দেশ

ই-পাসপোর্ট কিভাবে করবেন? কি সুবিধা এতে?

By Baadshah

July 27, 2018

ই-পাসপোর্ট শুরু হচ্ছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) যুগ শেষ হতে চলেছে। এবার আসছে ই-পাসপোর্ট। ডিসেম্বর মাসে চালু হতে যাচ্ছে এই পাসপোর্ট। ইতোমধ্যে জার্মানির একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ পাসপোর্টের একটি ‘চিপ’ সহজ করে দেবে বিশ্বভ্রমণ।

বিশ্বের ১১৮টি দেশে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট চালু রয়েছে। এবার যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে এতে থাকবে চোখের মণির ছবি ও আঙুলের ছাপ। এর পাতায় থাকা চিপে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য।

২০১৬ সালে এমআরপির পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একই সময় পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দিন থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হবে সেদিন থেকে এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে ই-পাসপোর্ট করতে হবে।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্টের নমুনা কপি অনুমোদন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।

জার্মানির প্রযুক্তি নিয়ে জিটুজির মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করা হবে। এর জন্য উড়োজাহাজ, স্থল ও নৌবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হবে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পেরিয়ে যাওয়া ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি লাইনে না দাঁড়িয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবেন।

সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে ই-পাসপোর্ট ও অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনাবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান ও জার্মানির ভেরিডোস কম্পানির সিইও কুনস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানি সফরের সময় ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

জানা গেছে, জিটুজি ভিত্তিতে টার্নকি পদ্ধতিতে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু থাকবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী ডিসেম্বর থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হতে পারে।

ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা আরো নির্ভুল, সহজতর, সময়সাশ্রয়ী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে বিশ্বের ১১৮টি দেশ এরই মধ্যে ই-পাসপোর্ট এনেছে। বাংলাদেশ ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট যুগে ঢুকছে। ই-পাসপোর্টের সব তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্নিয়া ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকার কারণে তা জাল করা সম্ভব হয় না।

প্রকল্পের আওতায় ভেরিডোস কম্পানি তিন কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি অ্যাসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পারসোনালাইজেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জার্মানিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি মূল্য তিন হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট ও এআইটি এক হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা। শুরুতে ২০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরবর্তী সময়ে ওই কারখানায় থেকে ই–পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়সভেদে ৫ ও ১০ বছর। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। এমআরপি ডাটা বেইসে যেসব তথ্য আছে তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

কেমন হবে ই-পাসপোর্ট ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ হবে বয়সভেদে ৫ ও ১০ বছর। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। তবে কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাঁকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে বর্তমানে পাসপোর্টের বইয়ের শুরুতে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে থাকবে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে একটি চিপ। সেই চিপে পাসপোর্টের বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।

ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।

ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডিতে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদামোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা হবে। যাঁদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, তাঁদের এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে হবে। তবে যাঁদের হাতে এমআরপি পাসপোর্ট থাকবে, তাঁদের ইমিগ্রেশনের কাজ বিদ্যমান পদ্ধতিতে চলমান থাকবে।

কিভাবে ই-পাসপোর্ট হবে প্রচলিত পদ্ধতিতেই পাসপোর্ট করা হবে। ঢাকা (ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়, ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট অফিস, ডাটা সেন্টার, পাসপোর্ট অ্যাসেম্বলি লাইন, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র), ৬৪টি জেলায় অবস্থিত ৭২টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিদেশে অবস্থিত ৮০টি বাংলাদেশ মিশন, যশোরে অবস্থিত ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার, দেশের অভ্যন্তরে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর (২টি স্থলবন্দরে স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল সিস্টেম, ২২টিতে ই-পাসপোর্ট রিডারের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন), ৭২টি এসবি ও ডিএসবি অফিস, মিউনিখ, জার্মানিতে রেফারেন্স পয়েন্টে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট বুকলেট সংগ্রহ (২০ লাখ সরাসরি আমদানি, ২৮০ লাখ দেশে তৈরি) করা হবে। ই-পাসপোর্টের জন্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, দশ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি ও ডিজিটাল স্বাক্ষর সংগ্রহপূর্বক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তথ্যসমূহ কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারের সার্ভারে সংরক্ষণ এবং পাসপোর্টের আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও দূতাবাসগুলোয় পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। কাজটি নিরবচ্ছিন্নভাবে করার জন্য সার্ভার, রাউটার, সুইচ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, ই-পাসপোর্ট রিডার, প্রিন্টিং মেশিন স্থাপন, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টলেশন সম্পন্ন করা হবে। জনবল নিয়োগ (প্রেষণে-৩২ জন, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে-১৯০ জন) দেওয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় যানবাহন সংগ্রহ করা হবে ২৫টি।