কুয়াকাটার ক্ষুদে বিজ্ঞানী মাহবুবুর রহমান শাওন জ্বালানি সাশ্রয়ী চালক বিহীন সোলার সিস্টেম পরিবেশবান্ধব গাড়িসহ বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশ প্লানেটর কলেজের রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র শাওন প্রায় এক মাস ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গাড়িটি তৈরি করেন। স্থানীয়দের কাছে তার পরিচিতি ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ, সেন্সর লাইট, স্মার্ট সুইস, সি-প্লেন তৈরি করে এর আগে তাক লাগিয়েছেন তিনি। এবার বানালেন জ্বালানি ও চালকবিহীন গাড়ি। গাড়িটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হয়েছে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে। গাড়িটি তৈরি করতে প্লাস্টিক বোর্ড, লোহার অ্যাঙ্গেল, প্লাস্টিকের গ্লাস, থাই গ্লাস, পুরনো অটোরিকশার চাকা, সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ছাড়াও কিছু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। গাড়িটি চালক ও চালকবিহীন- দু’ভাবে চালানো যাবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রোগ্রাম সেট করে চালকবিহীন চলবে এ গাড়ি, যা তিনি করে দেখিয়েছেন। সাধারণ ব্যাটারি দিয়ে চালানোয় গতি তেমন একটা ওঠেনি। এখন এর সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি হলে গতিবেগ আরো বাড়বে। শাওনের এই আবিষ্কার বলছে, হয়তো মঙ্গলের মাটিতে মানুষ নামার আগেই পৃথিবীর মাটি থেকে মুছে যাবে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলে চলা গাড়ি, বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি আর ট্রাক! শহর থেকে গ্রামের সব প্রান্তের সড়কপথই ভরে যাবে ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকল (ইভি) বা বৈদ্যুতিক (সৌর) যানবাহনে!
নতুন প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিকভাবে এই গাড়িটি তৈরি হলে, পেট্রল, ডিজেলকে ‘বাই বাই’ জানাতে বাধ্য হবে যানবাহন। আর এই পূর্বাভাস দিয়েই মাহবুবুর রহমান শাওন বলছেন, গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলোকে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে হবে। বাজারে তেলের চাহিদা অনেকটাই কমে যাবে বলে তেল-নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো পড়বে গভীর সংকটে, যদি না তারা বিকল্প অর্থনীতির পথ খুঁজে পায়।
শাওন তার গাড়ি নিয়ে বলেন, বিশেষভাবে নির্মিত গাড়িটি পূর্ব নির্ধারিত পথে চালক ছাড়াই চলতে সক্ষম। কারণ এই গাড়িতে থাকছে বিশেষ এক ধরনের সেন্সর। উঁচু-নিচু রাস্তা দেখেই সেন্সরের মাধ্যমে গাড়িটি নিয়ন্ত্রিত হবে। এই গাড়িতে অন্তত চারজন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ছুটবে ঘণ্টা প্রতি ৪৫ কিলোমিটার বেগে। গাড়িটিতে রয়েছে ৪টি ব্যাটারি। উপরে থাকছে সৌর প্যানেল। সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা।
তিনি বলেন, গাড়িটি চলার জন্য কোনও জ্বালানির প্রয়োজন নেই, সৌর শক্তির ওপর নির্ভর করে চলবে। স্বংয়ক্রিয়ভাবে নিজে থেকে হর্ন দিতে পারবে। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অন্য যে কোনও যানবাহনকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারবে। যানবাহনকে আঘাত করবে না। গাড়িটি চুরি করাও অসম্ভব, কারণ গাড়ি নিজেই কল করে মালিককে জানাতে সক্ষম। গাড়ির মালিক গাড়িটি বন্ধ করে দিতে পারবেন, যাতে চোর গাড়ি না চালাতে পারে। গাড়ির দরজাও তালা দিয়ে দিতে পারবেন, যাতে চোর গাড়ির বাইরে বের না হতে পারে।
ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কার ছিল তার লক্ষ্য। শাওন সিকিউরিটি অ্যালার্ম, মোবাইলের ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ, সেন্সর লাইট, স্মার্ট সুইস, মোবাইল সুইস, মোবাইলের মাধ্যমে সুইস অন অফ সিস্টেম আবিষ্কার করেছিলেন। ২০১৫ সালে সি-প্লেন তৈরি করে পরীক্ষামূলক নদীতে চালিয়েছিলেন শাওন। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে শাওন তার আবিষ্কৃত গাড়ি ও ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব বলে দাবি তার।