দারাজকে কিনে নিল আলীবাবা। এ কথা সবার জানা। বলা হচ্ছিল এ কেনা কাটার মাধ্যমে দেশের ই-কমার্স খাত অনেক এগিয়ে যাবে। প্রকৃত অবস্থা কি তাই? আসলে আলীবাবা দারাজকে কেনায় দৃশ্য্যত কোনো পরিবর্তণ হচ্ছে না। দারাজ তার নামেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে দারাজের কাজে কিছু গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। দারাজের এক কর্মকর্তা জানান, আলীবাবার অধীনে যাওয়ায় এখন এগিয়ে যাবে দারাজ। প্রযুক্তিগত উন্নতি হবে। আলীবাবার অনেক প্রযুক্তি আসবে দারাজ। এ ছাড়া অনেক লোকবল নিয়োগ হতে পারে। বড় পরিসরে কাজ করবে দারাজ। আলীবাবার অধীনে যাওয়া নিয়ে ই-ক্যাবের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে এমন দিন আসবে তা আমি ২০১৫ সালে অনেক বার বলেছি এবং আলিবাবা দারাজকে কিনে নিয়েছে এতে আমি অবাক হইনি। এমন ঘটনা প্রতি দিনের হবে এক সময়। ই-ক্যাবের কারনে বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি অনেক দ্রুত শক্ত ভিতের উপর দাড়িয়ে গেছে এবং এটি বড় হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আলিবাবা, আমাজন, ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজন সবাইকে বাংলাদেশের বাজারে ২০২০ সালের মধ্যে দেখবেন ই-কমার্স খাতের বাজার ধরার জন্য চেষ্টা করবে। এটি হবেই কোন সন্দেহ নেই। রাজীব আহমেদ বলেন, দারাজকে কেনায় লাভ ও লস দুইই হবে। এসব বড় বড় কোম্পানির সাথে টিকে থাকা কঠিন। তবে আলিবাবা বা অ্যামাজন যে মডেলে ব্যবসা করে সেখানে তারা দেশের বা লোকাল উদ্যোক্তাদের সাথে মিলে মিশে বাজার করবে। তাই একদিকে এটি ইতিবাচক। বাংলাদেশের পন্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার ব্যপারেও আলিবাবা অনেক বড় ভুমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশ নিয়ে আলিবাবার কি চিন্তা তা বুঝতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। মে মাসের শুরুতে জার্মানির রকেট ইন্টারনেটের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স কোম্পানি দারাজ গ্রুপকে কিনে নেওয়ার কথা বলে চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলীবাবা। এই চুক্তির ফলে দারাজ এখন আলীবাবার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির ফলে আলিবাবার অভিজ্ঞ নেতৃত্বে প্রযুক্তি, অনলাইন কমার্স, মোবাইল পেমেন্ট এবং লজিস্টিকস দ্বারা লাভবান হবে দারাজ, যা নিশ্চিত করবে দক্ষিণ এশীয় পাঁচটি দেশের সফল উন্নতি ও অগ্রগতি। ২০১২ সালে কার্যক্রম শুরু করে দারাজ। বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে দারাজ ব্যবসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাংলাদেশে দারাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কি করবেন ধারণা করা হচ্ছে, আলীবাবার আগমনে ই-কমার্স সেক্টরে কিছু পরিশোধন দেখতে পাবো আমরা। মার্কেটপ্লেসের বড় যেই দ্বায়িত্ব যে পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করা সেদিকে উন্নতি হবে আশা করা যায়। আফটার সেলস সার্ভিসে কাজ করার আছে অনেক, রিটার্ণ/রিফান্ড নিয়েও অনেক ইস্যু এখন। বড় আরেকটি সমস্যা পণ্যের ডেলিভারি এবং ইন্সুরেন্স সিস্টেম। অনলাইন পেমেন্টের হারও বাড়াতে চাবে তারা, অন্তত বিকাশের মাধ্যমে তো অবশ্যই। বিদেশি বড় কম্পানিগুলো আসলে কিছু স্টান্ডার্ড প্রসেস অনুসরণ করে যাতে এই প্রক্রিয়াগুলো সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। আলীবাবাও সেগুলো এখানে প্রয়োগ করার চিন্তা নিশ্চই করবে। তবে কাজটি আমাদের দেশে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ ইন জেনারেল আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে অলসতা, শর্টকাট, দূর্নীতি, কমিটমেন্টের অভাব এগুলো প্রবল বিদ্যমান। সময় লাগবে, আলীবাবার সাথে প্রতিযোগীতায় দেশি বিদেশি সব প্রতিষ্ঠানকেই এই প্রসেস ডেভেলপমেন্টে কাজ করতে হবে, আশা করা যায় সামগ্রিকভাবে ই-কমার্সের সার্ভিস ভাল হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আলীবাবার দেশে আসা নিয়ে কি চিন্তা বা করণীয় কি। আলীবাবা আসলেও তারা ব্যবসা করবে কিন্তু আমাদের দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং তাদের পণ্য নিয়েই। তবে যারা চাইনিজ হাবিজাবির ব্যবসা করেন, সেগুলোতে অতিরিক্ত প্রফিট মার্জিন রাখেন তাদের মনে হয় একটু সতর্ক হতে হবে। যে কোন চাইনিজ প্রোডাক্ট আলীবাবা চাইলে নিজেদের চীনা ভেন্ডরদের থেকে এনে দেশেই স্টক করে বিক্রি করতে পারে। এই জায়গা ঐ জায়গা থেকে সোর্সিং করা পণ্যের চেয়ে দেশে উৎপাদিত পণ্যের নিস নিয়ে কাজ করা ভাল হবে। সবচেয়ে লাভবান হবেন দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারীরা বোধ করি। তাদের পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রয়ের ভাল মাধ্যম হতে পারে আলীবাবা।