গত ২২ জুলাই ২০১৮ থেকে সারাদেশে কম্পিউটার এবং কম্পিউটার যন্ত্রাংশের উপর `এমআরপি নীতিমালা ২০১৮’ এবং `ওয়ারেন্টি নীতিমালা ২০১৮’ কার্যকর হয়েছে। এ দুটি নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে কম্পিউটার পণ্যের গুণগতমান সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি এ পণ্যের বিশ্বস্ততা অর্জিত হবে। একইসঙ্গে আইটি বাজার ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় ও স্থিতিশীল হবে। এতে ভোক্তা এবং কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা উভয়ই উপকৃত হবেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির বিসিএস ইনোভেশন সেন্টারে এমআরপি এবং ওয়ারেন্টি নীতিমালা বাস্তবায়ন বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার।
তিনি বলেন, কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ বা পণ্য ব্যবসায় অনুমোদিত উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ, ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং ক্রেতাসাধারণের স্বার্থরক্ষা ও সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এমআরপি নীতিমালা ২০১৮ প্রণীত হয়েছে। আর বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ক্রেতা ও ভোক্তাদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবধর্মী ওয়ারেন্টি নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়েছে।
কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট দেশের সকল পর্যায়ের কম্পিউটার ব্যবসায়ী-আমদানীকারক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিসিএস কার্যনির্বাহী কমিটির ধারাবাহিক আলোচনার প্রেক্ষিতে এ ওয়ারেন্টি নীতিমালা আরোপ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ বাজার ব্যবস্থাপনা ও স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন হওয়ার পর থেকে কম্পিউটার পণ্য ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে মূল্য সংক্রান্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আইসিটি পণ্য উৎপাদক, আমদানিকারক, পরিবেশক এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক সহযোগিতা থাকলে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিগগিরই সুফল ভোগ করবে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা।
বিসিএস সভাপতি বলেন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) নির্ধারিত হওয়ার কারণে ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কম্পিউটার বা কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রযুক্তি পণ্যের গায়ে লাগানো এমআরপি স্টিকার মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ থাকছে ভোক্তাদের। এমআরপি নীতিমালা ২০১৮ হবে সার্বজনীন।
বিভিন্ন প্রযুক্তি মেলা বা প্রদর্শনীতে প্রযুক্তি পণ্যে ছাড় থাকবে কী না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইঞ্জি. সুব্রত সরকার বলেন, এমআরপি নীতিমালা মানে এই নয় যে, প্রযুক্তি পণ্যে কখনো ছাড় দেয়া যাবে না। যেকোন মেলা বা প্রদর্শনীতে প্রযুক্তি পণ্যের উপর ছাড় দেয়া যাবে। তবে এ ছাড় শুধু মেলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। ছাড় সুবিধাও হতে হবে সার্বজনীন। মেলায় ঘোষণাকৃত কম্পিউটার এবং এর যন্ত্রাংশের ছাড়মূল্য যত থাকবে, একই মূল্যে সারাদেশ থেকে সেই পণ্য কেনা যাবে। এতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষিত হবে।
ওয়ারেন্টি নীতিমালা প্রসঙ্গে বিসিএস সভাপতি বলেন, প্রযুক্তি পণ্যের ওয়ারেন্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম্পিউটার এবং এর যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে ভুল বোঝাবোঝি অবসান এবং বিক্রোয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ওয়ারেন্টি নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এই নীতিমালার কারণে ভোক্তারা প্রযুক্তি পণ্য কিনে ওয়ারেন্টির ক্ষেত্রে কোন ধরণের বিভ্রান্তির মুখোমুখি হবে না।
এমআরপি ও ওয়ারেন্টি পলিসি প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে সংরক্ষিত থাকবে। সর্বসাধারণের জন্য বিসিএস ওয়েবসাইটে (www.bcs.org.bd) নীতিমালা দুইটি পাওয়া যাবে। ভোক্তা এমআরপি ও ওয়ারেন্টি সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ বিসিএস’কে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। তাছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিসিএস সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী শামীম, মহাসচিব মোশারফ হোসেন সুমন, কোষাধ্যক্ষ মো. জাবেদুর রহমান শাহীন, পরিচালক ও ওয়ারেন্টি কমিটির চেয়ারম্যান মো. আছাব উল্লাহ্ খান জুয়েল এবং পরিচালক ও এমআরপি কমিটির চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
ভোক্তাদের এমআরপি এবং ওয়ারেন্টি বিষয়ে কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার পাওয়ার জন্য রাখা হচ্ছে হটলাইন সেবা। ভোক্তারা এই সংক্রান্ত সমস্যায় ০১৮৪৭২৮৯০৯৫ নাম্বারে যোগাযোগ করে নিজের সমস্যা বিসিএস কে অবহিত করতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি সাংবাদিকবৃন্দ ও বিসিএস এর সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।