অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট দেশের আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা মতে, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ভালো কোম্পানিগুলোর বাজারে আসা খুবই জরুরী। সম্প্রতি এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব রয়েছে। ফলে, বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটছে না। আর সেই আস্থার সংকট কাটাতেই পুঁজিবাজারে আসছে দেশের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ওয়ালটন।
গত মাসের প্রথম দিকে এক আলোচনা সভা শেষে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে শিগগিরই বাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে লাভজনক সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এর পাশাপাশি আরো সরকারি ও বেসরকারি ভালো প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমকর্তারা। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব দূর করার লক্ষ্যে বাজারে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। এরইমধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ওয়ালটনের বিডিং সম্পন্ন হয়েছে।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের মাধ্যমে বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে ওয়ালটন। ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে ব্যয় হবে এই অর্থ। পুঁজিবাজারে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আসছে শুনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। এরইমধ্যে ওয়ালটনের শক্তিশালী আর্থিক প্রতিবেদনের নিরিখে কোম্পানির কাট অফ প্রাইজ নির্ধারিত হয়েছে ৩১৫ টাকা।
শেয়ারবাজারে দেয়া কোম্পানির প্রসপেক্টাসের তথ্য অনুসারে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩৫২ কোটি টাকা এভং টার্নওভার ছিল ২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটনের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ২৯০ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। আলোচ্য বছরে ওয়ালটনের টার্নওভার ছিল ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার রিফ্রিজারেটর বিক্রি হয়েছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
টার্নওভার ও মুনাফা বৃদ্ধিতে এই অসাধারণ সাফল্য অর্জনের পেছনে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ ব্যাপক অবদান রেখেছিল বলে জানিয়েছেন ওয়ালটনের হেড অব অ্যাকাউন্স ইয়াকুব আলী। এর মধ্যে রয়েছে- দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নতুন সেলস আউটলেট অর্থাৎ প্লাজা চালুর প্রেক্ষিতে বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যাওয়া, বিক্রি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পণ্যের একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় কমে যাওয়া, সময়োপযোগী বিপণন কৌশল, বিক্রয়োত্তর সেবাকে অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসা; ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে পণ্য ক্রয়ে বাড়তি সুবিধা দেয়া ইত্যাদি।
তিনি আরো জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশনসহ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সকে ওয়ালটন হাই-টেকের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। ফলে আলোচ্য বছরে স্বাভাবিকভাবেই ২০১৭-১৮ বছরের তুলনায় কোম্পানির টার্নওভার ও মুনাফা অনেক বেড়েছে।
কোম্পোনির প্রসপেক্টাসের তথ্যানুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটন হাইটেকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন প্লাজার কাছে পণ্য বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৬০২ কোটি টাকার। একই বছরে ওয়ালটন প্লাজার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটির রিসিভাবল অ্যামাউন্ট ছিল ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৪৪০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানি সচিব পার্থ প্রতীম দাশ বলেন, ২০১৮-১৯ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন প্লাজা চালু করায় আগের অর্থবছরের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই প্লাজার কাছে ওয়ালটনের রিসিভাবল অ্যামাউন্টের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এদিকে নতুন প্লাজা চালুর প্রেক্ষিতে টার্নওভারও বেশ ভালো বেড়েছে। ওয়ালটন প্লাজার কাছে যে পণ্য বিক্রি করা হয় তার আংশিক মাত্র বাকি থাকে। এটি অস্বাভাবিক নয়।
২০১৭-১৮ মুনাফা কম হওয়ার পেছনে তিনি যুক্তি দেখান- ২০১৮ সালে দেশে বন্যা হয়েছিল। যে কারণে ব্যবসা খারাপ গেছে। সেসময় শুধু ওয়ালটনেরই নয়, ইলেকট্রনিক্স খাতের সবারই ব্যবসা খুব খারাপ হয়েছিল। এদিকে ২০১৯ সালে আমরা অটোমেশনে এসেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশকিছু গ্লোব্যাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলাম।
ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করে কার্যক্রম পরিচালনা করায় টার্নওভার ও মুনাফা অনেক বেড়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে পাঁচ ধরনের সেলস নেটওয়ার্ক। প্লাজা, পরিবেশক, কর্পোরেট, অনলাইন এবং আন্তর্জাতিক বিপণন। ইতোমধ্যে, ওয়ালটন ফ্রিজের সাশ্রয়ী মূল্য, উচ্চ গুণগতমান, নিঁখুত ফিনিশিং ও বৈচিত্র্যময় অসংখ্য মডেল থাকায় দেশের প্রায় ৭৫ ভাগ ক্রেতার আস্থা জয় করে নিয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার রিফ্রিজারেটর বিক্রির বিশাল মাইলফলক অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল ওয়ালটন।
উল্লেখ্য, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় সেরা ভ্যাটদাতার পুরস্কার চালুর পর থেকে চলতি বছরসহ টানা ১৪ বছর ধরে প্রথম পুরস্কার পেয়ে আসছে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড ওয়ালটন। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়ন তৈরি করে প্রায় প্রতি বছরই পুরস্কৃত হয়ে আসছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ওয়ালটন পেয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি। যার মধ্যে রয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘ফার্স্ট এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস’, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে ২০১৮ সালের জাতীয় পরিবেশ পদক, বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৫, গ্লোবাল ব্র্যান্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ এবং ডিএইচএল-ডেইলি স্টার বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ উল্লেখযোগ্য।