ফিচার

ওয়ালটন ভেন্টিলেটরের প্রোটোটাইপ তৈরি করে হস্তান্তর করল

By Baadshah

April 29, 2020

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহকারী যন্ত্রের প্রোটোটাইপ তৈরি করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আইসিটি বিভাগকে হস্তান্তর করেছে ওয়ালটন। এরইমধ্যে তিন মডেলের ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে ওয়ালটন।

এর আগে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মোল্ড তৈরি করে ফেস প্রোটেকটিভ শিল্ড এবং সেফটি গগলস উৎপাদন শুরু করে ওয়ালটন। শিগগিরই অ্যান্টি-ফগ প্রযুক্তির গগলস তৈরি করতে যাচ্ছে তারা। এছাড়া, পিএপিআর (পাওয়ার এয়ার পিউরিফায়ার রেসপিরেটর), ইউভি ডিসইনফেকট্যান্ট, রেসপিরেটরি মাস্ক ইত্যাদি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে ওয়ালটন কারখানায় পুরোদমে কাজ চলছে।

মঙ্গলবার ২৮ এপ্রিল সরকারের আইসিটি বিভাগকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ভেন্টিলেটরগুলো হস্তান্তর করা হয়। অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। উপস্থিত ছিলেন এলআইসিটির সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. তৌফিক হাসানসহ ওয়ালটন ও মেডট্রনিক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে পলক বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় যন্ত্র ভেন্টিলেটর। বিশ্বজুড়েই ভেন্টিলেটরের সংকট রয়েছে। সে কারণেই আমরা দেশে ভেন্টিলেটর তৈরির উদ্যোগ নেই। এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা দিচ্ছে মেডট্রনিক্স এবং ওয়ালটন। আমরা ওয়ালটনের তৈরি ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপগুলো ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্য স্বাস্থ্য অধিপ্তরকে জমা দেবো। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমতি দিলে উৎপাদনে যাবে ওয়ালটন।

তিনি আরও বলেন, আশা করছি দুর্যোগকালীন সময়ে দেশে তৈরি ভেন্টিলেটর দিয়ে আমরা সাপোর্ট দিতে পারবো। ওয়ালটনের তৈরি এই ভেন্টিলেটর আমরা নিজেরা ব্যবহার করবো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করতে সক্ষম হবো।

ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্প-প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, এই তিন মডেলের ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপের মধ্যে একটি মেডট্রনিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি। অন্য দুটি ওয়ালটনের নিজস্ব উদ্ভাবন। সরকারের আইসিটি বিভাগের অনুপ্রেরণায় নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এই দুই মডেলের ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে।

তিনি জানান, মেডট্রনিকের ডিজাইনে তৈরি করা পিবি৫৬০ মডেলের ওই ভেন্টিলেটরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডব্লিউপিবি ৫৬০’। এফডিএ সার্টিফাইড এ ভেন্টিলেটরটির যন্ত্রাংশেরও যোগান দিচ্ছে মেডট্রনিক। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত এ ভেন্টিলেটরের সংযোজন হবে ওয়ালটন কারখানায়। ওয়ালটন এ ভেন্টিলেটরটির পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন এবং মেডট্রনিক্স থেকে কাস্টোমাইজ যন্ত্রাংশ পাওয়া সাপেক্ষে ‘ডব্লিউপিবি ৫৬০’ উৎপাদন শুরু হবে।

এদিকে, জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় আরও দুটি মডেলের ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে ওয়ালটন। দেশ-বিদেশের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে ওয়ালটনের দক্ষ ও মেধাবী আরঅ্যান্ডডি টিম নিরলস গবেষণার মাধ্যমে এ ভেন্টিলেটর দুটি উদ্ভাবন করেছেন। দেশীয় কাঁচামাল, ওয়ালটনের নিজস্ব উৎপাদিত যন্ত্রাংশ এবং বিভিন্ন উৎস থেকে সরবরাহ করা যন্ত্রাংশ দিয়ে এই দুই মডেলের ভেন্টিলেটরের ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন ওয়ালটনের হেড অব ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলী মালেক শিকদার, হেড অব মেকানিক্যাল প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, হেড অব কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রকৌশলী তাহসিনুল হক এবং হেড অব সার্ভিস প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মল্লিক।

ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্পের ডেপুটি হেড প্রকৌশলী তৌফিক-উল-কাদের জানান, উদ্ভাবিত ভেন্টিলেটরের মডেল দুটির নাম যথাক্রমে ‘ডব্লিউসিভি-২০’ এবং ‘ডব্লিউএবি-২০’। ‘ডব্লিউসিভি-২০’ মডেলে ‘পিবি৫৬০’ এর তিনটি মোড-এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি অর্থাৎ অ‌্যাসিস্টেড কন্ট্রোল এবং সিনক্রোনাইজড ইন্টারমিটেন্ট ম্যান্ডেটরি ভেন্টিলেশন (এসআইএমভি) বিদ্যমান। আর আম্বুব্যাগ ব্যবহার করে তৈরি ‘ডব্লিউএবি-২০’ ভেন্টিলেটরটিতে প্রয়োজন অনুসারে অক্সিজেনের অনুপাত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এবং অনুমোদনের ভিত্তিতে উৎপাদনে যাবে ওয়ালটন।

ভেন্টিলেটর প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রকৌশলী লিয়াকত আলী ভুঁইয়া সব ধরনের সহায়তার জন্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রীসহ বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টিম এবং এলআইসিটিকে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ ধন্যবাদ জানান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওয়ালিউর রহমান চৌধুরীকে। তিনি ‘পিবি৫৬০’ মডেলের ভেন্টিলেটরটি গবেষণার জন্য ওয়ালটনকে দিয়েছেন। তার প্রয়াত কন্যা ওয়াহিদা চৌধুরী এটি ব্যবহার করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে মেডট্রনিক্স বাংলাদেশের মার্কেটিং কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট তুহিনুর সুলতানা বলেন, আমরা যখন ‘পিবি৫৬০’ মডেলের ভেন্টিলেটরের প্যাটেন্ট বিশ্বজুড়ে উন্মুক্ত করেছি, তখন ওয়ালটন সবার আগে এগিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমে তারা শুধু দেশকে নয় বরং সারা বিশ্বকে সহায়তা করতে যাচ্ছে। এজন্য ওয়ালটনকে ধন্যবাদ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশ-বিদেশে এখন ভেন্টিলেটরের ব্যাপক চাহিদা। এ অবস্থায় অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে ভেন্টিলেটরের মতো হাই-টেক মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্টের ফাংশনাল প্রোটোটাইপ তৈরি এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আশাব্যাঞ্জক। তাদের প্রত্যাশা, ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের মতো এ খাতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ। থাকছে রপ্তানির বিশাল সুযোগ।