বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি রাস্তায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিদেশি মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশেই তাদের কারখানা করছে। কেউ কেউ কারখানার কাজ প্রায় শেষ করেছে, কেউ কেউ মাঝ পর্যায়ে আছে। আগামী জুনের মধ্যে বাজারের শীর্ষে থাকা কয়েকটি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তাদের উৎপাদন শুরু করবে। এতে বাংলাদেশের গ্রাহকেরা আরও কম দামে মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন।
বর্তমানে দেশীয় ব্র্যান্ড রানার পুরোদমে দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদন শুরু করার প্রক্রিয়ায় আছে জাপানের হোন্ডা, ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজ, টিভিএসসহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড। হিরো ব্র্যান্ড এরই মধ্যে তাদের কারখানায় উৎপাদন শুরু করেছে। এসব কোম্পানি জানিয়েছে, বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে মোটরসাইকেলের ব্যবহার এখনো কম। ফলে এখানে বাজার সম্প্রসারণের এখনো বেশ সুযোগ রয়েছে।
অবশ্য দেশে মোটরসাইকেল কারখানা করতে সরকারের নীতিই বেশি কাজ করেছে। সরকার দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন নিশ্চিত করতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নানা ধরনের শুল্ক ছাড় দিচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদনকারী স্বীকৃতি দিতে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ দেশে উৎপাদন বাধ্যতামূলক করেছে। এতেই সবগুলো ব্র্যান্ড বাংলাদেশে কারখানা করতে উদ্যোগী হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, উৎপাদনকারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে মোটরসাইকেলের মূল কাঠামোসহ (চেসিস) পাঁচটি প্রধান যন্ত্রাংশের কমপক্ষে একটি দেশে উৎপাদন করতে হবে। এদিকে মোটরসাইকেল শিল্পের একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশে মোটরসাইকেল ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে তিন ধরনের করের ব্যবস্থা আছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ এনে দেশে মোটরসাইকেল তৈরি করে, তাদের সব মিলিয়ে ৩৮ শতাংশ কর দিতে হয়। দেশীয় ব্র্যান্ড রানার এই হারে তাদের কাঁচামাল আমদানি করে। যারা মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনসহ সব যন্ত্রাংশ আলাদা এনে দেশে সংযোজন করে, তাদের ৮৯ শতাংশ কর দিতে হয়। আর যারা সম্পূর্ণ তৈরি মোটরসাইকেল আমদানি করে, তাদের সব মিলিয়ে ১৫১ শতাংশ কর দিতে হয়। জাপানি ব্র্যান্ড ইয়ামাহা, সুজুকির মোটরসাইকেল এই পদ্ধতিতে দেশে আমদানি করা হয়। এ জন্য এসব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম বাজারে সবচেয়ে বেশি।
২০০৬ সাল থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় নিজস্ব কারখানায় মোটরসাইকেল তৈরি করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইলস। ৫০ সিসি থেকে ১৫০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বর্তমানে নেপালে রপ্তানি হচ্ছে রানারের মোটরসাইকেল। নেপালে গত এক বছরে সাত শতাধিক মোটরসাইকেল রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিবেশক উত্তরা মোটরস সাভারের জিরানী বাজারে নতুন কারখানা করছে, যা আগামী মার্চ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করবে। নতুন এই কারখানার নাম দেওয়া হয়েছে ট্রান্সএশিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। উত্তরা মোটরস জানিয়েছে, ওই কারখানায় প্রাথমিকভাবে বাজাজের পাঁচটি মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন করা হবে। এগুলো হলো বাজাজ প্লাটিনার দুটি, ডিসকভারের দুটি ও পালসারের একটি মডেল। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে এই কারখানায়। উত্তরা মোটরস আরও জানায়, নতুন কারখানায় ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এতে ৪৫০ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
উত্তরা মোটরসের কর্মকর্তারা জানান, মোটরসাইকেল তৈরিতে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে চেসিস, আনুষঙ্গিক বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ, চাকা-টিউব, চেইন, সিটকভার, ব্যাটারি ইত্যাদির মতো শতাধিক উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা ভেন্ডর ছাড়া এসব উপাদানের সব কয়টি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উৎপাদন করা সম্ভব নয়।
ভারতের আরেক ব্র্যান্ড হিরোর বাংলাদেশের পরিবেশক নিলয় মোটরসও ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কারখানা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) বিজয় কুমার মণ্ডল বলেন, যশোরে হিরো মোটরসাইকেলের কারখানা চালু হয়েছে। গত জুনে এই কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। নতুন কারখানায় উৎপাদিত মোটরসাইকেলই এখন বাজারে ছাড়ছে হিরো।
এ বছরের মধ্যেই দেশে মোটরসাইকেল কারখানা তৈরির কাজ শেষ করবে ভারতীয় ব্র্যান্ড টিভিএস। ময়মনিসংহের ভালুকায় হবে নতুন এই কারখানা। ইতিমধ্যে টঙ্গীর আউচপাড়ায় টিভিএস অটো বাংলাদেশ নামে যৌথ অংশীদারের ভিত্তিতে যন্ত্রাংশ সংযোজনের একটি কারখানাও রয়েছে তাদের।
জাপানের মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান হোন্ডা মোটর করপোরেশন মুন্সিগঞ্জে আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে বা অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন কারখানা করছে। ২৫ একর জমির ওপর এই কারখানা করতে জমির ইজারা বাবদ ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত নভেম্বরে এই কারখানার নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়।
মোটরসাইকেল কিনতে যারা আগ্রহী ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্টলে