গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালস্থ কার্যালয়ে কানেক্টিং ক্লাসরুমের চতুর্থ পর্বের উদ্বোধন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এর পাশাপাশি, এদিন শিক্ষকদের অবদানের স্বীকৃতিতে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ও উদযাপন করে প্রতিষ্ঠানটি।
‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’, ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস’ নামেও পরিচিত যা প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো/আইএলও’র শিক্ষকদের নিয়ে নানা উদ্বেগের বিষয়ে সুপারিশ প্রস্তাব চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনার স্মরণে ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। এ চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের অবস্থার মান নির্ধারণে কাজ করা হয়। এ অনুষ্ঠানেই ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে বাংলাদেশ কানেক্টিং ক্লাসরুমের চতুর্থ পর্বের উদ্বোধন করা হয়। ‘শিক্ষকদের অবদানের স্বীকৃতি’র উদযাপন অনুষ্ঠানটি ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতি’ উৎসর্গ করা হয়। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতি’ ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ডিএফআইডি’র যৌথ অঙ্গীকার প্রদর্শনে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
শিক্ষা নিয়ে প্রচলিত ধারণা ও সংজ্ঞা বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণ করে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তাদের সহজে মানিয়ে নেয়ার জন্য তৈরি করতে আমাদের নির্দিষ্ট পথ খুঁজে পেতে হবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, নীতিনির্ধারক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হুদা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মাহমুদুল হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ব্রিটিশ কাউন্সিলের এডুকেশন ডিরেক্টর ডেভিড মেনার্ড অতিথিদের স্বাগত জানান। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন এবং তাদের জীবনের মানোন্নয়নে শিক্ষদের অবদান কৃতজ্ঞতাভরে স্বীকার করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষকরাও আমন্ত্রিত ছিলেন তারা শিক্ষাদান পদ্ধতিতে কি পরিবর্তন এনেছেন এবং তাদের স্কুলে উন্নত ও সমৃদ্ধ শিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে কাজ করেছেন তা নিয়ে আলোচনার জন্য।
অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক শিক্ষা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিজিওনাল এডুকেশন অ্যান্ড ইংলিশ অ্যাকাডেমিক লিড- সাউথ এশিয়া অ্যামি লাইটফুট। তার প্রবন্ধে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্লোবাল লার্নিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে কানেক্টিং ক্লাসরুম তরুণদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ পাশাপাশি, তাদের স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার উন্নয়নে কিভাবে কাজ করছে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল হুদা বলেন, ‘মিাউশি বিগত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাখাতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কানেক্টিং ক্লাসরুম কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, এ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে আমরা কাজ করে যাবো। ডিএসএইচই ও ব্রিটিশ কাউন্সিল একসাথে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করবে এবং এ কর্মসূচি সফলতায় পরিণত করবে।‘
কানেক্টিং ক্লাসরুমের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক, ৫ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষক ও ২১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে এবং দশটির বেশি নীতিনির্ধারণী বৈঠক আয়োজন করেছে যেখানে ৩শ’র বেশি নীতি নির্ধারক অংশগ্রহণ করছে। এ অর্জনের ধারাবাহিকতা হিসেবে কানেক্টিং ক্লাসরুম প্রোগ্রাম, এর চতুর্থ পর্বের যাত্রা শুরু করেছে। সবশেষে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সোহরাব হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে কানেক্টিং ক্লাসরুমের চতুর্থ পর্বের উদ্বোধন করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন আগের চেয়েও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের তরুণ প্রজন্মের উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা দরকার। শিক্ষাবিষয়ক অনেক কর্মসূচির সাথে কানেক্টিং ক্লাসরুম উন্নত এ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে অবদান রাখবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশে শিক্ষার মানোন্নয়নে অবদান রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্রিটিশ কাউন্সিল আর এজন্যই প্রতিষ্ঠানটি দেশজুড়ে ‘এসডিজি ৪- সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা’ বাস্তবায়নে কাজ করছে। কানেক্টিং ক্লাসরুমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নীতিনির্ধারক, সিস্টেম-ওয়াইড এডুকেশন কোয়ালিটি রিফর্ম’ বিশেষজ্ঞ, স্কুল নেতৃত্ব ও শিক্ষকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা কিভাবে পরিবর্তনশীল চাহিদা নিয়ে কাজ করতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য শিশু-কিশোর ও তরুণদের কিভাবে যোগ্য করে তোলা যায় তা নিয়ে কাজ করছে এ প্ল্যাটফর্ম।