এইচটিটিপিএস-এর পূর্ণ অর্থ হলো হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল (এইচটিটিপি) সিকিউরড। আপনার ব্রাউজার এবং ওয়েবপেজের মধ্যেকার তথ্য সুরক্ষিত রাখার প্রযুক্তি এইচটিটিপি-এর সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তা স্তর যুক্ত করে তৈরি হয়েছে এইচটিটিপিএস। এর অর্থ হলো এইচটিটিপিএসযুক্ত ওয়েবপেজে ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড প্রভৃতি সুরক্ষিত রাখার জন্য এনক্রিপশনের বিশেষ স্তর যুক্ত থাকে। অর্থাৎ আপনার ব্রাউজার এবং ওয়েবসাইটের মধ্যেকার সকল যোগাযোগ এনিক্রিপটেড থাকে।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মজিলা ফায়ারফক্স, গুগল ক্রোম সহ বেশিরভাগ ব্রাউজার ‘এইচটিটিপিএস’ প্রযুক্তির ওয়েবসাইটগুলোকে নিরাপদ হিসেবে ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে প্যাডলক আইকনসহ সবুজ রঙে ‘সিকিউর’ হিসেবে নির্দেশ করে থাকে।
এইচটিটিপিএস ব্যবহার না করলে সাইটকে চিহ্নিত করবে ক্রোম। ২৫ জুলা্থই কে ক্রোম ব্রাউজার যে সকল ওয়েবসাইট এইচটিটিপিএস বা সিকিউর প্রোটোকল ব্যবহার করবে না সেগুলোকে ‘নট সিকিউর’ বলে আখ্যায়িত করবে। পরিবর্তনটি ছোট হতে পারে, কিন্তু তার অর্থ ব্যাপক।ইন্টারনেটের শুরু থেকে সকল ওয়েবসাইট এইচটিটিপির মাধ্যমে কনটেন্ট ব্যভহারকারীর কাছে পৌঁছে দিত। পরে নিরাপত্তা বাড়াতে শুরু হয় সিকিউর এইচটিটিপি বা এইচটিটিপিএস ব্যবহার। কোনও সাইট এইচটিটিপিএস ব্যবহার করতে চাইলে তাদের সাইটটিকে কোনও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ বা সার্টিফিকেট নিতে হত। সার্টিফিকেট মিলিয়ে সাইটটি আসল কি না বা সেটি তথ্য আদান-প্রদান নিরাপদ ভাবে করছে কি না তা বোঝা যেত।
সাইট এইচটিটিপিএস ব্যবহার করলে ব্রাউজারে ‘সিকিউর’ বা একটি বন্ধ তালার আইকন দেখায়। অর্থাৎ এইচটিটিপিএস ছিল বিশেষত্ব, সকল সাইটে এটি ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করা হতো না।গুগল আজকে থেকে এইচটিটিপিএসকেই স্ট্যান্ডার্ড, আর সেই নিরাপত্তা না থাকাকেই অস্বাভাবিক হিসেবে নির্দেশ করতে শুরু করলো। এর মাধ্যমে যে সকল সাইট নির্মাতারা এখনো এইচিটিটিপিএস প্রটোকল ব্যবহার শুরু করেনি তাদের শুরু হলে চিহ্নিতকরণ।
আগামীতে এইচটিটিপিএসের জন্য আলাদা করে কোনও চিহ্নও দেখানো হবে না।
এইচটিটিপি (http) এর তুলনায় এইচটিটিপিএস (https) বেশি নিরাপদ কেন? ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে এইচটিটিপি কানেকশনে পাঠানো তথ্যগুলো ‘প্লেইন টেক্সট’ এ লিখিত হয়ে থাকে, যার মানে হ্যাকাররা সহজেই তা পড়তে পারে। আর এ বিষয়টি আসলেই দুশ্চিন্তার যদি তথ্যের মধ্যে ব্যক্তিগত ঠিকানা কিংবা ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ থাকে।
এর তুলনায়, এইচটিটিপি কানেকশনে সকল ধরনের যোগাযোগ এনক্রিপশন করা থাকে। ফলে কোনো হ্যাকার যদি হ্যাক করতে সক্ষমও হয়, তাহলেও আপনার ব্রাউজার এবং ওয়েবসাইটের মধ্যেকার তথ্য পড়তে পারবে না।
এইচটিটিপি ব্যবহার করছে কোন কোন সাইট? বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ওয়েবসাইটের মধ্যে ২০ শতাংশ ওয়েবসাইট এখনো এইচটিটিপি ব্যবহার করছে।
এইচটিটিপি প্রযুক্তির সাইট তাহলে ব্রাউজ করবেন না? অবশ্যই করবেন। সকল এইচটিটিপি কানেকশনের সাইট এড়িয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে যদি কোনো এইচটিটিপি সংযোগের ওয়েবসাইট আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চায়।
ম্যাকাফি অ্যান্টিভাইরাসের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, অনলাইনে শপিংয়ের ক্ষেত্রে, ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে, ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে বা অন্যান্য অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে সেসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করা ভালো, যেগুলো এইচটিটিপি এর পরিবর্তে এইচটিটিপিএস প্রযুক্তির। ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে প্যাডলক আইকন থাকলে বুঝতে পারবেন সেটি এইচটিটিপিএস প্রযুক্তির ওয়েবসাইট। যেটি নির্দেশ করে যে, ওয়েবসাইটটি নিরাপদ এবং এটি এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষিত রাখে, যা হ্যাক করা কঠিন।
ওয়েবসাইট এইচটিটিপিএস প্রযুক্তির হলে ব্যবহারকারীদের তথ্য সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু সময় এবং খরচ বাচাঁতে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে এইচটিটিপিএস এনক্রিপশন যুক্ত করাকে ঝামেলা মনে করে।
তথ্যসূত্র : মিরর