাড়ির ব্যবহিত সামগ্রী এবং ভিডিও গেমগুলোতে চলে যায় । তার এক বছর পরেই এটি “মার্কেটপ্লেস’’ চালু করে , যেখানে তৃতীয় পক্ষগুলি আমাজন প্লাটফর্মে বিক্রি করে দেয় এবং বছরের পর বছর নতুন পন্য ও সেবা যোগ করছে। দিন দিন আমাজন কোম্পানির ব্যবসায় তুঙ্গে উঠার বেশ কয়েকটি কারন লক্ষণীয় । বেশীর ভাগ কোম্পানি গুলো যেইখানে লাভের পিছনে ঘুরছে সেখানে আমাজন হাঁটছে তার উল্টো পথে । জেফ বেজোস কাজ করছেন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে । যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির উপর মানুষ দিন দিন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে তাই জেফ বেজোসের মূল লক্ষ্য হল ই-কমার্স ও আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস ব্যবসায়ে আরও বিনিয়োগ বাড়ানো। ই-কমার্সের কল্যাণে যত শপ বা বিক্রেতা বাড়ছে,ততই খুচরা ব্যবসায়ী বা রিটেইলার ও উৎপাদকরা আমাজনের দিকে ঝুঁকছে তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য ।সেজন্য আমাজন নতুন নতুন সেবার সম্প্রসারনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং তাদের আয়ের পরিমান ও দিন দিন বেড়েই চলছে । যেমন গত কয়েক বছর ধরে গ্রাহকের নিকট ড্রনে করে পণ্য সরবারহ, কিন্ডল ই-পাঠক, ভয়েস বা কণ্ঠস্বর পরিচালিত ভার্চুয়াল আলেক্সা, আর্টিফিশিয়াল হোম সহকারি,অনলাইন পেমেণ্ট, ফায়ার টিভি সার্ভিসেস মাধ্যমে গ্রাহকের আকর্ষণ সৃষ্টি করছে। তবে বর্তমানে আমাজন যেই দুইটি লাভজনক ব্যবসায়ের ফাঁদ পেতে তরতর করে বাড়ছে সেগুলো হচ্ছে হোল ফুডস মার্কেট ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে । শুধু তাই নয় বিভিন্ন গবেষনা দেখা গিয়েছে আমেরিকায় বিগত কয়েক বছর ধরে ক্লথিং ও অন্যান্য এক্সেসরিস বিক্রির পরিমান দ্বিগুন বেড়েছে যার বেশীর ভাগ ক্রেতাই ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। এই সকল নতুন গ্রাহকের ব্যয় করা অর্থের অর্ধেক অংশই যাচ্ছে আমাজনের ঝুলিতে ।তবে ব্যর্থতা যে একেবারেই নেই তা নয়, কারন মোবাইল ফোনের দুনিয়া সফল হতে পারেনি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে দিনে দিনে গ্রাহকের চাহিদা বাড়ার ফলে কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি হাজার হাজার রোবট নিযুক্ত করেও এই কোম্পানী হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এনে গ্রাহকের নতুন ধরনের উপযোগিতা বৃদ্ধি করছে বলে বিনিয়োগকারীরাও এখন বিনিয়োগ করতে পিছপা হচ্ছে না বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এই কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে । সেইজন্য দিনে দিনে আমাজন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে ।বিনিয়োগকারীরাও ধারনা করছেন যে , ভবিষ্যতে লাভের পরিমান অনেকগুন বেড়ে যাবে । কারন আমাজনের মত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান সল্প মুনাফা দেখিয়ে এত সাফল্য পায়নি ।সেইজন্য গত বছর ১ হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে এই বৃহত্তমও অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি । তাই এই বছরের শুরুর দিকেই মাইক্রোসফটকে কে হটিয়ে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ কোম্পানির খেতাব অর্জন করেছে আমাজন । এখন বিশ্বের সবচেয়ে গ্রাহক কেন্দ্রিক কোম্পানি এবং শীর্ষস্থানীয় ক্লাউড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হল আমাজন । কিন্তু আমাজন এই পদবী কতদিন ধরে রাখতে পারবে তা এখন দেখবার বিষয় । কারন প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো হাত গুটিয়ে বসে নেই । তারা ও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবা সম্প্রসারনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে গ্রাহকের দ্বারপ্রান্তে পোঁছানোর জন্য । ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আমাজন এর সাথে প্রতিযোগিতা করছে মাইক্রোসফট।এখন মাইক্রোসফটের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে, অন্যদিকে ওয়াল-মারট নিজদের অব্স্থান আরেকটু শক্ত করার জন্য অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম আরও বাড়িয়েছে যার ফলে মুনাফাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাই আমাজনের কর্ণধার বেজোসকে সামনের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে । কারন জেফ বেজোস এর একটি ভুল সিদ্বান্ত কে কাজে লাগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি গুলো সাফল্যের মূল মঞ্চে উঠতে পারবে। তাই এখন সবার দৃষ্টি এখন জেফ বেজোস এবং সময় এর দিকে ।

লেখক: জান্নাত কাদের চৌধুরী । লেখক, সার্চ ইংলিশ গ্রুপ।