দেশে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) টেলিযোগাযোগ সেবা চালুর জন্য পাঁচটি মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এগুলো হলো গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক ও সিটিসেল। এর মধ্যে সিটিসেলের কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
ফোরজি লাইসেন্সের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৪ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
মার্চের মধ্যেই জনগণের কাছে ফোরজি সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ।রোববার বিটিআরসি কার্যালয়ে ফোরজি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, অপারেটরগুলো ফোরজি সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছে। সে হিসেবে এটি চালু করতে সময় লাগবে না।রোববার দুপুর ১২ছিল ফোরজি আবেদনের শেষ সময়। এরপর বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফোরজি লাইসেন্সের জন্য সিটিসেল, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং টেলিটক আবেদন করেছে। তবে স্পেকট্রামের জন্য টেলিটক আবেদন করেনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব অপারেটর টেলিটকসহ যে চারটি অপারেটর এখন থ্রিজি সেবা দিচ্ছে তারা প্রত্যেকেই ফোরজির লাইসেন্স পাবে যদি তাদের আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঠিক থাকে।
তবে ফোরজির জন্যে সিটিসেলকে নতুন অপারেটর হিসেবে ধরা হবে। আর সে কারণে সিটিসেল কোনো স্পেকট্রাম কিনলেই কেবল তাকে ফোরজির লাইসেন্স দেওয়া হবে।
ফোরজি’ কী
‘ফোরজি’, ‘ফোর্থ জেনারেশন’ বা ‘চতুর্থ প্রজন্ম’ হলো দ্রুততম সময়ে যোগাযোগে ব্যবহৃত মোবাইল টেলিযোগাযোগ-প্রযুক্তি, যাকে আবার ‘লং টার্ম ইভল্যুশন’ বা ‘এলটিই’ও বলা হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি বর্তমানে বাংলাদেশে চালু থাকা তৃতীয় প্রজন্ম বা থ্রিজির পরের ধাপ।
‘ফোরজি’র আসলে কোনো আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে ‘ফোরজি’ বোঝা যায়। ‘আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন-রেডিও যোগাযোগ’ শাখার ‘ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন অ্যাডভান্সড’ (আইএমটিএ) ফোরজির জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়েছে। সেখানে ‘ফোরজি’ হতে হলে বেশ কয়েকটি যোগ্যতা উতরাতে হয়। আইএমটিএর ওই ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের গতি খুবই দ্রুতগতির হবে। কোনো দ্রুতগতির যানবাহন অর্থাৎ বাস বা ট্রেনে এই সেবার ইন্টারনেট গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইট। এ ছাড়া আবাসিক ব্যবহারে বা স্থিরাবস্থায় ‘ফোরজি’ নেটওয়ার্কের গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবাইট।
বৈশিষ্ট্য
ফোরজির সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর এ বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন। প্রথম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে গতি। এ ছাড়া এই প্রযুক্তিতে তথ্য আদান-প্রদান পুরোপুরি ‘ইন্টারনেট প্রটোকল প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক’ ভিত্তিক হবে। একই স্পেকট্রাম থেকে সর্বাধিকসংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যান্ডউইডথ ন্যূনতম ৫ থেকে ২০ মেগাহার্জ এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ৪০ মেগাহার্জ পর্যন্ত হবে। এ ছাড়া এর ডাউনলিংকের ক্ষেত্রে লিংক স্পেকট্রাল এফিসিয়েন্সি প্রতি সেকেন্ডে ১৫ বিট এবং আপলিংকের ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৭৫ বিট হবে।
সুবিধা
ফোরজির মূল সুবিধা এই নেটওয়ার্কে সর্বোচ্চ গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব। বলাই হচ্ছে, এর গতি হবে সর্বনিম্ন ১০০ মেগাবাইট। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হাই ডেফিনিশন টেলিভিশন ও ভিডিও কনফারেন্সের সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া এই প্রযুক্তিতে গ্রাহক সব সময়ই মোবাইল অনলাইন ব্রডব্যান্ডের আওতায় থাকতে পারবে। ফোরজির মাধ্যমে মোবাইলে কথোপকথন ও তথ্য আদান-প্রদানের নিরাপত্তা অনেক বেশি ও শক্তিশালী।
এ ছাড়া ফোরজি মোবাইল গ্রাহকদের ভয়েস মেসেজ, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, ফ্যাক্স, অডিও-ভিডিও রেকর্ডিংসহ নানা ধরনের সুবিধা দেয়।
ফোরজির সূচনা
বেশির ভাগ উন্নত দেশেই ফোরজি নেটওয়ার্কের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যাত্রার শুরু থেকে দুটি ফোরজি স্ট্যান্ডার্ড বাণিজ্যিকভাবে মোবাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। একটি মোবাইল ‘ওয়াইম্যাক্স’ এবং আরেকটি ‘লং টার্ম ইভল্যুশন’ বা ‘এলটিই’। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায় চালু হয় ফোরজি। এরপর একটু বড় পরিসরে ২০০৯ সালে স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলে (ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন) অপারেশন শুরু করে এই প্রযুক্তি। এ ছাড়া ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্প্রিন্ট নেক্সটেল মোবাইল ওয়াইম্যাক্স এবং ২০১০ সালে মেট্রো পিসিএস এলটিই সার্ভিস চালু করে।
অবশ্য শুরুতে ফোরজি ইউএসবি মডেমে থাকলেও ২০১০ সালে সর্বপ্রথম ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন এবং ২০১১ সালে এলটিই স্মার্টফোনে বাজারে আসে। আর এখন প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেমচালিত স্মার্টফোনেই এটি ব্যবহার করা যায়।