নদীনালাও পলিমাটিতে গড়া আউল বাউল লালনের এই বাংলাদেশে কম্পিউটার হাতে নিয়ে কেউ কিছু করছে এই দৃশ্যটি অনেকের কাছেসেদিনও অবাস্তব ছিল। তবে এই দৃশ্য আজ আর কাল্পনিক তো নয়ই বরং প্রযুক্তিকে দূরে রেখে যে একালে উন্নয়ন সম্ভব নয় তা আজ মেনে নিয়েছে সকলেই। তবে এখনও আমাদের দেশের অনেক অভিভাবকের ধারণা কম্পিউটার কেবলই বিনোদনের একটি উপকরণ মাত্র। একারণে সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট বয়স না হওয়া পর্যন্ত তাতে হাত দিতে দেন না।
তবে আশার কথা, এই চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন আসছে দ্রুত গতিতেই।বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে,তরুণ সমাজের ইন্টারনেটের ব্যবহারে দ্রুত দক্ষ হয়ে উঠা এবং সেইসাথে সরকার এর সীমাহীন পরিশ্রম আর সুদক্ষ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশটি এগিয়ে চলছে সমৃদ্ধির দিকে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেখানে দোদুল্যমান সেখানে প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর চিন্তা তো দূরের কথা জনগণের সাথে প্রযুক্তির সখ্যতা গড়ে তোলাই এক বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের বিশ্ব প্রযুক্তিকে অস্বীকার করে নয় বরং সাথে নিয়ে এগিয়ে চলছে।
পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এই সত্য অনুধাবন করতে পেরেছে যে, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আজদেশের কয়েক লাখ তরুণ দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে এটি অবশ্যই দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে রাখছে বিশাল ভূমিকা। আয়ের এই নতুন অথচ উন্নত পন্থাটি আরও ব্যাপকতা লাভ করবে যদি দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নত হয় এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচকমিয়ে আরও সহজলভ্য করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের ভূমিকা এবং পরিকল্পনা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এছাড়া প্রযুক্তির কল্যাণে এক দেশ থেকে আরেক দেশে টাকা পাঠানো দ্রুতকরণ হওয়ায় দিন দিন রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা ১১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেএই রেমিট্যান্স। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। গত কয়েক বছরে অভাবনীয় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটেছে এদেশের ব্যাংকিং খাতেও। দেশের সকল ব্যাংক এখন নিজ নিজ কাজের জন্য দেশী-বিদেশী উন্নত ও নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহার করছে যা তাদের কাজকে করেছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে গতিশীল। এতে করে মান বেড়েছেগ্রাহক সেবার। দেশের অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংক ইতোমধ্যে চালু করেছেঅনলাইন ব্যাংকিং সেবা। এতে করে এখন ঘরে বসেই মানুষ টাকা আদান প্রদান করতে পারছে। গ্রাহককে আর নগদ টাকার জন্য এখন আর ব্যাংক পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়না। অপরদিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটা উন্নত বিশ্বের মতোন সেভাবে শুরু না হলেও বেশ কিছু ওয়েবসাইট এই সেবায় তৈরী করেছে নিজেদের শক্ত অবস্থান। অদূর ভবিষ্যতে যে,মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেই ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় ক্রয় বিক্রয় সারবে এতে কোনো দ্বিমত নেই বললেই চলে। এসকল কর্মযজ্ঞই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কখনো মন্থর কখনো দ্রুত গতিতে অবদান রাখছে।প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আরো কিভাবে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভীত শক্তিশালী করা যায় সে ব্যাপারেও মানুষ সচেতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত “ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রচার কার্যক্রম শক্তিশালী করণ শীর্ষক কর্মসূচি ”
লেখক: Ehsanul Haque Fahim