TechJano

ওয়ালটনের নতুন রপ্তানি বাজার এখন আফ্রিকায়

কেনিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আফ্রিকাবাসীর দৃষ্টি কেড়েছে ওয়ালটন। মেলায় ওয়ালটন পণ্যের উচ্চ গুণগতমান, নিখুঁত ফিনিশিং, সাশ্রয়ী মূল্য, বৈচিত্র্যময় ডিজাইন দেখে ভীষণ আগ্রহী আফ্রিকার ক্রেতারা। ওই অঞ্চলের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীরা ওয়ালটন পণ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য রপ্তানির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওয়ালটনের টার্গেট এখন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের শীর্ষবাজারসমূহ। এজন্য আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগ ঢেলে সাজানো হয়েছে। পণ্য গবেষণা, উন্নয়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের লেটেস্ট প্রযুক্তি।

জানা গেছে, এই মেলা শুধু কেনিয়া নয়; সমগ্র আফ্রিকান অঞ্চলে ওয়ালটন পণ্যের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির কেনিয়াট্টা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ওই মেলা। যা মাল্টি-সেক্টর প্রোডাক্টস, ইক্যুইপমেন্টস ও মেশিনারিজের জন্য আফ্রিকার সর্ববৃহৎ মেলা হিসেবে পরিচিত। এবার রেকর্ড পরিমান ব্যবসায়ী উপস্থিত হয় ওই মেলায়। এ বছর কেনিয়া, লাটভিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, মিশর, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কাসহ ৩০টি দেশ থেকে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। ১২শ’রও বেশি ধরনের পণ্য, ইক্যুইপমেন্ট ও মেশিনারি প্রদর্শিত হয়েছে।

মেলায় বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন প্রদর্শন করেছে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, জুসার, রাইসকুকার, ইন্ডাকশন কুকার, গ্যাসস্টোভ, ইলেকট্রিক ফ্যানসহ (সিলিং, টেবিল, রিচার্জেবল, দেয়াল ও প্যাডেস্টাল) হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সেস।

ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর রকিবুল ইসলাম জানান, মেলায় ক্রেতা ও উদ্যোক্তাদের নজর কেড়েছে ওয়ালটন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কাঁচামালে তৈরি ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইনভার্টার ফ্রিজ ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ওইএম (অরিজিন্যালি ইক্যুইপড ম্যানুফ্যাকচারড) এর আওতায় ওয়ালটনের ফ্রিজ আমদানিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। শিগগিরই তারা কারখানা পরিদর্শনে বাংলাদেশে আসবেন। তার প্রত্যাশা, তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্ডার মিলবে।

ওয়ালটনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বলেন, ওয়ালটন এখন একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পর তাদের টার্গেট এখন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের শীর্ষ বাজার। এজন্য আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্ববাজারের অভিজ্ঞ বিপণন বিশেষজ্ঞদের। গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণের জোর দেওয়া হয়েছে। কারখানায় যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ।

উল্লেখ্য, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিকভাবে আফ্রিকায় কেনিয়ার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে দেশটি এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্রুত অগ্রসরমান ‘নেক্সট ইলেভেন’ কান্ট্রির তালিকায়ও রয়েছে দেশটি। ভৌগোলিকভাবে কেনিয়া পূর্ব এবং মধ্য আফ্রিকার বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং পরিবহনের জংশন হিসেবে কাজ করছে। এর উত্তরে সুদান ও ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া ও ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে তানজানিয়া এবং পশ্চিমে ভিক্টোরিয়া হ্রদ ও উগান্ডা। কেনিয়ার বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে পারলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও বাজার সম্প্রসারণ সহজ হবে ওয়ালটনের।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে নাইজেরিয়াতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছে ওয়ালটন। এই মেলায় অংশ নেওয়ার পর থেকেই নাইজেরিয়াতে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে ইনভার্টার প্রযুক্তির ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রিক ফ্যান ইত্যাদি।

নাইজেরিয়ার ক্রেতাদের কাছে ওয়ালটন পণ্য দ্রুত গ্রাহকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ছাড়া আফ্রিকা অঞ্চলের আরেকটি দেশ উগান্ডাতে সম্প্রতি হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস রপ্তানি করেছে ওয়ালটন। কেনিয়া আন্তর্জাতিক মেলার মধ্য দিয়ে এবার পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে ওয়ালটন পণ্যের নতুন বাজার তৈরির সুযোগ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Exit mobile version