থ্রিজির ফোরজির পথ ধরেই দেশে চালু হতে যাচ্ছে ফাইভ জি। দেশে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভ জি চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বুধবার এই সেবার পরীক্ষামূলক প্রদশর্নী হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আজ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিজের ভেরিফাইড পেজে সজীব ওয়াজেদ লিখেন, এই মুহূর্তে আমি ট্রাফিকে আটকে আছি কিন্তু ঢাকাতে বসেই ঠিক আমেরিকার মতোই ৪জি ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছি। আমরা কয়েকমাস আগে ৪জি সেবা চালু করলেও ইতোমধ্যেই কাভারেজ বেশ ভালো বলে মনে হচ্ছে। এর জন্য টেলিকম কোম্পানিগুলোকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আরেকটি মাইলফলক অর্জন।
জয় লিখেছেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সকালে আমরা ফাইভ জি প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী করবো। চোখ রাখুন।
৫জি কি? ফাইভ জি দিয়ে কি হবে?
প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে সর্বাধুনিক ৪জিএলটিই প্রযুক্তিকে ছাপিয়ে যেতে হবে ৫জিকে। তাঁরা বলছেন, ৫জির অর্থ যাই দাঁড়াক না কেনো ২০২০ সালের মধ্যেই ৫জি প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্পন্ন করে ফেলতে হবে।
৫ জি কী? এখন পর্যন্ত ৫ জির মান নির্ধারণ করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি নিশ্চয় ইন্টারনেটের দৃশ্যপট বদলে দেবে। বিশাল তথ্য কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডাউনলোড করা যাবে। বর্তমানে এলটিই প্রযুক্তিতে ডেটা স্থানান্তরের গতির চেয়ে ৫ জির গতি বেশি হবে। এখন পর্যন্ত ৫ জির প্রোটোটাইপ নিয়ে চীন যে পরীক্ষা চালিয়েছে, তাতে ৩ দশমিক ৫ জিবিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া গেছে।
মোবাইলের দুনিয়ায় প্রতিটি জি অর্থ জেনারেশন বা প্রজন্মকে বোঝায়। প্রতিটি জি বা প্রজন্ম যখন চালু করতে হয়, তখন প্রযুক্তিবিশ্বকে কতগুলো বিষয়ে একমত হতে হয়। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়ন (আইটিইউ) সংস্থাটির দায়িত্ব হচ্ছে, এ নেটওয়ার্কের মান ঠিক করা।
আইটিইউয়ের বিশেষজ্ঞরা ৫ জির পারফরম্যান্সের প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। যার মধ্যে শুরুতেই আছে কল ড্রপের বিষয়টি। ৫ জিতে কোনো কল ড্রপ হবে না। ৫ জি নেটওয়ার্কের টাওয়ার বদল করা হলেও কল ড্রপ বা ইন্টারনেট সংযোগের কোনো পরিবর্তন হবে না। আইটিইউয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৫ জি নেটওয়ার্কে মোবাইলে ব্যাঘাত বলে কিছু থাকবে না। যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে তা ৫ জি বলে গণ্য হবে না।
কল ড্রপের পর আছে কম ল্যাটেন্সির বিষয়টি। ৫ জি ফোনে ল্যাটেন্সি ৪ মিলিসেকেন্ড থেকে ১ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে থাকতে হবে। ল্যাটেন্সি মিলিসেকেন্ডে হিসাব করা হয়। ল্যাটেন্সি হচ্ছে মোবাইল ফোনের সংকেত ইন্টারনেট সার্ভারে পৌঁছানোর সময়। ফোরজিতে ল্যাটেন্সি ৫০ মিলিসেকেন্ড। ল্যাটেন্সি কম হলে অগমেন্টেড রিয়্যালিটি, স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটির মতো বিষয়গুলো উন্নত হবে।
কোন কোন ফোনে ফোরজি সাপোর্ট করবে?
৫ জিতে ব্যাটারিতে চার্জ কম ফুরাবে। সাধারণত ডেটা ব্যবহারের সময় মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হতে দেখা যায়। ৫ জিতে ব্যাটারির দক্ষতা বেড়ে যাবে। ফোন যখন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে না, তখনকার স্লিপ মোড ফিচারটি উন্নত হবে।
দ্রুতগতিতে চলার সময়েও ৫ জি ভালো কাজ করবে। গত যদি ঘণ্টায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়, তবুও ৫ জি দুর্দান্ত কাজ করবে। বর্তমানে গাড়ি যদি দ্রুত চলে, তখন মোবাইল দ্রুত টাওয়ার পরিবর্তন করে। দ্রুত চলার সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না। ৫ জিতে এ সমস্যা থাকবে না।
বাংলাদেশে কারা ৫জি পরীক্ষা করবে
সম্প্রতি স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলায় হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ৫জি নেটওয়ার্ক পরীক্ষার কথা জানায়। রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটক ও বেসরকারি অপারেটর রবি’র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এ পরীক্ষা চালানো হবে।
গত মাসের শেষ দিকে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন বিআইজেএফের এক আলোচনায় টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রথম ফাইভ জি’র পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেন।
তবে বাংলাদেশের বাজার এখনও ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহারের পর্যায়ে যায়নি বলে মনে করেন টেলিকম খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি সেবা ব্যবহারে আরও অন্তত চার-পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ফোরজি’র ব্যবহার শুরু হয়েছে। এখনও অনেক শহরে ফোরজি প্রযুক্তির ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হয়নি। আর সব মিলে মাত্র ৪০ লাখের মতো সিম ফোরজিতে রূপান্তর কিংবা নতুন করে যুক্ত হয়েছে। নিয়মিত ব্যবহারকারী আরও কম।
এর আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে থ্রিজি’র ব্যবহার শুরু হয়। নতুন নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণাতে হুয়াওয়ে ৬ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। হুয়াওয়ের পাশাপাশি টিম, টেলুস ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক সেবাদাতারাও ফাইভজি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
চলতি বছর থেকেই কোয়ালকম, স্যামসাং ও ইন্টেল ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের উপযোগী ফোন নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের এই ওয়্যারলেস প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অনেকখানিই পাল্টে দেবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।