ইন্ড্রাস্ট্রির যে ভয় ছিল, তাই হল। অর্থমন্ত্রীকে, এনবিআরকে বোঝাতে পারেননি ইন্ড্রাস্ট্রির নেতৃত্বরা। ফলে আজ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ই-কমার্সে ৫% ভ্যাট বসানোর কথা বললেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এফ-কমার্স, ই-কমার্সসহ দ্রুত বেড়ে চলা ইন্টারনেট ব্যবসায় সরকার এ ধরনের ব্যবসায় কর বসাতে চাইছে। চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনে ভার্চ্যুয়াল ব্যবসায় কর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বেড়েছে। এই পণ্য বা সেবার পরিসরকে আরও বাড়াতে ভার্চ্যুয়াল বিজনেস নামের আরেকটি সেবার সংজ্ঞা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে অনলাইনভিত্তিক যেকোনো পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এই সেবার অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। ভার্চ্যুয়াল ব্যবসা সেবার ওপর ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ভার্চ্যুয়াল ব্যবসার যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাতে ই-কমার্স খাত পড়বে। তাই এ খাতে কর আরোপের প্রস্তাবে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বেসিসের সভাপতি আলমাস কবীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, একটা ইন্ড্রাস্টি বড় হতে ১০-১২ বছর লাগে। উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যবসায় করে। গ্রাহক আকর্ষণে নানা চেষ্টা করেন তাঁরা। ভ্যাট আরোপের ফলে উদ্যোক্তা ও ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তাই এ খাতে ভ্যাট বিলুপ্ত করা উচিত। বেসিসের সাবেক প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান বলেছেন, ই-কমার্স এবং অনলাইন শপিং এর উপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করা হয়েছে, যা ই-কমার্স ব্যাবসা তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা এই মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যহতির জোর অনুরোধ জানাচ্ছি। বিদেশিদের আগ্রাসনে দেশীয় ই-কমার্সগুলো রুগ্ন অবস্থায়। এখন যদি এই ভ্যাট আরোপ করা হয় তাহলে এখানে ভবিষ্যত বলে কিছু থাকবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন খাতগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড় দেয়া হয় ৮-১০ বছরের জন্য। যেন খাতটি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। দেশে যখন সব প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে আসছে, যেখানে সরকারের দীর্ঘমেয়াদে রেভিনিউ আর্নিংয়ের টেকসই সিস্টেম তৈরি হচ্ছে- সেখানে এই সিদ্ধান্ত সব ভেস্তে দেবে। ই-কমার্সের দ্রুত বিস্তারের জন্য মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। আমরা আইসিটির অন্যান্ন খাতের ন্যায় ই-কমার্স এবং অনলাইন শপিং এর উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যহতি পূনর্বহাল এর জোর দাবি জানাচ্ছি। প্রিয়শপের প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খাঁন জানান, বর্তমানে প্রতিবছর ই-কমার্স এবং অনলাইন শপিং থেকে যে পরিমাণ আয় হচ্ছে এর উপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য পেশকৃত প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করার প্রস্তাব হয়েছে, তাতে সরকারের রাজস্ব তহবিলে বছরে কয়েক কোটি টাকার বেশি যোগ করবে না। অন্যদিকে আগামী কয়েক বছরে এই সেক্টরে কয়েক লাখ তরুণ উদ্যোক্তা ও জনবলের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে এই সেক্টরে কয়েক লক্ষ তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এখন চাকুরির অপেক্ষায় বসে না থেকে অনলাইনে বুটিক, ই-কমার্সে পণ্য বিক্রয়, ডেলিভারিসহ রাইড শেয়ারে রাইডার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছে এখন তারা নিরুৎসাহিত হবে। এছাড়া এতে ক্রেতারা অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হতে পারে। তাই ই-কমার্স খাতকে গতিশীল করতে এই খাত অন্তত আরো ৪-৫ বছরের জন্য ভ্যাটমুক্ত রাখার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড় দেয়া হয় ৮-১০ বছরের জন্য।