জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালা ২০১৮ পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এই নীতিমালা গত ১৪ জুন জারি করা হয়েছিল। এমপিওভুক্তির আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এবং আবেদনের সংখ্যা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানান। গত বৃহস্পতিবার আমরণ অনশন ভঙ্গ ও আন্দোলন স্থগিত করে প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া নন-এমপিও শিক্ষক নেতাদের সাথে শিক্ষামন্ত্রী-সচিবের বৈঠকে উক্ত নীতিমালা (জারি করা নীতিমালা) সংশোধনের দাবি ছিল মুখ্য। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের কাছে অনশনকারী নন-এমপিও শিক্ষকেরা যে তিন দফা দাবি করে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতেও নীতিমালা সংশোধনের দাবি ছিল। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানান, নীতিমালা জারির পরপরই তা সংশোধনের কোনো নজির নেই। নীতিমালা জারি এবং কার্যকর হওয়ার আগেই তা সংশোধনের প্রশ্নই আসে না।
এ দিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) দিতে অনলাইনে আবেদনের সময় ঘোষণা হবে। এমপিওভুক্তির আবেদন জানানোর জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সময় ও ধরনসহ সব কিছু বিস্তারিত থাকবে। আবেদন ফরম চূড়ান্ত করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে আজ। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস)। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই কমিটি’ এবং ‘অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা’ কমিটির যৌথ বৈঠকে আজ আবেদন ফরম চূড়ান্ত করা হবে। গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আজ এটি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানায়, নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। আবেদনের জন্য নতুন করে ফরম চূড়ান্ত করা হবে আজ। এরপরই আবেদন ডাকা হবে। আবেদনের জন্য ২০ দিন সময় দেয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদন ফরমটি চূড়ান্ত করলেই আবেদন করার জন্য সব কাজ সম্পন্ন হবে। এখন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আর কোনো বাধা থাকবে না। বিজ্ঞপ্তিতে নতুন শিাপ্রতিষ্ঠান কিভাবে এমপিওভুক্তির আবেদন করবে তার দিকনির্দেশনা থাকবে। আবেদনপত্রের সাথে কী কী ডকুমেন্টস (প্রমাণপত্র) দিতে হবে তাও উল্লেখ থাকবে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও দিতে গত ২০ জুন দু’টি কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিা বিভাগ। এর একটি শর্তপূরণ করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুতের জন্য ‘অনলাইন আবেদন গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা’ কমিটি এবং অন্যটি ‘এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই’ কমিটি।
গত ১৪ জুন যে নীতমালা জারি করা হয়, তাতে এমপিওভুক্তির জন্য যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে, শিক্ষকদের নিয়োগে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হবে। তার মধ্যে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর, ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর), শিার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর), পরীার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর), পাবলিক পরীায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং করা হবে।
বেসরকারি কলেজের প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ২৫ জন শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। তবে বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও চলবে। আর নতুন জনবল কাঠামোতে সৃষ্ট পদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনভাতা দেয়া হবে না, কিন্তু নতুন পদে এমপিওভুক্ত করা হবে। নতুন জনবল কাঠামোর বাইরে কর্মরতদের পদ শূন্য হলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যারা এমপিওভুক্ত নন, কিন্তু বৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নতুন পদে পদায়ন করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে নন-এমপিওভুক্ত পাঁচ হাজার ২১৭টি শিাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও প্রথম পর্যায়ে মাত্র এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তার মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ৪০০টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০, কলেজ ৭৫, ভোকেশনাল স্কুল ও কলেজ ৩০০, মাদরাসা ১০০ ও বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজ ১১৫টি রয়েছে।
এ দিকে এমপিওভুক্তির দাবিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। এরপর গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন। গত ১১ জুলাই শিক্ষকেরা সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে অনশন ভেঙে প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান।
তথ্যসূত্র:নয়াদিগন্ত