ঝোলা ব্যাগ নিয়ে মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতেই অস্বস্তিটা টের পাচ্ছিলেন শায়মা আরা। কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ইঙ্গিত দিলেও ধরতে পারছিলেন না তিনি। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলেন ঘটনাটা। এক জোড়া জুতো কিনে দাম পরিশোধ করতে গিয়েই টের পেলেন ঝোলার মধ্যে নেই টাকার ব্যাগ। কোন ফাঁকে চোর ঝোলা থেকে বের করে নিয়েছে, তা টেরই পাননি। প্রথমে হতভম্ব, পরে মেজাজটায় খারাপ হলো শায়মার। ব্যাগের ভেতর টাকা তেমন না থাকলেও ছিল বিভিন্ন ব্যাংক কার্ড (ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড)। সব গেছে। একটু পরেই দুশ্চিন্তা নাড়া দিল মনে। ভাবলেন, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যদি কেনাকাটা করে ফেলে চোর। এখন কী করবেন? নগদ টাকা বহনের বদলে প্লাস্টিক, অর্থাৎ ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হয়ে উঠেছে মানুষের অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। রাস্তাঘাটে চুরি বা ছিনতাইয়ে এটি হারালেও আপনার টাকা হারানোর উপায় কম। তবে অবশ্যই জানতে হবে, এটি হারালে প্রাথমিক করণীয়টা কী। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হারালে প্রথমেই যা করতে হবে, তা হলো যত দ্রুত সম্ভব কার্ডের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য সব ব্যাংকেরই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে—এমন ফোন নম্বর বা কাস্টমার সার্ভিসের নম্বর আছে। কার্ড হারানোর পর সেই নম্বরে ফোন করে কার্ডের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দিতে হবে। গ্রাহকের সমস্ত তথ্য নিয়ে নিশ্চিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কার্ডটি বন্ধ করে দেবে। এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কার্ড হারানোর পরপরই প্রথম কাজ হবে কার্ডের লেনদেন বন্ধ করা। লেনদেন বন্ধ না করলে যদি কার্ড ব্যবহার করে কেউ টাকা তুলে নেয়, তাহলে তাঁর দায় গ্রাহকের ওপরই পড়বে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নেবে না। এরপর কার্ড হারানোর পর নতুন কার্ড পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে হবে গ্রাহককে। অনলাইনে বা শাখায় নিজে গিয়ে রিকুইজিশন দিতে হবে। ওই শাখা প্রিন্সিপাল ব্যাংককে অভিহিত করে নতুন কার্ড ইস্যু করবে। অনেক সময় ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হ্যাক হয়। এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যাংকের জমা-খরচের ওপর নজর রাখা। ব্যাংক হিসাবে যদি দেখা যায়, আপনার অগোচরে অর্থ লেনদেন হয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে কার্ডের গোপন তথ্য বেহাত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ড যেখান থেকে নিয়েছেন, সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সাধারণত, প্রতারণামূলক লেনদেন ঠেকাতে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি এবং ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। এমন কিছু বুঝলে গ্রাহককে দ্রুত তা জানানো হয়। তবে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো খবর পাওয়ার অপেক্ষা না করেই নিজেই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো। কার্ড হ্যাক হয়েছে—এটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই কর্তৃপক্ষের সাহায্যে পিন নম্বর পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে গ্রাহককে কার্ড ও পাসওয়ার্ডের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়। প্রয়োজন ছাড়া এসব কার্ড সব সময় বহন না করাই ভালো। এ ছাড়া ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে পরামর্শ দেন। সেগুলো হলো: ১. যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন, তার কোনো জায়গায় কার্ডের নম্বর বা পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে রাখা যাবে না। ২. কাছে রাখা হাতব্যাগ বা পকেটে কার্ডের গোপন পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা যাবে না। ৩. অনেক সময় খামের ওপর, বিজনেস কার্ডে, এমনকি মার্কেট থেকে পাওয়া কেনাকাটার স্লিপে পাসওয়ার্ড লিখে রাখেন অনেকে। এভাবে না লিখে রাখাই ভালো। কারণ, এগুলো খুব সহজেই অন্যের নজরে পড়ে। ৪. বাড়িতে একটি নোটবুকে ব্যাংক হিসাবের নম্বর, ব্যাংক কার্ডগুলোর মেয়াদের তারিখ, জরুরি তথ্যসেবা কেন্দ্রের ফোন নম্বর, কোন শাখা থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, এসব তথ্য লিখে রাখার অভ্যাস করা ভালো।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো