প্রডাক্ট রিভিউ

ক্যামেরা ফোনের যুদ্ধ

By Baadshah

April 17, 2018

স্মার্টফোন দিন দিন উন্নত হচ্ছে আর বাড়ছে স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে স্মার্টফোনের ক্যামেরার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি। ক্যামেরায় কে কতো অভিনবত্ব দেখাতে পারে বা কে কাকে ফিচারের দিক থেকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। এর মধ্যে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশি।বিশেষ করে হুয়াওয়ে ও অপো তাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।সম্প্রতি হুয়াওয়ের নতুন স্মার্টফোন পি২০ ও অপো এফ৭ এ তারই প্রমাণ দেখা যায়।

গত ২৭ মার্চ পি সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন পি২০ ও পি২০ প্রো উন্মোচন করেছে স্মার্টফোন নির্মাতা চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। নতুন ডিভাইসগুলোতে আইফোন এক্স এর মতো পর্দার ওপরের কিছুটা অংশ কেটে সেখানে বসানো হয়েছে সেলফি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সেন্সর। পর্দার এই কাটা অংশকে বলা হয় ‘নচ’। আইফোন এক্স বা টেনের চেয়ে কিছুটা ছোট নচ রাখা হয়েছে হুয়াওয়ে পি২০তে। গ্রাহক চাইলে সেটিংস থেকে এই নচ অপশনটি বন্ধ করেও রাখতে পারবেন। আগের পি১০-এর মতোই পর্দার নিচে রাখা হয়েছে হোম বাটন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের পাশাপাশি নেভিগেশন বাটন হিসেবেও কাজ করবে এটি। পি২০ ও পি২০ প্রো-এর স্পেসিফিকশনে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ৫.৮ ইঞ্চি এলসিডি পর্দা রাখা হয়েছে পি২০-তে। আর ৬.১ ইঞ্চি ওলেড পর্দা রয়েছে পি২০ প্রো-তে। যথাক্রমে চার জিবি র‍্যামের সঙ্গে ৩৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি এবং ছয় জিবি র‍্যামের সঙ্গে ৪০০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি রাখা হয়েছে ডিভাইস দুটিতে। ১২৮ জিবি স্টোরেজের অ্যান্ড্রয়েড ওরিও চালিত উভয় ডিভাইসেই রয়েছে ২.৩ গিগাহার্টজ অক্টা-কোর কিরিন ৯৭০ প্রসেসর।

ডিভাইস দু’টির মূল পার্থক্য দেখা গেছে এর ক্যামেরায়। পেছনে তিনটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে পি২০ প্রোতে। এর মূল ক্যামেরাটি ৪০ মেগাপিক্সেল আরজিবি সেন্সর। এর সঙ্গে আট মেগাপিক্সেল টেলিফটো এবং ২০ মেগাপিক্সেল মোনোক্রোম লেন্স রয়েছে পি২০ প্রো-তে। অন্যদিকে পি২০-এ ব্যবহার করা হয়েছে মূল ১২ মেগাপিক্সেল আরজিবি লেন্স এবং ২০ মেগাপিক্সেল মোনোক্রোম লেন্স। ২৪ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা রাখা হয়েছে উভয় ডিভাইসে। নতুন ক্যামেরায় সুপার স্লো মোশান ভিডিও, স্বল্প আলোতে ছবি ধারণের পাশাপাশি আনা হয়েছে পোর্টরেইট শট এবং পোর্টরেইট সেলফি। ৩এক্স অপটিকাল জুম এবং ৫এক্স হাইব্রিড জুম-এর সঙ্গে আরও অনেক সুবিধা রয়েছে এই ক্যামেরায়। নতুন পি২০-এর বাজার মূল্য বলা হয়েছে ৮০০ মার্কিন ডলার। আর পি২০ প্রো-এর দাম হবে ১১১৫ ডলার।

পি২০ এবং পি২০ প্রো ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে পোর্শ ডিজাইন মেইট আরএস উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে। নতুন এই ডিভাইসের পর্দার ভেতরেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

হুয়াওয়েকে টেক্কা দিতে অপো ক্যামেরাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। অপো নিজেদের সেলফি এক্সপার্ট দাবি করে। তাদের এফ ৭ মডেলটির সামনে ক্যামেরায় তাই মেগাপিক্সেল আরও বেশি যোগ করা হয়েছে। অপো এফ৭ এ থাকছে হাই ডায়নামিক রেঞ্জ (এইচডিআর)-এর ২৫ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। এতে আছে আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স। তাদের দাবি, অনেক বেশি বাস্তব, ন্যাচারাল ও নিজের পছন্দ অনুযায়ী সেলফি পেতে অপো প্রথমবারের মতো এফ৫ হ্যান্ডসেটটিতে আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত করেছে। এখন অপো এফ৭ নিয়ে আসতে যাচ্ছে দ্বিতীয় প্রজন্মের আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স বিউটি প্রযুক্তি ২.০ এবং আরও উন্নত প্রযুক্তি। অপো এফ৭ এ থাকছে হাই ডায়নামিক রেঞ্জ (এইচডিআর)-এর ২৫ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা, আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স বিউটি প্রযুক্তি ২.০, কভার শট এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটি (এআর)পিক্সেল এর কন্ট্রাস্ট ও কালার রেঞ্জ এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যা দিবে অনেক বেশি পরিমার্জিত, উজ্জ্বল ও সুন্দর ছবি।ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বপ্রথম ২৫ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা নিয়ে আসার পাশাপাশি অপো এফ৭ হ্যান্ডসেটটিতে যুক্ত করেছে ইন-বিল্ট সেন্সর এইচডিআর ফিচার। অপো এফ৭ এ সেন্সর এইচডিআর টেকনোলজি একটি ডিফল্ট ফিচার, যা উন্নত সেলফি তোলার সুবিধা

ক্যামেরা ফোনের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই স্যামসাংও। সেলফির যুগে ক্যামেরায় নজর না দিলে কি আর হয়? তাই তারা বলছে, তাদের গ্যালাক্সি এস৯ এবং এস৯ প্লাস ক্যামেরা প্রেমীদের জন্য। । ডিভাইস দুটিতে ক্যামেরায় বিশেষ নজর দিয়েছে শীর্ষ ব্র্যান্ডটি । ফোনগুলোর পেছনে রয়েছে এফ ১ দশমিক ৫ এবং এফ ২ দশমিক ৪ অ্যাপাচার যুক্ত ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ও এলইডি ফ্ল্যাশ। অ্যাপারচার থেকে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন মতো যেকোনো একটি অ্যাপাচার নির্বাচন করে নিতে পারবেন। সেলফি ও ভিডিও চ্যাটের জন্য সামনে রয়েছে এফ ১ দশমিক ৭ যুক্ত ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। তবে গ্যালাক্সি এস৯ প্লাসের পেছনে মিলবে আরেকটি টেলিফটো ১২ মেগাপিক্সেলক্যামেরা, যা এফ ১ দশমিক ৭ অ্যাপাচারের।স্মার্টফোন দুটিতে ৪কে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। এছাড়া ৭২০পি রেজ্যুলেশন ও ৯৬০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করা সুবিধা মিলবে।

ক্যামেরার প্রতিযোগিতায় অ্যাপলও অবশ্য পিছিয়ে নেই।  আইফোন ৮-এর পেছনে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সম্পূর্ণ নতুন সেন্সর ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে ৮৩ শতাংশ বেশি আলো যাবে। গভীর পিক্সেল ও প্রশস্ত রেঞ্জ পাওয়া যাবে। আইফোন ৮ প্লাসে ১২ মেগাপিক্সেল ডুয়াল সেন্সর ও অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার (ওআইএস) সুবিধা যুক্ত করেছে।  তবে ক্যামেরায় আইফোন টেনে উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে যুক্ত হয়েছে ট্রু ডেপথ ক্যামেরা সিস্টেম। ফোনটিতে ডুয়াল ওআইএসযুক্ত ১২ মেগাপিক্সেল ডুয়াল ক্যামেরা আছে। আইফোন ৮ ও ৮ প্লাসের ফেসটাইম এইচডি ক্যামেরার সঙ্গে আইফোন টেনের ট্রু ডেপথ ক্যামেরা সিস্টেমের ফিচার অনেকটা একই হলেও সেলফি ধারণের জন্য ট্রু ডেপথ ক্যামেরার তুলনা হয় না। আইফোন টেনের ৭ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় ধারণকৃত সেলফির ব্যাকগ্রাউন্ড খুশিমতো ব্লার করে নেয়া যায়। পাশাপাশি পোর্ট্রেট লাইটিং ফিচার ব্যবহার করে সেলফির ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে দেয়া যায়।আইফোন টেনে আইফোন ৮ ও ৮ প্লাসের তুলনায় উন্নত রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। আইফোন টেনের রিয়ার ক্যামেরায় ১২ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স এবং জুম করার জন্য দ্বিতীয় একটি টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট বা অন্ধকার ঘরেও আইফোন টেনের রিয়ার ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তোলা যায়।