অনেক প্রতিক্ষার পর এখন পাওয়া যাবে ই-পাসপোর্ট। নতুন এই পাসপোর্ট সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক তথ্য জানা নেই। যার ফলে ভুল ধারণা থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাইতো যারা ই-পাসপোর্ট করতে আগ্রহী তাদের এ সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো জানা জরুরি। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে যা যা জানা জরুরি-
অনলাইনেই পূরণ করা যাবে ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র। এছাড়া পিডিএফ ফরম্যাট ডাউনলোড করে কম্পিউটারে ফরমটি পূরণ করা যাবে।
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। এতে কোনো ছবির প্রয়োজন হবে না। কোনো ধরনের কাগজপত্রও সত্যায়িত করতে হবে না।
যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি/স্মার্ট আইডি কার্ড) নেই, তাদের পিতা এবং মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করে ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে।
১৮ বছরের নিচে সব আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তারা দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করতে পারবেন না, তবে বয়স আঠারোর বেশি হলে তখন দশ বছর মেয়াদের পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে।
দেশের অভ্যন্তরে নিয়মিত পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত কর্মদিবসের মধ্যে ডেলিভারি দেয়া হবে। জরুরি পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে। আর অতিজরুরি পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা।
কূটনৈতিক পাসপোর্ট পেতে আবেদনকারীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার উইং বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় বরাবর আবেদন করতে হবে। পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত তথ্য সংযোজন বা ছবি পরিবর্তনের প্রয়োজন না হলে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিতির দরকার নেই।
সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের চিপ থাকে। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই-পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) তথ্যভাণ্ডারে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।
সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম নামিয়ে নিয়ে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সেসব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
ই-পাসপোর্ট দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি তিন ধরনের। দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। এ জন্য ফিও বেশি গুনতে হবে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকার উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও আগারগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস এবং ৮০টি বিদেশি মিশনে চালু করা হবে।
আবেদন করবেন যেভাবে
ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে www.dip.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে গিয়ে আবেদন করা যাবে। সাইটে বাংলা বা ইংরেজি ভাষা নির্বাচন করে নেওয়ার সুবিধা আছে। সেখানে শুরুতেই অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন: নতুন/রি-ইস্যু বাটন পাওয়া যাবে। এখানে ক্লিক করে সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এর আগে দেখে নিতে পারেন ই-পাসপোর্ট আবেদনের ৫টি (পাঁচ) ধাপ। একটি ধাপ হচ্ছে বর্তমান বসবাসরত জেলাতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, তা দেখা। এর পরেরগুলো হচ্ছে অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম, পাসপোর্ট ফি পরিশোধ, ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ ও পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ। এর মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে, কাগজপত্র ও ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই, আবেদনকারীর ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি গ্রহণ, যথাযথভাবে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ হয়েছে কি না এবং তালিকাভুক্তির পর সরবরাহ করা ডেলিভারি স্লিপ সংরক্ষণ। পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ডেলিভারির রসিদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া সর্বশেষ পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে) নিতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়ে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যাবে। সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট দেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত চালু করা অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হলো স্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিকাশ ও ডিবিবিএল নেক্সাস। অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য আপনার ব্রাউজারের পপ-আপ ব্লকার অক্ষম করতে হবে।
ফি কত
৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের নিয়মিত সরবরাহ ৪ হাজার ২৫ টাকা, ১০ দিনের দ্রুত সরবরাহ ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, ২ দিনে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা। ৪৮ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিন ডেলিভারি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও ২ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠা ৫ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৬ হাজার ৩২৫, ১০ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৬২৫, ২ দিনের ডেলিভারি ১২ হাজার ৭৫ টাকা, ৬৪ পৃষ্ঠা ১০ বছর মেয়াদি ২১ দিনের ডেলিভারি ৮ হাজার ৫০, ১০ দিনের ডেলিভারি ১০ হাজার ৩৫০, ২ দিনের ডেলিভারি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
জেনে রাখুন
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে। অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপর বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে। ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপিও চালু থাকবে। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি তুলে নেওয়া হবে। আবেদন করার বিস্তারিত নিয়মাবলি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন চেক
ই-পাসপোর্ট পোর্টালে ‘স্ট্যাটাস চেক’ করা যাবে। জন্মতারিখ ও আবেদনের ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে সার্চ অপশনে ক্লিক করতে হবে। আপনার অনলাইন পোর্টাল অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার সব আবেদনের অবস্থা দেখতে পারেন।