মানুষের ইনকাম করার ও বিখ্যাত হওয়ার ধরণ বদলে দিয়েছে ইন্টারনেট। ইউটিউব, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে এখন এমন অনেক পরিচিত মানুষকেই পাবেন যা রীতিমতো সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন এবং দেদারসে টাকা কামাচ্ছেন। হুট করেই তারকা বনে যাওয়া বা অনেক টাকা আয় করার পদ্ধতিটি কিন্তু জটিল কিছু নয়। ইউটিউব, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলো এখন যাঁদের মেধা আছে তাদের জন্য দারুণ কাজের। মেধা থাকলে তার রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট তুলে নেওয়া কঠিন কিছু না। অনেক তারকার চেয়ে সাধারণ কিছু মানুষের ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটার অ্যাকাউন্টে ফলোয়ার বা ভক্তের সংখ্যা বেশি।
রীতিমতো ফেসবুক শেনসেশন বা সেলিব্রেটি হয়ে যাওয়ার সুবাদে বা ভাইরাল ভিডিওর সুবাদে একবার জনপ্রিয় হতে পারলেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আয় করা যায়। পণ্যের প্রমোশন থেকে শুরু করে নানা বিষয় প্রচার করে অর্থ আয়ের সুযোগ পাওয়া যায়। এ ধরনের তারকাদের আয় কতো? ‘সেলফি মেইনে লে লি আজ’ হিট গানটির পর ‘ঢিনচ্যাক পূজা’র আয় কত? কোরাতে একজন আগ্রহী ব্যবহারকারী জানতে চেয়েছিলেন? সেখানেই যোগেশ মালিওয়াড নামের একজন হিসাব করে যা দেখিয়েছেন তাতে চোখ কপালে ওঠার মতোই! শুরুতেই গুগলে অ্যাডসেন্স থেকে আসা আয় ধরা যাক। প্রতি এক হাজার ভিউয়ের জন্য গুগল থেকে আসে এক থেকে দেড় ডলার। যদি ১০ মিলিয়ন ভিউ হিসাব করেন তবে আয় দাঁড়ায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার। তাহলে এরকম এক তারকার রাতারাতি আয় একবার ভেবেই দেখুন। এসব তারকাদের যদি রাতারাতি এত আয় করার সুযোগ থাকে তবে আপনার মেধা আর বুদ্ধি কি কম? সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট কাজে লাগিয়ে কিভাবে এবং কতোটা আয় করতে পারেন তা জেনে নিন:
ইউিটউব ভুবন ভাম বা বিবিকিভাইনস নামের একটি ইউটিউব অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। ভারতীয় তারকাদের মধ্যে তার অ্যাকাউন্টটি ইউটিউব রিউইন্ডে ফিচার করা হয়। ওই অ্যাকাউন্টের ভিডিওর জন্য লাখো ভক্ত জোটে এবং ট্রেন্ড সেটার হন। কিন্তু ইউটিউবারদের ভাগ্য খারাপ। কিছুদিন পরেই ইউটিউব কিছু নিয়ম বদলে ফেলেছে। আগে কোনো রকম অ্যাকাউন্ট খুলে কাট-পিস ভিডিও দিয়েই অনেকে আয় করেছেন। ২০১৭ সালে পার্টনার প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনে ইউটিউব। ভিডিও নির্মাতাদের চ্যানেলের ভিউ যদি ১০ হাজার পার হয় তবেই চ্যানেল মানিটাইজ করার জন্য আবেদন করতে পারবে। নতুন চ্যানেল নির্মাতাদের এরপর রিভিউ প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ইউটিউবের নিয়মনীতি মানা হয়েছে কিনা সব যাচাই বাছাই করা হবে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের রেট কমে গেছে। প্রতি ব্যানার অ্যাডের ১০০০ ভিউয়ের জন্য এখন মাত্র ৮ সেন্ট করে দেয় গুগল। তবে রোল আউট অ্যাডের প্রতি ১০০০ ভিউয়ের জন্য পাঁচ থেকে ৮ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়। এখনকার সত্যিকারের ইউটিউবারদের জন্য এটাই এখন সুযোগ। নিজের ভিডিও ব্লগ বা ভ্লগ তৈরি করে তাতে দর্শক টানতে পারলেই বিশাল ইনকাম।
ফেসবুক এবার আসি ফেসবুকে ইনকাম করার কথায়। আপনি কি জানেন, ফেসবুক লাইভ থেকে আয় করার সুযোগ আছে? ফেসবুক লাইভে অ্যাড ব্রেকস নামের একটি নতুন ফিচার এসেছে। লাইভ ভিডিওর মাঝে সংক্ষিপ্ত সময়ের (১০-১৫ সেকেন্ড) বিরতিতে ওই বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। যদি ফলোয়ার সংখ্যা ২ হাজারের বেশি হয় এবং লাইভ দর্শক ৩০০ জনের বেশি হয় তবেই আয়ের সুযোগ থাকবে। কমপক্ষে চার মিনিট টানা চলার পর এ ব্রেক দেওয়া যায়। প্রথম ব্রেকের পর প্রতি ৫ মিনিট পর পর ব্রেক নেওয়া যায়। টানা চার মিনিট লাইভ চালানোর পর ফেসবুক বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য নোটিফিকেশন দিয়ে জানাবে।
ইনস্টাগ্রাম এবার আসি ইনস্টাগ্রামের কথায়। সারা বিশ্বে ৫০ কোটি অ্যাকাউন্ট ও ৩০ কোটি দৈনিক ব্যবহারকারী আছে ইনস্টাগ্রামে। বিখ্যাত ব্যক্তি থেকে শুরু করে তারকাসহ অনেকেই তাঁদের জীবনযাপনের অনেক বিষয় ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। ইনস্টাগ্রাম থেকে যারা আয় করতে চান তাঁদের ইনফ্লুয়েন্সার বলে। ইনফ্লুয়েন্সার হতে হলে কমপক্ষে তিন হাজার ফলোয়ার থাকতে হয়ে। যাঁদের ফলোয়ার বেশি তাঁদের কাছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে তাদের প্রমোশনের জন্য যোগাযোগ করে। এভাবেই বড় আয়ের সুযোগ তৈরি হয়। যাঁদের ফলোয়ার যত বেশি তাদের আয় তত বেশি। তিন হাজার বা তার কাছাকাছি ফলোয়ার থাকলে তাদের মাইক্রোইনফ্লুয়েন্সার বলে। প্রতিটি পোস্টের জন্য খরচ ধরা হয়। যাঁদের এক লাখ বা দেড় লাখের বেশি ফলোয়ার আছে তারা প্রতি পোস্টে ৪০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। সর্বনিম্ন পোস্ট প্রতি ৩ থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।