সুইডেনভিত্তিক সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিচার্স ইনস্টিটিউট সিপ্রি এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৭ বিশ্বে সামরিক ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। স্নায়ুযুদ্ধের পর দুই মেরুর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় হয়েছে গেল ২০১৭ সালে। ওই বছর বিশ্বে অস্ত্রের কেনাকাটা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৯ বিলিয়ন ডলারের। ১৯৯৯ থেকে ২০১১ এই ১২ বছরে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যয় কম ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০১৭ থেকে ব্যয় বাড়ানো শুরু করে দেশগুলো। সুইডেনভিত্তিক সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিচার্স ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) সিপ্রি এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রতিরক্ষাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০১৭ বিশ্বে সামরিক ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আর দেশভিত্তিক ব্যয়ে শীর্ষে যথারীতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই চীন। তৃতীয় স্থানের দেশটি কিছুটা চমক জাগানো। নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাওয়া সৌদি আরব আছে যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের পরে।
এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের ৩৫ শতাংশই করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ। গত বছর তাদের ব্যয় ছিল ৬১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তালিকায় দ্বিতীয় থেকে অষ্টম স্থান পর্যন্ত দেশগুলোর সম্মিলিত ব্যয়ের চেয়েও বেশি ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র একাই। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ বছরও উল্লেখযোগ্য হারে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধিতে সেরা চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন গত বছর ব্যয় করেছে ২২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। এসআইপিআরআইয়ের মতে, ২০০৮ সালে চীন বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ১৩ শতাংশ করত। কিন্তু ২০১৭ সালে দেশটি এ খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করেছে। সামরিক ব্যয়ের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা নামটি একটু চমক জাগানিয়াই। কারণ রাশিয়াকে হটিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশ সৌদি আরব। গত বছর দেশটি অস্ত্র কিনতে ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৯৪০ কোটি মার্কিন ডলার। রাশিয়ার সামরিক ব্যয় গত বছর কমিয়েছে। এ কমানোর হার ২০ শতাংশ। গত বছর পুতিনের রাশিয়া ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৬৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির ব্যয় সামরিক খাতে কমেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। দেশভিত্তিক ব্যয়ে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই চীন। সৌদি আরব তৃতীয় স্থানে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। দেশভিত্তিক ব্যয়ে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই চীন। সৌদি আরব তৃতীয় স্থানে।
রাশিয়ার পরের দেশগুলো হলো ভারত, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া। ভারত ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৬ হাজার ৩৯০ কোটি মার্কিন ডলার। ফ্রান্স এ খাতে ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৭৮০ কোটি মার্কিন ডলার। ব্রিটেন সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৭৭২ কোটি মার্কিন ডলার। জাপানের সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার। ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে জার্মানি আর সেরা দশের শেষ স্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যয় এ খাতে ৩ হাজার ৯৯২ কোটি মার্কিন ডলার। ১১ থেকে ১৫ নম্বরের দেশগুলো হলো ব্রাজিল, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও তুরস্ক। সামরিক খাতের ব্যয়ের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের শীর্ষ ১৫টি দেশ ২০১৬ সালেও শীর্ষ ১৫ তে ছিল।