জনপ্রিয়

বাংলাদেশের সেরা ৫ সর্বাধিক ব্যয়বহুল মোটরসাইকেল

By Baadshah

April 16, 2019

মোটর সাইকেল কেন চালাবেন?

মোটর সাইকেল চালানো হয়তো এ দেশের সকল মানুষ এর সবচেয়ে পছন্দের কাজ না। কিন্তু এই কাজটি নানা কারণে আমরা সবাই কম বেশি করে থাকি। হয়ত অনেকের জন্যই মোটর সাইকেল একটি কার্যকরী উপায়, কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা বড় অংশ মূলত প্যাশন থেকে মোটর সাইকেল চালাতে ভালোবাসি!

বিশ্বব্যাপী রাইডারদের এই প্যাশনের দিকটা মাথায় রেখে যুগ যুগ ধরে মোটর সাইকেল কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে চলেছেন। মোটর সাইকেলের অন্যান্য সকল বৈশিষ্ট্যগুলো বরং এই প্যাশনের সাথে বাড়তি এক মাত্রা যোগ করে।

বিশ্বব্যাপী প্রগতিশীল মোটর সাইকেল উৎপাদনকারীরা বিশ্বাস করেন যে পরিবহনের অন্যান্য মাধ্যমগুলোতে খরচ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই দেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রেতারা অধিক পরিমাণে রাইডিং এর দিকে ঝুঁকছেন। একটি গাড়ি পুরনো হলেও তার তুলনায় একটি মোটর সাইকেল কিনতে খরচ পরে মাত্র ২৫ শতাংশ। তাই হোন্ডা, কেটিএম এবং ইয়ামাহার মত মোটর সাইকেল উৎপাদকরা বিশেষ করে তরুণ রাইডারদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তাদের মোটর সাইকেল গুলো ডিজাইন করে থাকেন।

বাংলাদেশের সেরা ৫ সর্বাধিক ব্যয়বহুল মোটরসাইকেল (২০১৮)

কেটিএম ডিউক ১২৫ ৫৯৫,০০০ টাকা (রেজিস্ট্রেশন সহ), ইঞ্জিন: ১২৫ সিসি
এপ্রিলিয়া আরএস৪ ১২৫ ৫৭৫,০০০ টাকা, ইঞ্জিন: ১২৫ সিসি
হোন্ডা সিবি১৫০আর এক্সমোশন ৫৬৫,০০০ টাকা (রেজিস্ট্রেশন সহ এবিএস ভার্সন) ইঞ্জিন: ১৫০ সিসি
ইয়ামাহা আর১৫ ভি৩ ৫৩০,০০০ টাকা (রেজিস্ট্রেশন সহ মুভিস্টার এডিশন)
হোন্ডা সিবি১৫০আর ৪৫২,০০০ টাকা (রেপসল এডিশন)

 

যেসব কারণে আজকের তরুণ প্রজন্ম মোটর সাইকেল কেনার ব্যাপারে অধিক পরিমাণে আকৃষ্ট হন

রোমাঞ্চের নেশা

মোটর সাইকেল উন্মাদনার পেছনে অন্যতম স্বভাবগত কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি!

মোটর সাইকেল চালানোর রোমাঞ্চের কাছে মাটিতে চলাচলকারী যেকোন বাহন হার মানতে বাধ্য। যেখানে একটি মোটর সাইকেল একজন রাইডারকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছে দেয়ার মত সাধারণ একটি কাজ করে, সেখানে এই পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারটাতে পুরোটাই স্টাইল আর উত্তেজনায় থাকে ভরপুর!

ভাঙ্গা রাস্তাঘাট, বিষাক্ত আবহাওয়ার প্রভাব, কিংবা একটি দুই চাকার বাহন চালানোর ঝুঁকি যেটাই থাকুক না কেন… একটি শান্তিময় সন্ধ্যায় নির্মল এক সূর্যাস্ত কিংবা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দ আপনার সারা দিনের পথের ক্লান্তি ও ঝক্কি ঝামেলার কথা ভুলিয়ে দিতে পারে এক নিমেষে।

জ্বালানী খরচ বাঁচাতে

একবার আপনার উত্তেজনার অনুভূতি এবং নির্মল আনন্দ নিশ্চিত করে ফেলার পর জ্বালানীর ট্যাংকটি ভরার জন্য আপনাকে বাধ্য হয়েই আপনার বাজেট ও পকেটের অবস্থা কথা নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্তু মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে আপনি ট্যাংকে যতটুকু তেল ভরবেন, তার বিপরীতে দেশের অন্যতম সেরা মাইলেজ গুলো আবার ফিরে পাবেন।

গাড়ির মাইলেজের তুলনায় দ্বিগুন মাইলেজ আপনাকে মোটর সাইকেল দিতে পারে খুব সহজেই। একই সাথে এটি পথে আপনার প্রায় অর্ধেক সময়ও বাঁচিয়ে দিতে পারে। জ্বালানীর দাম ক্রমশ বেড়ে চলা সত্ত্বেও আপনি দেশের যেকোন ইঞ্জিন চালিত বাহনের চেয়ে নিশ্চিত ভাবে বেশি সময় বাঁচাতে পারবেন।

দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী খরচে চলাচল করার সুবিধা ও সহজলভ্যতাই আজ বাংলাদেশের বেশির ভাগ তরুণ পথচারীদের মোটর সাইকেল কেনার আকাঙ্ক্ষার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!

পার্কিং করার কোন ঝামেলা নেই

এদেশের তরুণ প্রজন্মকে যেকোন জায়গায় বিদ্যুৎ গতিতে পৌঁছে যাওয়ার এবং আধুনিক দিনের পার্কিং করার ঝামেলা ছাড়াই পার্ক করার স্বাধীনতা দিতে পারে মোটর সাইকেল। ঢাকা শহর কিংবা দেশের যেকোন এলাকার গাড়ি মালিকরা এটা একবাক্যে স্বীকার করবেন যে দেশে পার্কিং করার ঝামেলা কতটা ভয়াবহ।

একদিকে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা যেমন প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে এই বাহনগুলোর নিরাপত্তা ও চলাচলের উপযোগিতাটাও চিন্তার একটি বড় বিষয়। অনেক গাড়ির মালিকরাই তাদের গাড়ি নিরাপদ ভাবে পার্ক করা থাকবে কিনা সেটি নিশ্চিত করার জন্য ড্রাইভার নিয়োগ করেন। পার্কিং এর সুযোগ সুবিধার অভাব একটা ভাবনার বিষয়, কিন্তু তারপরও মোটর সাইকেল যথেষ্ট সাশ্রয়ী এবং এটি পার্ক করা বেশ সহজ।

রাইডারদের ভ্রাতৃত্ব

বাইকারদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের অনুভব বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উপর গভীর ভাবে প্রভাব ফেলে। এই রাইডারদের মধ্যে অনেকেই নতুন মোটর সাইকেল রাইডার, ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ব্যবহারকারী, রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে মোটর সাইকেল রাইডার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের রাইডারদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।

আপনি যদি বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলকারী একজন রাইডার হন, তাহলে রাস্তায় পরিচয় হওয়া রাইডারদের অসামান্য সহযোগিতা ও বন্ধুসুলভ আচরণের সাথে আপনি নিশ্চয়ই পরিচিত। দেশব্যাপী রাইডারদের মধ্যে বন্ধুত্বের এক  অনন্য নিদর্শন হিসেবে তৈরি হয়েছে বাইকারদের এক বিশাল সমাজ, যা পুরোপুরি মোটর সাইকেলের প্রতি প্যাশন থেকে সৃষ্টি।

এছাড়াও মোটর সাইকেল রাইডাররা স্বাধীনতার এক অন্য রকম স্বাদ উপভোগ করতে পারেন। পোশাকে নিজের ব্যক্তিগত স্টাইল, মোটর সাইকেল ডিজাইন ও গঠনের পরিবর্তনের মাধ্যমে রাইডাররা তাদের অনন্য ব্যক্তিসত্তা প্রকাশ করে থাকেন। বাংলাদেশের বহু সংখ্যক তরুণ এই মোটর সাইকেলকে তাদের ব্যক্তিত্ব জাহির করার অন্যতম উপায় হিসেবে ব্যবহার করেন।

পরিবেশের উপর প্রভাব কম ফেলে

আজকের দিনে তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যত এবং পরিবেশের উপর কার্বন পদচিহ্নের প্রভাব সম্পর্কে বেশ সচেতন। পরিবহনের অন্যতম সাশ্রয়ী ও কার্যকরী মাধ্যম হলো মোটর সাইকেল, পরিবেশের উপর যাদের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে কম।

সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার দরুণ দামের সাপেক্ষে অন্য যেকোন বাহনের তুলনায় একটি মোটর সাইকেলের পারফর্মেন্স অনেক বেশি আশা করা যায়। এছাড়াও একটি মোটর সাইকেলের সাহায্যে বেশির ভাগ সময় আপনি যেকোন জায়গায় অন্য যেকোন বাহনের চেয়ে বেশি দ্রুত পৌঁছে যেতে পারবেন। এতে করে আপনি রাস্তা থেকে যত দ্রুত সরে আসতে পারবেন, সর্বোপরি বিপদ আপদ থেকে তত দ্রুত নিরাপদ হয়ে যাবেন।

মিলেনিয়াল প্রজন্মের তরুণরা কি পারবেন বিশ্বের মোটর সাইকেল শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ?

একদিকে যেখানে আমরা তরুণদের নতুন কিংবা ব্যবহৃত মোটর সাইকেল কেনার প্রবণতার অন্যতম কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করছি, সেখানে বিশ্বব্যাপী মোটর সাইকেল উৎপাদকরা রাইডারদের অবসর নেয়ার পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে তাদের লক্ষ্য ছিল বড় ও অধিক শক্তিশালী মোটর সাইকেল তৈরি করা, যার কারণে এই শিল্প অনেক বেশি জটিল ও অধিক ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছিল।

বর্তমানে বিশ্বের অগ্রবর্তী মোটর সাইকেল উৎপাদকরা, যেমন- হারলি ডেভিডসন এবং হোন্ডার মত কোম্পানিগুলো নতুন প্রজন্মের জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট ও তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যের মোটর সাইকেল ডিজাইন করছেন। তরুণ প্রজন্ম ও ছোট মোটর সাইকেলর প্রতি তাদের আগ্রহই আজ মোটর সাইকেল শিল্পের জন্য আকাঙ্ক্ষিত ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

এখন প্রায় সবগুলো মোটর সাইকেল কোম্পানিই প্রথম বারের মত রাইডার অর্থাৎ আজকের তরুণ তথা মিলেনিয়াল প্রজন্মের জন্য নতুন সব মোটর সাইকেলের সমারোহ ডিজাইন করার দিকে মনোনিবেশ করছেন।

কিন্তু… একটি মোটর সাইকেল চালানোতে একটি গাড়ি ড্রাইভ করার চেয়ে বেশি ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে!

এত কিছু সত্ত্বেও এদেশের তরুণ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য এই ঝুঁকির সম্ভাবনা ও রোমাঞ্চ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ১২৫ সিসি ক্ষমতাসম্পন্ন দামী কিংবা সাশ্রয়ী মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনগুলো একদিকে যেমন গুরুগম্ভীর ও ভারিক্কি মোটর সাইকেলর মত দেখায়, অন্যদিকে তাদের ইঞ্জিনগুলো এদেশের ট্রাফিক নিয়মের মধ্যে থেকে একই সাথে লোভনীয় ক্ষমতা ও পারফর্মেন্স দেয়ার যোগ্যতা রাখে।

উৎপাদনকারীদের বিশ্বাস যে স্বল্প জ্বালানি খরচ ও সাশ্রয়ী মূল্যের উপর ইঞ্জিনিয়ারদের লক্ষ্য থাকার কারণে বর্তমানের তরুণ মোটর সাইকেল রাইডাররা ছোট ইঞ্জিনের মোটর সাইকেল বেছে নেয়ার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এই প্রবণতা থেকেই বিগত বছরগুলোতে নতুন ও ব্যবহৃত উভয় ধরণের মোটর সাইকেলের বিক্রিই ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।