ইন্টারভিউ

আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠা: কামরুল হাসান

By Baadshah

November 30, 2018

অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহায়ে মাত্র ঢাকায় এসেছি। হাতে সামান্য কিছু টাকা। যা নতুন করে কিছু শুরু করার জন্য একেবারেই অপ্রতুল। এই বড় শহরে আমার পরিচিত তেমন কেউওই ছিলো না। তেমন কারো থাকে পরিচয়ও নেই। যদিও আমি আত্মকেন্দ্রিক, তবুও কখনো ভাবিনি যে, আমাকে দিয়ে এটা হবেনা, ওটা হবেনা। তবে, এবার আর টাকা নয়, আগের লস করাটাকেই পুঁজি হিসেবে নিয়েছি। তবে ব্যবসাটা শুরু করি খুব অল্প পুঁজিতে। ২০১৪ এর শুরুতে আরেক বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সহ দুই বন্ধুমিলে পল্টনে একটা রুম নিয়ে শুরু করি “ওয়েব ডিজিটাল টেকনোলজি” নামক মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট সেলস এন্ড সার্ভিস সেন্টার। বছর দুয়েক পর সেটি আর একসাথে চালানো যায়নি। তারপর বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে।

এবার নিজে কিছু একটা করার অদম্য ইচ্ছা নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছি। চাকরীটা যখন মেডিকেল টেকনোলজিতেই করেছি, তাই হেলথকেয়ার রিলেটেড কিছু করাটাই সুইটেবল মনে করেছিলাম। ওয়েব ডেভলপার খুবকাছের এক কাজিনের পরামর্শে অনেক ভেবেচিন্তে একদিন অল্পকরে শুরু করি “মেডিস্টোর” নামক এই প্রতিষ্ঠানটি। চলার পথটা কখনোই মসৃণ ছিলোনা। এমনিতেই এদেশের মানুষ এখনও খুব একটা অনলাইনে কেনাকাটা করেনা। তাছাড়া এই সব পণ্যর ক্রেতাও অনলাইনে খুব একটা নেই। তাই খুব ধীরে ধীরে এগোতে হচ্ছে।

শুরুটা যখন প্রায় শূন্য থেকেই করেছি, তাই পরিশ্রমটাও বেশ করতে হচ্ছিলো। আমি সহ মাত্র ৩জনে মিলে কাজ করি। সাইট ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং, অনলাইন মার্কেটিং, প্রোডাক্ট কালেকশন, প্রসেসিং, ডেলিভারী সব এই ৩ জনকেই করতে হচ্ছে। শুরুতে অনলাইনে বেচাকেনাটাও খুব বেশী ছিলোনা। এমনও দিন গেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৩/১৪ ঘন্টা বাইরে কাজ করেও, রাতে বাসায় ফিরে ৩/৪টা অব্দি কম্পিউটারে বসে আবার সাইটের অন্যান্য কাজ করতে হয়েছে। তাও মাত্র ১/২টা অর্ডার ছিলো। এভাবেই একটু একটু করে এগিয়ে আজকে ৯/১০ জনের প্রতিষ্ঠান মেডিস্টোর। ব্যবসা শেখার প্রয়াসে নিজেই প্রথমে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করে তা আবার সারাদিনে ঘুরে ঘুরে সারা ঢাকা শহরে ডেলিভারী করতাম। জানতাম আলাদা ডেলিভারী ম্যান নিয়োগ দিয়ে আমার পোষাবে না।

…শুরুটা গল্পটা যেমন ছিল

২০০৬ এ আমার উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলার আসল শুরু। মাত্র ২লক্ষ টাকা দিয়েই ব্যবসাটা শুরু করি। আবেগের কাছে টাকাটা তুচ্ছই ছিলো। চোখে অগাধ স্বপ্ন ছিলো, মনে ছিল দৃঢ়বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসেই এখন মেডিস্টোর ৫০ লক্ষ টাকার প্রতিষ্ঠান। এখন সেসব কথাই ভাবি, ভেবে আনন্দ পাই। তবে এটাকে সফলতা হিসেবে নিচ্ছিনা এখনো। একদিন মেডিস্টোর অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হবে এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, ঠিক যে বিশ্বাসে ভর করে এই যাত্রাটা শুরু হয়ে ছিলো।

আমি মনে করি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যা খুবই জরুরি তা হলো, সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা এবং সেই লক্ষ্যে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া। পড়ে যাবার, পিছিয়ে পড়ার ভয় মনে ভেতর যেন না আসে তা খেয়াল রাখা। ব্যবসা করতে প্রচুর টাকা লাগে, আমার যথেষ্ট টাকা নেই; এইসকল নীতিবাক্যে আটকে রাখিনি নিজেকে। চলার পথটা কখনোই মসৃণ ছিলোনা, অন্য দশজন সফল ব্যক্তির মতো অতো স্মার্ট আমি নই। ভেঙ্গে পড়িনি। এবং এটাও ভাবিনি যে আমাকে দিয়ে আর হবেনা। বা আবার নতুন করে শুরু করাটা অনেক কঠিন।

চিন্তা করেছি যদি পরিশ্রম করে যাই আর লক্ষ ঠিক রাখি, তাহলে সফলতা একদিন আসবেই। কঠোর পরিশ্রম করার কারণে সফলতা আসতে বেশীদিন লাগেনি। আমার সফল হওয়ার পেছনের শক্তি হচ্ছে সততা, নিষ্ঠা, মনবল ও অন্যকে না ঠকানোর প্রতিজ্ঞা। এবং বিশ্বাস করতাম এসব অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করলে, যে কেউ যে কোনো কাজে সফল হতে পারে। অদম্য ইচ্ছা, পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে কীভাবে নিজের একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় তা আমি বুঝেছি। উদ্যোগ বা ব্যবসায় সফল হতে একাগ্র্যতা আর পরিশ্রমই মূল মন্ত্র।

…পেছনের গল্পটা যেমন ছিলো

২০০৭ এ চাকুরী ছেড়ে দিয়ে গ্রোবাল ইন্টারন্যাশনাল নামে প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক মেশিনারীর ব্যবসা শুরু করেছিলাম। শুরুটা বেশ জাঁকজমক এবং ভালোই ছিলো। সেই ভালো থেকেই ২০১০ এ শুরু করি “ল্যাব ওয়ান মেডিকেল সেন্টার” নামক প্রতিষ্ঠানটি। এবার সোয়া কোটি টাকার এই প্রতিষ্ঠানটি সহ আরও কয়েকটি ব্যবসায় জড়িয়ে পুঁজি সল্পতায় প্রায় দিশেহারা অবস্থা। কোন কিছুর কুলকিনারা করতে না পেরে ২০১৪ এ শুরুতে ওখান থেকে সরে আসি প্রায় কোটি টাকা লস করে। এর পর এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি কিছুদিন। কোনোটিই আর ভালোভাবে হয়ে উঠেনি।

নিজের পরিকল্পনা হলো আবার নতুন করেই শুরু করবো। “যে মাটিতে আছড়ে পড়েছি, সে মাটি ধরেই উঠে দাড়াবো” এমনতা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতাম। একবার যখন পেরেছি, আবারও পারবো। দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি, যে কোনো কাজে আন্তরিকতা ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে এবং সে লক্ষ্যে শ্রম দিলে মাঝেমধ্যে ব্যর্থতা এলেও এক সময়ে গিয়ে সফলতা আসবেই। অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহায়ে ২০১৪এর শুরুর দিকে ঢাকায় চলে আসি। অল্প টাকা নিয়ে হন্য হয়ে খুঁজছি কি করা যায়!

মেডিস্টোর কি

মেডিস্টোর নামকরণটা আদতেই অতিসাধারণ। যদিও স্বাস্থ্যসুরক্ষা, সৌন্দয্য এর এর সকল প্রকার সামগ্রী নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই। কিন্তু স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যকেই আমরা প্রায়োরিটি দিচ্ছি আপাতত। সাথে ডায়াগনস্টিক, ল্যাবরেটরী, সারজিকেল, ফাস্ট এইড সহ সকল পণ্যই আমরা গ্রাহকের দোরঘোড়ায় পৌছাতে চাই। মানুষের ৫টি মৌলিক অধিকারের প্রধান একটিই হলো স্বাস্থ্য। এই স্বাস্থ্যসুরক্ষায় মানুষের সচেতনায় সহযোগী হতেই আমরা শুরু করেছি মেডিস্টোর। ৪টি মূলমন্ত্রে আমরা কাজ করতে চাই। ক, সঠিকমান সম্পন্ন পণ্য ; দুই, বিক্রোয়াত্তর সেবা নিশ্চিতকরণ; তিন, গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং চার, বিশ্বাস ও মূল্যবোধ ।

মেডিস্টোর বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দয্য পণ্যর সবছেয়ে বড়, এবং একমাত্র অনলাইন প্লাটফর্ম। যেখানে যেকোন স্বাস্থ্য অথবা সৌন্দয্য সচেতন ব্যক্তিগন তাদের প্রয়োজনীয় যে কোন স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দয্যর সকল পণ্য সহজেই এক জায়গাতেই পেয়ে যাবেন। এবং যে কোন প্রকার হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক মেশিনারীও পাচ্ছেন এখানে সহজেই। বর্তমান এই যান্ত্রিকযুগে মানুষ যখন নিজেদের এই কর্মব্যস্ত জীবনে অবসর সময় খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি নিজের শরীর ও সৌন্দয্যর দিকেও লক্ষ্য করার কথা দিব্বি ভুলে যায়, ঠিক সেই মূহুর্তেই “মেডিস্টোর” আপনাকে একটি সহজ উপায়ে পেতে সাহায্য করছে।

এখন ঘরে বা অফিসে বসে যে কেউ কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোন দিয়ে ভিজিট করে এবং মাউসের ক্লিক অথবা আঙ্গুলের ছোঁয়াতেই www.medistorebd.com এ খুঁজে নিতে পারবে প্রয়োজনীয় পছন্দের স্বাস্থ্যসুরক্ষার কিংবা সোন্দয্য পণ্যটি। এবং সহজেই অর্ডার করতে পারবে দৈনন্দিন প্রয়োজনিয় ডায়াবেটিস মিটার, ডায়াবেটিস টেস্ট স্টিপ, ডিজিয়াল ওয়েট স্কেল, ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন, থার্মোমিটার, হট ওয়াটার ব্যাগ, ফাস্ট এইড বক্স সহ যে কোন স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্য। এছাড়াও আল্টাসানোগ্রাফী, এক্স-রে, ইসিজি, হরমোন, বায়োকেমিস্ট্রি এজানাইজার সহ যে কোন ডায়াগনষ্টিক পণ্য সামগ্রী।

মেডিস্টোর কেন?

স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যগুলো মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে চাই। “সুস্থ্য থাকুন, সুখে থাকুন” এই প্রতিপাদ্য নিয়েই আমাদের স্বপ্ন যাত্রা। স্বপ্নদেখি একটু সুন্দর, সুস্থ্য, সুখী বাংলাদেশের। এই স্বপ্নের লালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েই যানজটের এই যান্ত্রিক শহরে মেডিস্টোর মূল্যবান এবং প্রয়োজনীয় সময়ের কথা মাথায় রেখেই স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটার কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে মেডিস্টোর। এখন যে কেউ ব্যাক্তিগত মূল্যবান সময় আপনার প্রিয়জনদের সাথেই কাটাতে পারে। কারণ,পরিবারের দৈনন্দিন যে কোন স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দয্যপণ্য সহ অসংখ্য প্রয়োজনীয় পন্য খোঁজার ও কেনার দায়-দায়িত্ব এখন মেডিস্টোরের। আমাদের প্রতিটি পণ্যরই রয়েছে নিশ্চিত ৭দিনের রিপ্লেস গ্যারান্টি। আমাদের সকল ডায়াবেটিক টেস্ট মিটারেই রয়েছে লাইফ টাইম রিপ্লেস গ্যারান্টি। এবং আমাদের ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন, ডিজিটাল ওয়েট স্কেল, ডিজিটাল থার্মোমিটার সহ যে কোন পণ্যই পাচ্ছেন ১-৫ বছরের নিশ্চিত ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি।

ডেলিভারী চার্জে? না! ডেলিভারী একেবারেই অল্প মাত্র। আমরাই ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়ায় মাত্র ৫০টাকায় নিজস্ব ডেলিভারী ম্যানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পছন্দের পণ্যটি অর্ডার এর মাত্র ১২-২৪ ঘন্টায় নিশ্চিত ডেলিভারী করছি। আর ঢাকার বাহিরে যে কোন পণ্য মাত্র ১০০ টাকায়, এস এ পরিবহণ, জননী, সুন্দরবন কুরিয়ারের মাধ্যমে ২৮-৪৮ ঘন্টায় ডেলিভারী দিচ্ছি। মেডিস্টোরের বছরে ৩৬৫ দিন/ সপ্তাহে ৭ দিন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা। পন্যের দাম নিয়ে ভাবনা? আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারে্ন যে কেউ !!! বিশ্বাস না হলে, আমাদের ওয়েব সাইট (https://www.medistorebd.com) ভিজিট করে মূল্য যাচাই করে নিন।

লেখক: কামরুল হাসান, সিইও, মেডিস্টোর